নড়াইলের লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকারকে (৪০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল শিকদারকে (৪৫) প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত বদর খন্দকারের স্ত্রী নাজমিন বেগম বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার আসামি মতিউর রহমান মুন্না (৩২) বুধবার সন্ধ্যায় নড়াইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দীতে আ.লীগ নেতা বদর খন্দকার হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস।
এর আগে মুন্নাকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চরঘোনাপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লোহাগড়া থানা এলাকা থেকে চরকালনার রুহুল ওরফে ফরিদকে (৫০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রুহুল এজাহারনামীয় আসামি না হলেও হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন-আ’লীগ নেতা নজরুল শিকদারের বড় ভাই ইবাদত শিকদার (৫০), ভাইপো জাকারিয়া শিকদার ওরফে গফফার (২৭), ভাগ্নে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আজাদ সুজন (৩৫), চাচাতো ভাই এনায়েত শিকদার (৩৫), সুজন মোল্যা (২৮), তিন ভাই ফরিদ শেখ (৫০), নজরুল শেখ (৪৫) ও পিকুল শেখ (৩৮), ফরিদ শেখের ছেলে রোমান শেখ (২৬), আকবর খন্দকার (৪৫), লাবু (৩৫), দুই ভাই মতিউর রহমান মুন্না মোল্যা (৩২) ও তারু মোল্যা (৩৬), সুরুজ মোল্যা (৪০) এবং বাদশা শেখ (৪৫)। আসামিদের বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার চরবগজুড়ি, পোদ্দারপাড়া, চরকালনা ও ছাগলছিড়া এলাকায়।
মামলা বিবরণে জানা যায়, সামাজিক বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকারকে কুপিয়ে হত্যা করে আসামিরা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে লোহাগড়া-নড়াইল সড়কের টি-চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে বদরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে সন্ত্রাসীরা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ৯টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
বদর লোহাগড়া ইউনিয়নের চরবগজুড়ি গ্রামের ময়ের আলীর ছেলে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ধারালো অস্ত্রের কোপে বদর খন্দকারের বাম হাতের তিনটি আঙুল এবং ডান হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া দুই পায়ের হাটুর নিচ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। ঘটনার দিন বদর খন্দকার চরকালনা এলাকায় নিজের ইটভাটা থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়িতে ফেরার পথে ঘটনাস্থলে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এ সময় বদরের কাছে ইট বিক্রির সাড়ে ৪ লাখ টাকা থাকলেও আসামি আকবর খন্দকার ওই টাকা নিয়ে গেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদী নিহত বদর খন্দকারের স্ত্রী নাজমিন বেগম আরো বলেন, আমার স্বামীকে এর আগে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টা করেছিলেন আসামিদের কয়েকজন। এ ব্যাপারে আমার স্বামী লোহাগড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিলটন কুমার দেবদাস বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।