বইমেলা বরাবরই ভালো লেগেছে, এ তো আমাদের প্রাণের মেলা। এই বইয়ের টানে, জ্ঞানের টানে, নতুন সম্ভাবনার রাজনীতির টানে ঘর ছেড়েছি ছাত্রজীবন থেকে। ক্রমশ সাহসের সাথে গড়ে তুলেছি ছাত্র-যুব-জনতার মেলবন্ধন। যে মেল বন্ধনের হাত ধরে গড়ে তুলেছি শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গণে নিজের সামাণ্যতম অবস্থান। সেই অবস্থানের সূত্রতায় আজ সারাদেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিকধারা নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি, বাষট্টিটি স্বরচিত বই, আমার প্রকাশনা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডবাংলা থেকে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সাড়ে ৪ শ। সাউন্ডবাংলা স্কুল খিলগাঁও ও সাভার প্রতিষ্ঠাতেও রয়েছে আমার সামাণ্য চেষ্টা। ধর্ম-সামাজ-সংস্কৃতি ও শিক্ষার উন্নয়নে শতাধিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা সহ অহরহ করে যাচ্ছি চেষ্টা। আর তাই বইমেলা আমার কাছে ভালোবাসা-ভালোলাগার রঙধনু।
আমার প্রিয় লেখক-কলামিস্ট ফকির ইলিয়াস ও কলামিস্ট মীর আব্দুল আলীমের মত এবছর ৪৬ জন নবীন-প্রবীন লেখকের বই বই প্রকাশ করেছি। আমার রচিত ‘দেশপ্রেমে মুজিব থেকে মোদি’ প্রকাশ করেছে বইপুস্তক প্রকাশনী, ‘সংবাদ-এর ক্লাস’ সাউন্ডবাংলা প্রকাশ করেছে, ‘দেয়ালে টাঙ্গানো রোদ’ আনন্দ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ‘নির্বাচিত কলাম ২০২০’ প্রকাশ করেছে ছন্দপ্রকাশ। এমন বই আর বইয়ের রাজত্ব নিয়ে এখনকার মেলা পরিসরে বড়, শৃঙ্খলায় সুসজ্জিত, নিরাপত্তায় বেষ্টিত তবুও অঘটনে আশঙ্কিত। তবে বৃহৎ বস্তুর সমস্যাও তো বৃহৎ হতে বাধ্য। মেলা সম্পর্কে আমার বিশেষভাবে বলার বিষয় বই, চলার বিষয় বই। হাজার হাজার বই আসে মেলায়, এর বেশির ভাগেরই প্রকাশনা অনুন্নত, ভাষা অশুদ্ধ, রচনা দুর্বল। মেলায় সংখ্যাধিক্যই চোখে পড়ে বেশি গুণাধিক্যের চেয়ে- এটাই যেটুকু এক অসংগতি চোখে পড়ার মতো। গুণে মানে উন্নত বই যারা প্রকাশ করেন তাদের দেখতে চাই বেশি বেশি। এ মেলা বইবাজারি ও লেখক-শিকারিদের নয়- এখানে দেখতে চাই শৌখিন প্রকাশকদের, লেখক-প্রকাশকদের। প্রয়োজনে তাদের স্থান দেয়া হোক বিশেষ ব্যবস্থায়।
দুর্নীতিগ্রস্থ বইমেলা থেকে মুক্তি দেয়া হোক বাংলা একাডেমিকে। মেলার পরিচালনভার তুলে দেয়া হোক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও প্রকাশক-বিক্রেতা সমিতির হাতে। মেলার সময়কাল ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত করা হোক। এছাড়া ‘পান্থকুঞ্জ’কে রূপান্তরিত করা হোক স্থায়ী বইমেলায়।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতি অনুসরণ করে আবেদন করা সত্ত্বেও অনেক প্রকাশনাকে স্টল দেয়া হয় না। আসলাম সানী, নিপু শাহাদাতদের মত স্টল কারবারিদের তদবিরে অপ্রকাশক-স্বাধীনতা বিরোধী-দুর্র্নীতিবাজ-জঙ্গীচক্র স্টল পেলেও তারুণ্যনির্ভর প্রকাশকদের দাবিয়ে রাখার জন্য ‘অসম নীতি’ অনুসরণ করেছে। একই সাথে কিছু অসাধু লেখক ও কয়েটি প্রকাশনীর মালিক পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন, নতুন প্রকাশনীকে নানা রকমের ট্যাগ লাগিয়ে বাংলা একাডেমীকে দিয়ে বঞ্চিত করার। অনেক বড় রকমের একটা অন্যায়।
