কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাটস্থ বাঁকখালী নদী থেকে খালাসের সময় এক কোটি ইয়াবা লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তিন জনকে দুই লাখ পিচ ইয়াবাসহ আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে তাদেরকে আটক করা হয়। পুলিশের মতে, সেখানে ইয়াবা ছিল প্রায় ১০ লাখ পিচ। তবে তারা জানান, ইয়াবার পরিমান যা হউক না কেন অপরাধীসহ ইয়াবা পুলিশের আওতায় না আসা পর্যন্ত অভিযান চলছে এবং চলবে। সূত্রমতে, পুলিশের অভিযানে আটককৃতরা হল, সদর উপজেলার খরুশকুল ইউনিয়নের শীর্ষ সন্ত্রাসি ও ছিনতাইকারি ডজন মামলার আসামি ফিরোজ ও তার দুই সহযোগি সহোদর মোস্তাক এবং রমজান। ৮ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা লুটের পর প্রথমে মোস্তাকের নৌকা করে ইয়াবার একটি অংশ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লুটকৃত ইয়াবার ওই অংশটি তার ভাই রমজানের বাসায় রাখা হয়। পুলিশ ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে অভিযান চালিয়ে খুরুশকুল কুলিয়াপাড়াস্থ এক খামার বাড়ি থেকে সন্ত্রাসি ফিরোজকে আটকের পর তার স্বীকারোক্তি মতে রমজানের বাসা থেকে ২ লাখ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করে। এদিকে ইয়াবা লুটের সাথে জড়িত তিন জনকে ২ লাখ ইয়াবাসহ পুলিশ আটক করলেও ইয়াবা লুটে নেতৃত্ব দেয়া জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারি মিজান গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্রগ্রাম থেকে বিমানযোগে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে ইয়াবা লুটের প্রধান হোতা মিজান ভারতে অবস্থান করছেন। বিষয়টিও ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ। জানা গেছে, ২৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা উদ্ধারের অভিযানের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন ও ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়-য়া। অভিযান পরিচালনাকারি কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন জানান, ইয়াবা লুটকারিদের ধরতে পুলিশ ইতঃপূর্বে ঘটনাস্থলসহ সম্ভ্যাব স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। এই ইয়াবার চালানের সাথে জড়িত এবং লুটকারিদের সনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি সফল অভিযানও হয়েছে। অভিযান শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি। সূত্রমতে, গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাটস্থ আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটিতে মাছ ধরা ট্রলারে করে ইয়াবার একটি বিশাল চালান খালাস হয়। ইয়াবার চালানটি জেটি দিয়ে কূলে তোলার সময় স্থানীয় টেকপাড়া এলাকার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসি ও ছিনতাইকারি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তার বাহিনী ইয়াবা চালানটি লুট করে। মিজানের নেতৃত্বে তার বাহিনীতে ওই সময় ছিল তার আপন ছোট ভাই কায়সার, যে জেটি দিয়ে ইয়াবা খালাস হয় ওই জেটির মালিকের ছেলে মুজিব, ইফতেখার খান বাবু, সাইফুল, জুনায়েত, নাছির মিয়া, ভুলু মিস্ত্রি, বাদশা, তানবিরসহ আরো কয়েকজন। ইয়াবা লুটের সময় জেটিঘাটে ইয়াবার মালিক বোরহান, তার ভাই শহীদ ও তাদের পার্টনার সাইফুল এবং আবুল কালামের সাথে লুটকারি মিজান বাহিনীর সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইয়াবার মালিকরা। বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার এই বিশাল চালানটি আসে কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনালস্থ লারপাড়া এলাকার টাইল্স ব্যবসায়ি বোরহান, শহীদ, সাইফুল ও আবুল কালাম ওরফে বড়দার কাছে। এরমধ্যে শহিদ ও বোরহান হলেন আপন সহোদর। তারা লারপাড়া এলাকার মোক্তার মেম্বারের ছেলে। প্রথমে ইয়াবার চালানটি টেকনাফে বুঝে নেয় ইয়াহিয়া নামে এক ব্যক্তি। পরে সেখান থেকে সাগরপথে এসে বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাট এলাকার আবু ছৈয়দ কোম্পানীর জেটিঘাটে খালাস হয়। মিয়ানমার থেকে যে ট্রলারে করে ইয়াবার চালানটি আসে সেখানে নেতৃত্ব দেয় একজন রাখাইন যুবক। তার সাথে ছিল বেশ কয়েকজন মাঝিমাল্লা। এদিকে একটি সূত্র জানায়, ইয়াবা লুটের ঘটনায় ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পর্যটন এলাকার কলাতলী থেকে ইয়াবা লুটকারি ইফতেখার খান বাবু, সাইফুল ইসলামসহ তিন জনকে র্যাবের একটি দল আটক করেছে বলে জানা গেছে। তবে কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ এর ক্যাম্প ইনর্চাজ মেজর মেহেদী হাসান বলেন, আটকের বিষয়টি সত্য নয়। তবে অভিযান চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ইয়াবা লুটকারি ও ব্যবসায়িরা আইনের আওতায় আসবে। কারণ তারা র্যাবের নিবিড় পর্যাবেক্ষনে রয়েছে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন, ইয়াবা লুটের ঘটনার পর থেকে পুলিশ এই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। যেকারনে ইতঃপূর্বে ইয়াবার বিশাল একটি অংশ উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ইয়াবার চালানের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।