বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে সরকারি ধান ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে এমন দূর্নীটির অভিযোগ পাওয়া গেছে খাদ্যগুদামের(ওসি এলএসডি) ফরিদা ইয়াসমিন’র দিকে। জানাগেছে, খাদ্যগুদামের (ওসি এলএসডি) ফরিদা ইয়াসমীন ১২ সেপ্টন্বর ২০১৯ সালে ভোলা সদর থেকে পদায়ন পেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার খাদ্যগুদামে (ওসি এলএসডি) হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি তার স্বামী কবির উদ্দিনকে দিয়ে খাদ্যগুদামে গড়ে তুলেন দালালের একটি সিন্ডিকেট। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ওই সিন্ডিকেটের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় সাধারন কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি মূল্যে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নিদের্শনা থাকার পরও উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও গুদাম কর্মকর্তারা ধান ব্যবসায়ী, দালাল-ফরিড়ায়াদের সঙ্গে যোগসাজসে ক্রয় করছে ধান। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ফরিদার ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি কৃষকের কাছ থেকে নামমাত্র পরিমানে ধান ক্রয় করে, অধিকাংশ ধান কৃষকের ভর্তুকি কার্ডের নাম দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রয় করেন। খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায় এক হাজার ৪০টাকা মন দরে ১৪ শত ২৩ টন ধান ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারী থেকে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হয়ে ২৮ ফের্রুয়ারী পর্যন্ত ক্রয় করার কথা। খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী গত ১লা জানুয়ারী থেকে ২০জানুয়ারী পর্যন্ত প্রকৃত কৃষকদের দফায় দফায় হয়রানি করে যৎসামান্য ধান ক্রয় করলেও ২০ জানুয়ারী থেকে ১৫ ফের্রুয়ারী মধ্যে তড়িঘড়ি করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে রাতের আঁধারে দূরদূরন্ত থেকে ৮শত ৩১টন নি¤œমানের ধান ক্রয় করে গুদামজাত করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসন খাদ্য গুদামে প্রভাবশালী চক্রের পাশ কাটিয়ে সরাসরি যাতে তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষক ধান বিক্রি করতে পারেন সে বিষয়ে তৎপর থাকলের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবিনা পারভীন, খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন এর ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট সরব থাকায় সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়। দুই ধাপে কৃষি অফিস ১৪ শত ১৬টি কার্ডধারী কৃষকের একটি তালিকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রুবিনা পারভীনের কাছে প্রদান করেন কৃষি অফিস। খাদ্যগুদামের ওই সিন্ডিকেট কার্ডধারী কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামান্য অর্থের বিনিময় কৃষকের কাছ থেকে র্কাড সংগ্রহ করেছে বলে কৃষকরা জানান। কার্ড প্রদানকারী সহজসরল কৃষকদের ওই সিন্ডিকেটেরা শান্তনা স্বরুপ কৃষককে দিচ্ছে মাত্র ৩শ থেকে ৫শ টাকা। সরেজমিনে গিয়ে ভর্তুকি কৃষি কার্ডধারী জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের নাছিমা বেগম, ইউনুস হাওলাদার আকবর খান, মহিবুল ইসলাম, আক্তার হোসেনসহ ২৩জন কৃষকের র্কাড দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামের ঝর্ণা বেগম, রিনা বেগম, কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিনভূতেরদিয়া গ্রামের মোঃ খোকন, মোঃ সাইফুল ইসলাম সাথে কথা বলেন জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন থেকে কৃষি অফিস থেকে কৃষি কার্ড লটারীর মাধ্যমে বাছাই করেছে ওই সব কার্ডধারী কৃষকদের ফসলি জমিতে ৩ টন ধান কখনও উৎপাদন হয়নি। আবার যাদের নামে কৃষি কার্ড হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যবসায়ী, খাদ্যগুদামের সরদার। স্থানীয় কৃষকরা আরো জানান ,ধান বিক্রির জন্য নমুনা নিয়ে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মোসাঃ ফরিদা বেগমের কাছে মান ও আর্দ্রতা পরীক্ষা করাতে গেলে মান ভালো নয় এমন অজুহাতে প্রকৃত কৃষকদের বারবার ফিরিয়ে দিয়ে হয়রানি করতে থাকেন। অথচ সেই ধানই কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উৎকোচের বিনিময়ে গুদামে সরবরাহ করেছে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার স্বামী কবির উদ্দিন ও স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল-ফড়িয়ারা। ফলে কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে না পেরে ন্যায়্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলার কৃষকদের অভিযোগ,গুদামে ধান সংগ্রহে মান যাচাইয়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার বিনিময়ে নি¤œমানের ধান দিয়ে গুদাম ভর্তি করা হচ্ছে। দালাল ফরিয়াদের মাধ্যমে ধান যাচাই-বাছাই না করে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যাকডেটে গুদামজাত করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের পক্ষ থেকে ধান নিয়ে আসা হলে ওই ধান নিয়ে নানারকম জটিলতা ও টালবাহানা করে কৃষকদের তা ফের রোদে শুকিয়ে আসার কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সরবরাহকৃত তালিকা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুদামে কোনো সিন্ডিকেট নেই এবং তার স্বামী কোনো ধান এ গুদামে সরবরহ করেনি সে একজন ঠিকাদার। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোসাঃ রুবিনা পারভীন বলেন কে কৃষক, কে ব্যবসায়ী এটি আমার জানার বিষয় নয়। কৃষি তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকদের ধান ফেরত দিয়ে রাতের আঁধারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন বন্ধের দিন এবং রাতেও ধান কেনার বিধান রয়েছে। ইউএনও নুসরাত জাহান খান জানান,খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।