আমার যাঁরা পাঠক আছেন, আমার বইগুলো কিংবা চমক, ঝংকার, মুনির ভাই সহ অন্যান্য লেখকের বই পড়ে যাঁরা উপকৃত হয়েছেন, তাঁরা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। সাউন্ডবাংলা বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা বিজ্ঞানচিন্তা কেবল নয়, ধর্ম ইতিহাস সহ সব বিষয়েই অগ্রগণ্য একটি প্রকাশনা সংস্থা। কেবল ব্যক্তিগত শত্রুতার বশে পাঠকদের কাছ থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দেয়ার এই ষড়যন্ত্রটা রুখে দিন। মনে রাখতে হবে- বই ও বইমেলা- দুটিই পরম আনন্দের। গর্বের। একটি জ্ঞান অর্জনের অন্যটি বিস্তারের। কিন্তু সব বই কি জ্ঞান অর্জনে সহায়ক? সব মেলাই কি আমাদের চিত্তে সুবাস বইয়ে দেয়? আমরা কি পড়ছি, কী-ই বা পড়া উচিত, বাংলাভাষার সমৃদ্ধি কতটুকু? আর সৃজনশীল বইয়ের শিল্পমান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
আমার মতে- বই বা গ্রন্থ এই কথা বললেই বিবেকে একটা নাড়া পড়ে যায়। বই হচ্ছে মানবসমাজের বিবেকের স্বচ্ছ দর্পণ। বই প্রকৃতির মতো জীবনের অভিজ্ঞতা ও পাঠকে লিপিবদ্ধ করে রাখে। আমি বই বলতেই মননশীল, সৃজনশীল এবং পঠনশীল বলে মনে করি। বইমেলায় বিচিত্র ধরনের বই আত্মপ্রকাশ করতে পারে। কিন্তু সে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনাটা মহত্তর এবং অর্থময় কিছু হওয়া উচিত। বিশ্ব প্রকৃতির রহস্যনিচয়ের দাগ উন্মোচন করে এবং জীবনের বিচিত্র হাসি-কান্না, দুঃখ- আনন্দের মধ্যে প্রবেশ করার সুযোগ ঘটিয়ে দেয়, সে বই আমার অধীত বিষয়। অর্থাৎ পাঠ্য বিষয়। আর সর্বোপরি যে গ্রষ্টা আমার প্রভু, জীবনের মালিক, সেই মালিকানাটা আমার জেনে নিতে জীবনের সত্তা ও স্বরূপকে উপলব্ধি করতে হয়। এই অনুভবের নিরীখে আমি বই পড়ে থাকি। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে ‘‘পাঠ করো তোমার প্রভুর নামে। এক্ষেত্রে বই পড়তে হবে। ক্রমাগত পড়তে হবে, কিন্তু নির্বাচিতভাবে। অর্থাৎ সিলেকটিভ হবে। এলোমেলোভাবে কোনোকিছু পড়ে সময় কাটানোর পক্ষপাতি নই। মানবজীবন একটি সিরিয়াস বিষয় এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়। অতএব আমি মনে করি জীবনকে নিরন্তর মনুষ্যত্বময় করে গড়ে তোলাই হচ্ছে মানবধর্ম। এটা আমাদের ধর্মেরও শিক্ষা। আমাদের বাংলাভাষা রাষ্ট্রভাষা হয়ে যাওয়ার পরও, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও আমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এর সম্মানজনক সুমার্জিত প্রচার-প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটা একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। আমি তাই মনে করি। আমাদের ভাষার আন্দোলন এখনও শেষ হয় নাই। এটা অসমাপ্য রয়ে গেছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, শহীদের আত্মদান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় আত্মোৎসর্গ অনেকটাই নিষ্ফল হয়ে যেতে পারে যদি আমরা জাতীয়ভাবে সকলক্ষেত্রে মননশীল, সৃজনশীল এবং নৈতিক হয়ে উঠতে না পারি। এ প্রসঙ্গে-- আমাদের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক বিভাজনের ক্রান্তীয় সংকট থেকে আমাদের উত্তরণ না ঘটে।
বাংলা একাডেমীর সাথে এর একটা ঐতিহ্যিক সম্পর্কও আছে। তবে আরেকটু গোছালো, আরেকটু পরিপাটি হলে ভালো হতো। বিশেষ করে আরো জায়গা নিয়ে, বড় পরিসরে। বাদ পড়া প্রকাশকদের অসন্তোষ থেকে রক্ষা পেতো মেলা। এছাড়া ভিড়-ভাট্টার এরকম ধকলও সইতে হতো না। যে বই মানুষের কথা বলে, জীবনের কথা বলে, সমাজের কথা বলে, সত্যের সন্ধান দেয়, এরকম বই পড়তে পছন্দ করি। অবশ্য আমার পাঠের মধ্যে ইতিহাস, ভ্রমণ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী বইও থাকে। দেশ ও জাতির প্রতি মানুষকে কমিটেড করে, দেশ সেবায় নিবেদিত করে- এ ধরনের বই পাঠকের পড়া উচিত বলে আমি মনে করি। যে বই পড়লে মানুষের অন্তরের রহস্য জানা যায়, জীবনের রহস্য জানা যায়, যা ব্যক্তিত্বকে আরো বাড়িয়ে তোলে, বিশ্বাসকে