কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ তা’লীমে হিযবুল্লাহ’র আমীর অধ্যক্ষ আলহাজ¦ মাওলানা মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বর্তমান সময়ে আমরা পরিবারের প্রতি খুব নজর দিতে হবে। স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের প্রতি উভয়েই হক আদায় করতে হবে। কেউ কারো প্রতি জুলুম করতে পারবে না। মা-বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। যে মা-বাবা সন্তানের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের প্রতি চক্ষুশীতল দৃষ্টিতে তাকাতে হবে। মায়ার বন্ধনে মাতা-পিতাকে আগলিয়ে রাখতে হবে। বৃদ্ধাশ্রম নয়, ছেলের ঘরই হবে মা-বাবার ঠিকানা। সন্তানদের প্রতি সমান ও সুবিচার করতে হবে। অসুস্থ্যদের প্রতি খেয়ালসহ সামাজিক মূল্যবোধে নিজেকে আলোকিত ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আপনাদের ভূমিকা থাকতে হবে। জুলুম থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। কারণ কেয়ামতের দিন যেন এই বিষয় গুলোর জন্য আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে বিচারের মুখোমুখী হতে না হয়। জুলুম থেকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
মাওলানা মাহমুদুর রহমান শনিবার বাদ ফজর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন ঐতিহ্যবাহী সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত ২ দিন ব্যাপী ৮৭’তম বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিলে আখেরি মোনাজাতের পূর্বে বয়ান করতে গিয়ে এসব কথা বলেন। মাহফিলে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক শাহ্ আলম। কোরআন ও হাদিস থেকে বয়ান করেন মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী, বাংলাদেশ তা’লীমে হিযবুল্লাহ’র নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা বেলাল হোসেন আফসারী, দুর্বাটি এম.ইউ কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন আজিজী, মাদরাসার মুফাসসির মাওলানা রফিকুল ইসলাম যশোরী, মাওলানা নেছা আহাম্মদ চাঁদপুরী, সৈয়দপুর কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুজিবুর রহমান, দরবারের বিশিষ্ট খলিফা মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক, মুফতী শাহ্আলম।
সোনাকান্দা দারুল হুদা বহুমুখী কামিল মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস শায়খুল হাদিস মাওলানা মোতালিব হোসাইন ছালেহীর নান্দনিক উপস্থাপনায় মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ফুরফুরা দরবার শরীফের পীর মাওলানা মতিউল্লাহ সিদ্দিকী, সৈয়দপুর কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও নূর মোহাম্মদ দরবার শরীফের পীর মাওলানা আবু তাহের ছালেহ উদ্দিন, মুক্তারামপুর দরবার শরীফের পীর মাওলানা মেছবাহ উদ্দিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ হারুণ আল রশীদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ তমাল, জেলা পরিষদ সদস্য ভিপি জাকির হোসেন ও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
শনিবার সকালে আখেরী মোনাজাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নামে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের আশায় সারা বাংলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মাহফিলে রেকর্ড সংখ্যক লোকের সমাগম হয়। নিজের ও আহল আওলাদের গুনাহ খাতা মাফির জন্য এবং দেশ-জাতির ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ কামনা করে আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়ায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ^ মুসলিম মিল্লাতের শান্তি কামনায় মোনাজাতে কান্নার রোল পড়ে যায়। তখন আমিন আমিন ধ্বনিতে মাহফলি ও আশ-পাশের এলাকার পরিবেশ ছিল লক্ষণীয়। এ সময় দরবারের আশিকীন, যাকেরীন, মুহিব্বীন ও খলিফাবৃন্দসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম, দেশ-বরেণ্য পীর-মাশায়েখগণসহ সামাজিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীর লোকজন মোনাজাতে শরিক হন।মাওলানা মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, ওলী আউলিয়াদের দরবার হচ্ছে আত্মশুদ্ধির অন্যতম জায়গা। তাদের দরবারে আসা-যাওয়া করলে ইমান ও আমল-আখলাক মজবুত হয়। হেদায়েতের পথে চলার দিক-নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়। কালের প্রবাহে নবী প্রেমিকদের কাছে এসব দরবারের গুরুত্ব ও মাহাত্ম দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে প্রিয় নবী (সা:) এর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া একশ্রেণির লোকেরা ওলী আউলিয়াদের নিয়ে কটাক্ষ্য করে থাকে। এ ধরণের লোকেরা কখনোই নিজেদেরকে নবী প্রেমিক বলে দাবি করতে পারেন না। আমাদেরকে মজবুত ইমান ও আমলের উপর অবিচল থাকতে হবে। ইসলাম বিরোধী চক্রকে প্রতিহত করতে বাংলার জমিনে সকলকে গভীর সচেতন হতে হবে। প্রতিটি দরবারের ভক্ত, মুরিদ, মু’তাকেদ, আশেক্বিন, মুহিব্বিনসহ সুন্নিয়াতের আদর্শে উজ্জীবিত সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে এ ব্যাপারে লৌহ-কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই ঐক্যের মধ্যদিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ইসলামি সমাজ কায়েম করা আমাদের জন্য সহজ হবে বলে বিজ্ঞজন মনে করেন। যেখানে আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলেই অনাবিল শান্তির মধ্যে বসবাস করতে পারব।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে পুজিবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনে সারা বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা এক নাজুক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। এ অবস্থায় আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব, ইমান ও আমল-আখলাককে ঠিক রাখতে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলেই থাকতে হবে। মুসলমানদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সমধিক দক্ষতা অর্জন এ ক্ষেত্রে বড়ই প্রয়োজন। তিনি বলেন, কুমিল্লার মাটিতে অসংখ্য বুজুর্গানেদ্বীন শায়িত আছেন। তাদের মিশন ও ভিশন সম্পর্কে আমাদেরকে ব্যাপক জানতে হবে, বুঝতে হবে। তাঁদের পদাংক অনুসরণ করে ইসলামের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে হবে। এদেশে ইসলাম এসেছে আউলিয়া কেরাম, পীর মাশায়েখ ও আলেম ওলামাদের কঠোর পরিশ্রমের বদৌলতে। যারা এ সত্য অস্বীকার করে, তারা এ দেশের মুসলিম উম্মাহর সাথে বেঈমানী করে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন আমল কমে যাচ্ছে। যদি আমরা সকলে বেশী বেশী করে নেক আমল করি তাহলে আমাদের ব্যক্তি জীবন সুন্দর হবে এবং আমরা মানব কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারব। গীবত ও পরনিন্দা একটি মারাত্বক সামাজিক ব্যাধি। এ ব্যাধি সমাজে মহামারীর মতো রূপ ধারন করছে। ফলে সাম্য, মৈত্রি, সম্প্রীতি কমে যাচ্ছে। সমাজের শান্তির জন্য যা নিতান্তই দরকার। তাই শান্তির স্বার্থে গীবতের মতো জঘন্য গুনাহে কবীরা চর্চা করা থেকে আমাদের সকলকে বিরত থাকতে হবে।