ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেই রাজনীতি শুরু। সে ১৯৮৬ সালের কথা। তিনি পরবর্তীতে উপজেলা যুবলীগের দুই দুই বার নির্বাচিত সভাপতি। পৌর কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য তিনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে এসে মামলা হামলা হয়েছে অগনিতবার। তবুও তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি বুকে লালন করে দীর্ঘ ৩৪ বছর পার করছেন, তিনি হচ্ছেন কোটচাঁদপুরের অতি পরিচিত মুখ মীর কাশেম আলী।
পোড় খাওয়া এ নেতা মীর কাসেম আলীর অভাবের সংসার হলেও রাজনীতি করতে এসে কি পেলেন ভাবেননি কখনো। বর্তমান রাজনীতির খেলায় তিনি অনেকটা হতাশাগ্রস্থ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী এফএনএস’র কাছে রাজনীতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের কথা বলতে যেয়ে অনেকটা ক্ষোভের পাশাপাশি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়তে দেখা গেছে এ নেতা মীর কাশেম আলীকে।
মীর কাসেম আলী বলেন, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোটচাঁদপুর উপজেলা শাখার যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে তার রাজনীতি শুরু। ১৯৮৭ সালে এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনের ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাথে থেকে মূখ্য ভুমিকা পালন কালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ডিটেন্সশন খাটেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আাসার পর ৮ থেকে ১০টি মিথ্যা মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। ওই সময় বিএনপি জামায়াত বিরোধী আন্দোলন থেকে তাকে দুরে রাখতে ৭বার গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সালে তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে সময় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার মামলা গুলি থেকে অব্যাহতি পান মীর কাসেম আলী। ১৯৯৭ সালে তিনি পৌর সভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে যুবলীগের উপজেলা শাখার সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আবারও মিথ্যা মামলায় একাধিকবার কারা বরণ করতে হয় তাকে। ২০০৫ সালে আবারও দ্বিতীয় বারের মত উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সালে বিএনপি জামায়াতের সাজানো মামলায় পুলিশ দফায় দফায় মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চালিয়ে ব্যার্থ হয়। পরে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করলেও স্থানীয় নারী পূরুষ ও আওয়মীলীগের নেতা কর্মিরা রাস্তায় নেমে পড়লে র্যাব বাহিনী মীর কাসেম আলীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী জোট সরকারের সাজানো নির্বাচন প্রতিহত করার দেশব্যাপি চলমান আন্দোলনে এ এলাকার অগ্রণী ভূমিকা রাখেন মীর কাসেম আলী।
২০০৯ সালে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয় করতে মাঠ পর্যায়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন এবং দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হন।
২০১৪ সালে জামায়াত বিএনপি’র তা-বের মুখেও ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রাণপন চেষ্টা চালান এবং দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হন।
২০১৬ সালে তিনি নিজেই উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ২৬হাজার ভোট পেলেও সামান্য ভোটে জামায়াতের কাছে পরাজিত হন।
মীর কাসেম আলী দুঃখ করে এফএনএস বলেন, আমার টানপোড়নের সংসার। তারপরও রাজনীতি করতে যেয়ে কখনোই সে দিকে খেয়াল করিনি। জীবনটা পার করে দিলাম নৌকার রাজনীতি করে। দলীয় প্রতিকে স্থানীয় নির্বাচন শুরু হওয়ার পর আমি দলীয় প্রতিক চেয়েও পাইনি। এর থেকে বড় কষ্ট আমার আর কি হতে পারে। যে কারণে আমি আর নির্বাচন করিনি।
আগামীতে দলীয় সভানেত্রী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় প্রতিকের মাধ্যমে যদি স্থানীয় নির্বাচনের সুযোগ দেন তবেই আমি নির্বাচন করবো, তাছাড়া করবো না।
আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতা কর্মীরা মীর কাসেম আলীকে একজন দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ দাবী করে অভিন্ন বক্তব্যে তারা বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী নেতা কর্মিদের কখনোই নিরাশ করেন না। দলের ত্যাগী নেতাকর্মিদের তিনি ভাল কিছু উপহার দেন সব সময়। মীর কাসেম আলীকেও তিনি বিমুখ করবেন না বলে ওই সকল নেতা-কর্মিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।