মজবুত করে এমন ধরনের বইয়ের প্রতিই আমি ইঙ্গিত দিতে চাই। আমাদের গণমাধ্যম ও সমাজজীবনে বাংলাভাষার বর্তমান অবস্থা খুব ভালো না। একরকম দুরবস্থাই বলতে হবে। নাটকে, অভিনয়ে, উপস্থাপনে, উচ্চারণের বাচনভঙ্গিতে ত্রুটি লক্ষণীয়। আমাদের নাটক নিয়ে আমরা সবসময় গর্ববোধ করি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সহজ হতে গিয়ে লঘুরসের ভেতর ঢুকে যাই। এছাড়া জোর করে বিদেশী শব্দ ঢুকানোর চেষ্টা করি। আমরা সতর্ক হলে এখনি তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে বাঙালিরা। আমাদের ভাইদের জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি ভাষার স্বাধীনতা। আমাদের দেশের সৃজনশীল বইয়ের শিল্পমান খারাপ না। আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছতে হয়তো সময় লাগবে। অবশ্য মেটারিয়ালের সংকট আছে আমাদের দেশে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে আরো উন্নতি সম্ভব। প্রকাশকদের চেষ্টা আছে ত্রুটিমুক্ত করার। কিন্তু তাড়াহুড়া একটি বড় অন্তরায়।
তবে বাংলাদেশের রাজনীতির পাষন্ডরা প্রকাশনায় এসে স্বাধীনতাকে কলুষিত করেছে। একুশে বইমেলা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। একুশের বইমেলা আমাদের জাতীয় অহঙ্কারও বটে। আবার আমাদের জাতীয় মননের প্রতীক বাংলা একাডেমীর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে একুশে বইমেলা। একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমীতেই হবে এটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো বাংলাদেশের জনসংখ্যাই শুধু বাড়ছে না বাড়ছে দেশের অর্থনৈতিক ও শিল্প-সংস্কৃতি কেন্দ্রিক কর্মকান্ড। ফলে আমাদের পাঠক বাড়ছে। বাড়ছে প্রকাশনা সংস্থাও। এমন বাস্তবতায় বাংলা একাডেমীর গ্রন্থমেলা যতো সংখ্যক প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করতে চায় ততো সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে স্থান দেয়ার সমর্থ নেই। বিষয়টি আসলে ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। এমন অবস্থায় আমি মনে করি বাংলা একাডেমীর হাত থেকে দুর্নীতিগ্রস্থতার সুযোগ সরিয়ে সরিয়ে সরাসরি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধায়নে- গ্রন্থমেলার ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালনের পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রকাশনা সংস্থাগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আরো বড় ধরনের কোনো গ্রন্থমেলার আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারে। আর সেটা হবে বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থার বাস্তবতাকে স্বীকার করে এবং প্রয়োজনকে সামনে রেখে।
বাংলাদেশের রাজপথে থাকতে থাকতে তৈরি হয়েছি সাহিত্য-সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। কবিতার বই, ভ্রমণ কাহিনী, তাত্ত্বিক গ্রন্থ এবং মানুষের জীবনসংগ্রামকে ধারণ করে এমন উপন্যাস পড়তে পছন্দ করি। কোন বইতে আনন্দ লুকায়িত আছে তা পরখ করে দেখার মতো অনুসন্ধানের দৃষ্টি পাঠকের থাকার প্রয়োজন। আমাদের গণমাধ্যম ও সমাজজীবনে বর্তমানে বাংলাভাষার ব্যাপক চর্চা হচ্ছে। তবে বাংলাভাষায় লৈখিকরূপে বানান নিয়ে কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করার মতো। এ প্রসঙ্গে প্রচলিত বানান, প্রমিত বানান ও রীতির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আমি মনে করি বানানরীতি একরকম হলে তা ভাষার ব্যাপক চর্চার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। এক্ষেত্রে