হালিশহরের গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় একটি প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এবার এই বিদ্যালয়েরই ৬৮জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার? তারা কি প্রমোশন পেয়ে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবেন না? কিংবা ২০২১সালের এসএসসি পরীক্ষায় তারা কি অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না? এমন ধরণের বহু প্রশ্ন অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর মনে দেখা দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ আত্মহত্যার হুমকিও দিচ্ছেন বাসায়। তবুও বিষয়টি গত দুই মাস যাবত সমাধান না হওয়ায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে- উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের সাথে অভিভাবকরা এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও তিনি তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। নিরুপায় হয়ে মো. আহসানুল আলম শাহরিয়ার নামক এক অভিভাবক চট্টগ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ৬৮জন শিক্ষার্থী বিগত ২০১৯সালের বার্ষিক পরীক্ষায় যথারীতি অংশ নেয়। এরপর বার্ষিক ফলাফলে তাঁরা অংকে খারাপ করার কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবাইকে ফেল ঘোষণা করেন। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষার্থীদের দশম শ্রেণিতে প্রমোশন দেওয়ার জন্য দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানান। কিন্তু দীর্ঘ দুইমাসেও তাঁরা দশম শ্রেণিতে ভর্তি কিংবা প্রমোশন পান নি। এরই মধ্যে অন্তত ১২জন শিক্ষার্থী উৎকোচের বিনিময়ে দশম শ্রেণিতে প্রমোশন নিয়েছেন বলে কয়েকজন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্যও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বিগত ১৭ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের প্রধান গেইটে একত্রিত হয়। এসময় তারা প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সাথে সাক্ষাত করার জন্য ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে স্কুলের গার্ড তাদেরকে ঢুকতে দেয়নি। তখন তারা ভিতরে ঢুকার জন্য বার বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা ধরণের শ্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে অভিভাবকরা হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে যান।
অভিযোগ উঠেছে- গত ২১ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কোনো অনুষ্ঠানই এবার পালন হয়নি বিদ্যালয়ে। এই নিয়ে বিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরো ফুঁসে উঠেছেন। অভিভাবকদের মতে-৬৮জন শিক্ষার্থী অনেকেই ১, ২ ও ৩ নম্বরের জন্য শুধু অংকে ফেল করেছেন। এরা যদি প্রমোশন না পায়; তাহলে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে স্কুলে। ওদিকে রোকসানা বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, আমরা শুনতে পাচ্ছি দশম শ্রেণিতে প্রমোশন না পেলে কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারেন। এ সমস্ত ছেলে-মেয়েরা বাসা থেকে রাস্তায় বের হচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ মানসিক এবং শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মনোয়ারা বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আচার-ব্যবহার ভাল নয়; তাঁর জন্য আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত আজ অন্ধকার। আমরা তাঁর কারণেই দিশেহারা হয়েছি। আশাকরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী এই বিষয়ে দ্রুত একটা ব্যবস্থা নিবেন। এদিকে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এরা বার্ষিক পরীক্ষায় খারাপ করেছেন। এখন এদেরকে কিভাবে প্রমোশন দিব? আসলে এটা আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে নিজেদের বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন।