কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে এক পরীক্ষার্থীর হারিয়ে যাওয়া খাতা উদ্ধার না হওয়ার কারণে অবশেষে কালীগঞ্জ থানায় জিডি করেছে। হারিয়ে যাওয়া খাতা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বারবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব আবেদা নাসরিন শুক্রবার জানান, শিক্ষার্থী হাফিজা ইয়াসমিন যে স্থানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল তার পাশে বসা পরীক্ষার্থী ঐশি নামে মেয়ের সাথে তার নাকি গোলযোগ ছিল। তাতে করে ধারনা করছে ঐ মেয়ে তার খাতা গায়েব করতে পারে। কেন্দ্র সচিব আর বলেন, তার কেন্দ্রে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ২১১ জন ছেলে মেয়ে। তন্মধ্যে ১ নম্বর কক্ষে ৪১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার ছিল কৃষি শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা। প্রথমে এমসিকিউ ২৫ মিনিটের পরীক্ষার ওয়েমার সিট ৪১ জনের জমা হয়। পরে লিখিত ৫০ নম্বরের পরীক্ষার খাতা সবাইকে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা ও অনুষ্ঠিত হয়। তন্মধ্যে পরীক্ষা শেষে ২জন কক্ষ পরীদর্শক টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের খাতা নিচ্ছিল। তারা রুমের মধ্যে থেকে একটি খাতা কম হলে সেভাবে ৪১ টির স্থলে ৪০ খাতা জমা দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু পরীক্ষা কমিটি খাতা জমা নিয়ে গননার সময়ে দেখতে পায় ৪০ টি খাতা। এর পরে একটি খাতা কম হলে রোল নম্বর মিলিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থী হাফিজা ইয়াসমিন খাতা নাই। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করে ও খাতার সন্ধান মিলাতে পারেনি। অবশেষে যশোর শিক্ষা বার্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নির্দেশ ক্রমে বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রের হল সুপার রমেশ চন্দ্র বিশ^াস কালীগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন।
শিক্ষার্থী হাফিজা ইয়াসমিন হাট বারবাজার স্কুলের মেধাবি শিক্ষার্থী। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, তার স্কুলের এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েটির স্থান ৫ম তম। লেখা পড়ায় খুব মেধাবি ও জেএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ ৫ পেয়েছিল। এবার ও ভাল ফলাফল পাবে বলে তারা আশাবাদী ছিলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবার সময়ে কক্ষের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা ছেলে মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করে তাদের কে আতঙ্ক করে।
পরীক্ষার্থীর খাতা ২ দিনে ও পাওয়া যায়নি। এদিকে ওই কক্ষে ২ শিক্ষক পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকলেও কিভাবে একটি খাতা হারিয়ে গেলো সে প্রশ্নে ওই দুই কক্ষ পরিদর্শককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষকেরা হলেন, বারোবাজার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন নাহার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিদ্যা নিকেতনের সহকারী শিক্ষক আকরাম হোসেন। এদিকে ওই কক্ষে সিসি ক্যামেরা সক্রিয় থাকলেও পরীক্ষার্থী হাফিজা ছিল ক্যামেরার ধারনের অনুপযোগী স্থানে। ফলে সিসি ক্যামেরাও কোন কাজে আসেনি। সিসি ক্যামেরায় তাদের ২ মেয়েকে দেখা যাচ্ছে না। এটাছিল পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির গাফলতি।
ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব হাট বারোবাজার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রদান শিক্ষক আবেদা নাসরিন জানান, ১ নং কক্ষের ২ কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষক গননা করে ৪১ টি খাতা নিয়ে রুমে গেছেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষে খাতা জমা দেয়ার সময় জমা দিচ্ছেন মোট ৪০ টি। এরপর তারা পড়েন চরম বিপাকে। একপর্যায়ে খাতার টপসিটে লেখা রোল মিলিয়ে দেখেন হাট বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজা ইয়াসমিনের খাতা নেই।
ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে হল সুপার উপজেলার সূবর্ণসারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বৃহস্পতিবার ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কৃষি শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা। ওই কেন্দ্রে ১নং কক্ষে মোট ৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। পরীক্ষার শেষ ঘন্টা বাজলে পরীক্ষার্থীরা খাতাও জমা দিয়ে সকলে বের হয়ে যায়। পরে কক্ষ থেকে খাতা নিয়ে এসে ওই দুই কক্ষ পরিদর্শক খাতা জমা দিতে গেলে খাতা গননা করে দেখা যায় একটি খাতা কম। পরে খাতার উপরে লেখা রোল মিলিয়ে দেখা যায় ২৩৬৮৭৮ রোল নম্বরধারীর খাতা নেই। অথচ হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর রয়েছে। অনেক খোঁজাখুজির পরও খাতা না পেয়ে ওই পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তারপরও খাতা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে পরীক্ষার কক্ষে দায়িত্ব অবহেলার কারণে ২ কক্ষ পরিদর্শককে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্র সচিব বলছেন, পরীক্ষার কক্ষে দায়িত্ব পালনকারি দু,শিক্ষককের দায়িত্ব অবহেলার কারণে মেয়েটির খাতা হারিয়েছে। দীর্ঘদিন তার স্কুলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন ঘটনা কখন ও ঘটেনি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সূবর্ণা রানী সাহা ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে জানান, পরীক্ষার কক্ষে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ইতোমধ্যে ওই কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী ২ শিক্ষককে সাময়িক ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাথে সাথে ওই পরীক্ষার্থীর ব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।