স্কুল পাঠ্যসূচিতে যদি প্রমিত বানানরীতির চর্চা বাধ্যতামূলক থাকে তাহলে ভবিষ্যতে একক বানানরীতির অনুসরণ সহজ হবে। আর ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে উচ্চারণের বিষয়টিও খুব প্রাসঙ্গিক। আগে ছিলো আঞ্চলিক উচ্চারণের আপদ আর এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইংলিশ ও হিন্দি চয়নের কৃত্রিম সংশ্লেষ। এ বিষয়টি শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের জন্য স্বাস্থ্যপ্রদ নয়। আর ব্যাকরণ চর্চার ক্ষেত্রে অমনোযোগিতাও বাংলাভাষা চর্চার ক্ষেত্রে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। এসব বিষয়ে আমরা আরো সচেতন হলে গণমাধ্যম ও সমাজজীবনে বাংলাভাষার চর্চা আরো অর্থবহ সার্থক হয়ে উঠবে। সৃজনশীল গ্রন্থের শিল্পমান খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। এ কথা বলা যাবে না যে সৃজনশীল গ্রন্থের প্রকাশনার শিল্পমান সবক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে রক্ষিত হচ্ছে। তবে সৃজনশীল অনেক গ্রন্থের শিল্পমান লক্ষ্য করে আনন্দিত হতে হয়। এটা আমাদের প্রকাশনা জগতের জন্য গর্বের বিষয়। বইমেলা নিয়ে আমরা সারা বছর উদগ্রীব থাকি। এবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কেবল প্রকাশকদের মেলা হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে কিছু অপ্রয়োজনীয় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকাশকের নামে কিছু অপ্রকাশকও স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। নেটবই, পাইরেট বই চিরতরে বন্ধ করতে হবে। এতে আমাদের পাঠকরা প্রতারিত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে আমাদের প্রকাশনা শিল্প যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। এ জন্য উন্নত মানের বই প্রকাশে প্রকাশকদের আরও এগিয়ে আসতে হবে।
বইমেলা এলে সবাই প্রকাশকদের ওপর দোষ চাপায়। কিন্তু স্টল বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। আমাদের প্রকাশকরা বইমেলাকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করেন। মেলাকে পাঠকবান্ধক করতে হলে মানসম্পন্ন প্রকাশকদের উপযুক্ত বই প্রদর্শনের জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। আমি পাইরেট ও নেটবই বিক্রির ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছি। বর্তমানে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখক-প্রকাশক বাড়ছে। অনেক সময় তাড়াহুড়া করে বই প্রকাশের ফলে বইয়ে প্রচুর ভুল থাকে। সম্পাদনা ঠিকমতো হয় না। আমার প্রকাশনা সংস্থা থেকে বিষয়-বৈচিত্র বজায় রেখে সারা বছর বই ছাপি। যতদূর জেনেছি- এবার বইমেলায় প্রবন্ধ, রচনাবলী, কথাসাহিত্য ও কবিতার বইয়ের সংখ্যাই বেশি। বইমেলার এবারের আয়োজন গতবারের চেয়ে ভালো। আমি প্রকাশক হিসেবে বলবো- দেশের সেরা লেখকদের পাশাপাশি নবীনদের বই প্রকাশ করি। সারা দেশে আমাদের বই পাওয়া যায়। আমি চাই, বাংলা একাডেমীর বইমেলা যেন কেবল প্রকাশকদের মেলা হয়। পাঠকরা যেন বইমেলায় এসে তাদের পছন্দমতো বইটি কিনতে পারেন সে সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে প্রকাশক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যারা অবস্থান নির্মাণ করে দিচ্ছে তাদের বিচার করতে হবে। ভয়াবহ বিচারের মধ্যদিয়ে একাডেমিকে কলঙ্কমুক্ত করার আহবান জানাচ্ছি, একই সাথে বাংলা একাডেমিকে মেলা করার এই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সরাসরি দায়িত্ব দেয়ার আহবান জানাচ্ছি...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি