বই প্রকাশে শখ করে এসেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়ে। ২০০৪-এর সেই স্বপ্নসময়ে আমাকে বিভিন্নভাবে প্রেরণা যুগিয়েছেন দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান, কবি সমুদ্র গুপ্ত, কবি রবীন্দ্র গোপ প্রমুখ। ক্ষয়ে যাওয়া অন্ধকার সময়ের হাত ধরে এখন ছাত্রশিবির-জামায়াত-জঙ্গীচক্র বিভিন্ন নামে প্রকাশনায় এসেছে। ছলে-বলে কৌশলে লোভি-লম্পট-লুটেরা রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে রাজপথ ছেড়ে বইমেলার মত সৃজনশীলতারা রাস্তায় অগ্রসর হতে থাকে। সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স, গার্ডিয়ান, কানামাছি, সপ্তডিঙ্গা, সাতভাই চম্পার মত শত শত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে ছাত্রশিবির-জামায়াত জঙ্গীদের অর্থায়নে। পাশাপাশি সাহিত্যের ছোটকাগজের আড়ালে শতাধিক লিটলম্যাগও গড়ে উঠেছে। এইসব লিটিলম্যাগ সুসাহিত্যিক আমিনুর রহমান সুলতানের মত সৎ ব্যক্তির সততার সুযোগে নিজেদের স্টল সহ বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে নিচ্ছে; যেভাবে বারবার স্টল সহ বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছে ছাত্রশিবির-জামায়াত-জঙ্গীচক্রের প্রকাশকরা। আজ জঘণ্য-নির্মমভাবে বাংলাদেশে প্রকাশক দীপন হত্যার স্বীকার হন, দেশ ছাড়তে বাধ্য হন অন্য প্রকাশকরা। আর প্রতিবছরের মতো এবারও আসন্ন পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল না পেয়ে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়, করে সংবাদ সম্মেলন। যেভাবে বইমেলায় স্টল বরাদ্দের এ অসম বন্টনের তীব্র প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছিলো দেশের তারুণ্যনির্ভর প্রকাশনা সংস্থা ‘বেহুলা বাংলা, খড়িমাটি, মেঘ ও টাপুরটুপুর’সহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা। ২০১৮ সালের সেই সম্মেলনে বলা হয়েছিলো- প্রকাশনার সংখ্যা ও মানের দিক থেকে এগিয়ে থেকে এবং স্টল বরাদ্ধপ্রাপ্তির সব শর্ত পূরণ করার পরও স্টল বণ্টনে বাংলা একাডেমি অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার আশ্রয় নিয়েছে। বইমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি যে স্টল বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে এমন অনেক প্রকাশনা সংস্থা স্টল পেয়েছে; যাদের ১০টার বেশি প্রকাশনা নেই, এমন অনেক প্রকাশনা সংস্থা আছে যাদের নিজস্ব কোন প্রকাশনা নেই-শুধু পাইরেটেড বই নিয়ে প্রকাশনা চালায় তাদেরও দুই-তিন ইউনিটের স্টল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে! অথচ, এমন প্রকাশনা সংস্থা আছে যাদের একাডেমির শর্ত মাফিকের পর্যাপ্ত বইয়ের চেয়ে অনেক বেশি সৃজনশীল এবং মননশীল বই প্রকাশ করেছে তাদের এক ইউনিটের স্টল বরাদ্ধ দেয়া হইনি।
প্রকাশনা সংস্থা বেহুলা বাংলা’র স্বত্বাধিকারী চন্দন চৌধুরী, মেঘ প্রকাশনী’র কর্ণধার শাহীন লতিফ, টাপুরটুপুরের পরিচালক মহিউদ্দিন মাসুম, কবি গিরীশ গৈরিক, মাহমুব মিত্র, মাহফুজ রিপন-এর মত করে বলতে চাই- সংবাদ সম্মেলনে সবধরনের শর্ত পূরণ করার পরও চাহিদা মতো স্টল বরাদ্ধ না পাওয়া এবং একেবারে স্টল বরাদ্ধ না পাওয়া বঞ্চিত ও বাংলা একাডেমির স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ আমরা, বাংলা একাডেমি স্বেচ্ছাচারি আচরন করছে। অনেক প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশনা সারাবছর বই প্রকাশের পাশাপাশি শুধু মেলাকে কেন্দ্র করেই অর্ধশত বই প্রকাশ করে। অথচ স্টল দেয়া নিয়ে অনিয়ম করায় অন্তত স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- ‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’-এর কথা। ১৯৭৮ রহিতপূর্বক সংশোধনসহ উহা পুনঃপ্রণয়ন ও সংহত করিবার উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন- (১) এই আইন বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩ নামে অভিহিত হইবে। (২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে। সংজ্ঞা ২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে;- (১) ‘‘একাডেমি’’ অর্থ ধারা ৩ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমি; (২) ‘‘একাডেমির সভাপতি’’ অর্থ ধারা ৬ এর অধীন নিযুক্ত একাডেমির সভাপতি; (৩) ‘‘তহবিল’’ অর্থ একাডেমির তহবিল; (৪) ‘‘নির্ধারিত’’ অর্থ বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত; (৫) ‘‘নির্বাহী পরিষদ’’ অর্থ ধারা ২৩ এর অধীন গঠিত নির্বাহী পরিষদ; (৬) ‘‘নির্বাহী পরিষদের সভাপতি’’ অর্থ ধারা ২৩ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ক) এ উল্লিখিত নির্বাহী পরিষদের সভাপতি; (৭) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান; (৮) ‘‘ ফেলো’’ অর্থ ধারা ৭ এ উল্লিখিত ফেলো ও সাম্মানিক ফেলো; (৯) ‘‘বিভাগ’’ অর্থ ধারা ১২ এর অধীন গঠিত একাডেমির বিভাগ; (১০) ‘‘বিধি’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি; (১১) ‘‘মহাপরিচালক’’ অর্থ ধারা ২৬ এর অধীন নিযুক্ত একাডেমির মহাপরিচালক; (১২) ‘‘সাধারণ পরিষদ’’ অর্থ ধারা ১৯ এর অধীন গঠিত একাডেমির সাধারণ পরিষদ; (১৩) ‘‘সচিব’’ অর্থ ধারা ৩০ এর অধীন নিযুক্ত একাডেমির সচিব; (১৪) ‘‘সদস্য’’ অর্থ ধারা ৮ এ উল্লিখিত একাডেমির জীবন সদস্য ও সদস্য। একাডেমি প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি৩। (১) ৩। (১) এই আইন কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বাংলা একাডেমি নামে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হইবে। (২) একাডেমি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে ইহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহা স্বীয় নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উক্ত নামে ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে। একাডেমির প্রধান কার্যালয়৪। একাডেমির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে। একাডেমি গঠন৫। নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে একাডেমি গঠিত হইবে, যথা :- (ক) একাডেমির সভাপতি; (খ) নির্বাহী পরিষদের সভাপতি; (গ) ফেলো; এবং ঘ) সদস্য। একাডেমির সভাপতি নিয়োগ, মেয়াদ, পদত্যাগ, অপসারণ, ইত্যাদি৬। (১) রাষ্ট্রপতি একাডেমির সভাপতি নিয়োগ করিবেন। (২) প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পন্ডিত, সাহিত্যিক অথবা স্বাধীনতা পদক বা একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে একাডেমির সভাপতি নিযুক্ত হইবেন-তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশের নাগরিক নহেন এমন কোনো ব্যক্তিকে সভাপতি হিসাবে নিয়োগ করা যাইবে না। (৩) একাডেমির সভাপতি তাহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে ৩(তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন। (৪) একাডেমির সভাপতি যে কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন। (৫) এই আইন লঙ্ঘন বা গুরুতর অনিয়ম বা অসদাচরণের অভিযোগে সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য একাডেমির সভাপতির বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অনাস্থা জ্ঞাপন করিলে, নির্বাহী পরিষদ উহা রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করিবে এবং রাষ্ট্রপতি স্বীয় বিবেচনায় তাহাকে অপসারণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। (৬) সভাপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে সভাপতি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে শূন্য পদে নবনিযুক্ত সভাপতি কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা সভাপতি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত, নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে একজন ফেলো সভাপতির দায়িত্ব পালন করিবেন। ফেলো৭। (১) একাডেমি কর্তৃক সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তি, নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনক্রমে, একাডেমির ফেলো হইবেন। (২) ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সামাজিক বিজ্ঞান বা জ্ঞানের বিশেষ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অবদান রাখিয়াছেন এমন কোনো ব্যক্তিকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক সাম্মানিক ফেলো করা যাইবে : তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তিকে মরণোত্তর সাম্মানিক ফেলো করা যাইবে না। (৩) এক খ্রিষ্টীয় বৎসরে সর্বোচ্চ ৭(সাত) জন ব্যক্তিকে সাম্মানিক ফেলো করা যাইবে। (৪) কোনো ফেলোকে একাডেমির সভাপতি হিসাবে নিয়োগ করা হইলে, যতদিন পর্যন্ত তিনি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন, ততদিন পর্যন্ত ফেলো হিসাবে তাহার ভোটাধিকার স্থগিত থাকিবে। (৫) কোনো ফেলো মহাপরিচালকের উদ্দেশে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে ইস্তফা দিতে পারিবেন। জীবনসদস্য ও সদস্য৮। (১) ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাংবাদিকতা, সামাজিক বিজ্ঞান অথবা জ্ঞানের বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রহিয়াছে এবং যাহার বয়স কমপক্ষে ৩০(ত্রিশ) বৎসর পূর্ণ হইয়াছে, এইরূপ বাংলাদেশের কোনো নাগরিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে একাডেমির জীবন সদস্য ও সদস্য পদ লাভ করিতে বা অব্যাহতি গ্রহণ করিতে পারিবেন। (২) এক খ্রিষ্টীয় বৎসরে সর্বোচ্চ ২১(একুশ) জন ব্যক্তিকে সদস্য করা যাইবে : তবে শর্ত থাকে যে, প্রতি তিন খ্রিষ্টীয় বৎসরে সদস্যের সংখ্যা, উক্ত তিনবৎসর কাল শুরু হইবার পূর্বে মোট সদস্য সংখ্যা যাহা ছিল, উহা হইতে ৫(পাঁচ) শতাংশের অধিক বৃদ্ধি করা যাইবে না। (৩) কোনো সদস্যের সদস্যপদ কোনো কারণে বাতিল হইলে, সদস্যপদ হইতে অব্যাহতি গ্রহণ বা সদস্যপদ হইতে পদত্যাগ করিলে তিনি পুনর্বার সদস্য হইতে পারিবেন না। সদস্যপদ বাতিল ৯। একাডেমি নিম্নবর্ণিত কোনো কারণে কোনো সদস্যের সদস্যপদ বাতিল করিতে পারিবে, যথা:- (ক) নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন ৬(ছয়) মাস কারাদন্ডে দন্ডিত হইলে; (খ) একাডেমির স্বার্থ বা আদর্শের পরিপন্থি কোনো কর্মকান্ডের সহিত জড়িত থাকিলে; অথবা (গ) সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত যোগ্যতার সহিত অসঙ্গতি দেখা দিলে। একাডেমির কার্যাবলি ১০। একাডেমির কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথাঃ- (১) জাতীয় আশা আকাঙ্খার সহিত সঙ্গতি রাখিয়া বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, লালন ও প্রসার সাধন; (২) দ্রুত পরিবর্তনশীল ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া এবং একই সঙ্গে, বাংলা ভাষার গৌরবময় ঐতিহ্য সমুন্নত রাখিয়া জীবনের সর্বস্তরে এবং জ্ঞানচর্চার সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন, ব্যবহার ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সহায়তা প্রদান; (৩) বাংলা ভাষার প্রামাণ্য অভিধান, পরিভাষা ও ব্যাকরণ রচনা, রেফারেন্স গ্রন্থ, গ্রন্থপঞ্জি এবং বাংলা ভাষায় বিশ্বকোষ প্রণয়ন, প্রকাশন ও সহজলভ্যকরণ; (৪) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার ব্যাপকতর ও সমৃদ্ধতর করিবার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ; (৫) বাংলা শব্দের প্রমিত বানান ও উচ্চারণ নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; (৬) বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি সাধনকল্পে উন্নতমানের গবেষণা পরিচালনা এবং সৃষ্টিশীল ও গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশ এবং তদুদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’-এর মত অবিরত বিভিন্ন দায়িত্ব পালনিয় থাকলেও লোভে- মোহে পড়ে একের পর এক অন্যায় আর অপরাধের রাস্তায় অগ্রসর হচ্ছে বাংলা একাডেমি। নিয়ম মানা তো দূরের কথা, বাংলা ভাষা-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করা তো দূরের কথা, ক্রমশ সন্ধ্যা নামিয়ে আনা হচ্ছে বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে। যা আমাদের কাম্য নয় বলেই আমরা প্রতিবাদ করি, সংবাদ সম্মেলন করি, কলাম লিখি। যাতে করে বাংলা একাডেমি পিয়াস মজিদ-স্বকৃত নোমান-এর মত যখন যে সরকার, তখন সেই সরকারের দলীয় সাহিত্যিক টাইপের লোকদের হাত থেকে মুক্তি পায় আমাদের বাংলা একাডেমি। তা না হলে ‘বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্যকরূপে অনুধাবনের সুবিধার্থে বাংলা ভাষার সহিত সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য ভাষা চর্চা এবং উক্তরূপ ভাষা ও উক্তরূপ ভাষায় লিখিত সাহিত্য বিষয়ে গবেষণার ব্যবস্থা গ্রহণ’-এর যে কথা বলা আছে, তা থেকে যাবে ভয়ংকর অন্ধকারের দখলে। গত ৪৯ বছরে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, বাংলা একাডেমির অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারি এমনকি পুরস্কারও সেই সরকারের লোকদের দিকেই ধাবিত হয়েছে। যে কারণে রেজাউদ্দিন স্টালিন, জুবাইদা গুলশান আরার মত মানুষেরা বেগম জিয়া-তারেক রহমান-এর নেকনজরে পুরস্কৃত হয়েছেন আর আসলাম সানী-রহিম শাহর মত মানুষেরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরের বাইরে চামচা-চামুন্ডাদের হাত ধরে পুরস্কৃত হয়েছে। লেখার মান যাই থাকুক, সার্টিফিকেট নকল করার অপরাধে চাকুরি যাক আর থাকুক, তাতে কিছু যায় আসে না বাংল্ একাডেমির একশ্রেণির দালালদের। এদের কাজই হলো- স্টল, লিটলম্যাগ স্টল, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, পান্ডুলিপি সিলেক্ট সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছু টাকা কামিয়ে আখের গুছিয়ে নেয়া। আর একারণেই বাংলা একাডেমি আইনে - ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিবর্তন ও উহার ইতিহাস রচনা বিষয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাহিরে কোনো উল্লেখযোগ্য কর্ম সম্পাদিত হইয়া থাকিলে উহার সহিত পরিচয় ও প্রয়োজনে, সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ; বাংলা ভাষায় উচ্চতর পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করা ও জ্ঞানচর্চায় সহায়তা প্রদান এবং উক্ত উদ্দেশ্যে গবেষণা, অনুবাদ ও অন্যন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ-এর কথা থাকলেও তা নিয়ে কোন কাজ তারা করেন না। এমন কি ‘আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলা সাহিত্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বাংলা সাহিত্যকর্মের অনুবাদের ব্যবস্থা করা এবং অন্যান্য ভাষার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম বাংলায় অনুবাদের ব্যবস্থা করা’র কথা থাকলেও তা জিরোতে থেকে গেছে অর্ধশত বছর পর্যন্ত। তেমন কোন কাজ আদৌ তারা করেন কি না সন্দেহ আছে, যারা উপ পরিচালক-এর চেয়াররে বসে সাহিত্যিক-সাংবাদিকদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। হায়রে দেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ! স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও দেশবিরোধীচক্রের হাতে দেশটা হলো শেষ। এখান থেকে উত্তরণে চাই ‘যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে ঝাপিয়ে পরো’র মত তৈরি থাকা, সাহসপথে ডাকা-সাহসপথে থাকা। চলুন ভাষার মাসে সত্য বলি, সাহসে চলি এবং অটুট থাকি সত্যের রাস্তায় অবিরাম। তাতে স্টল পেলাম কি না, পান্ডুলিপি গ্রহণ করলো কি না, সদস্য বানালো কি না, বাংলা একাডেমি মূল্যায়ণ করলো কি না, তা নিয়ে না ভেবে বয়ে যাবো বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ-স্বাধীনতা-স্বাধীকারের জন্য নিরন্তর...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি