সড়ক দুর্ঘটনায় মেধাবী শিক্ষার্থী তিথি মৃত্যুর ঘটনার শোক না কাটতেই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সর্বত্রই নেমে এসেছে আরেক শোকের ছায়া। শিক্ষার্থীদের আনন্দ ভ্রমণ পরিণত হলো বিষাদে। ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ঝরলো ৪ শিক্ষার্থীর প্রাণ। শনিবার (২৯) রাত ৯ টার দিকে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি সড়কে কালা মার্কেট এলাকায় এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে আহত হন আরো ১০ জন শিক্ষার্থী।
নিহতরা হলেন-ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার হাজী আমির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী শালিহর গ্রামের আবুল হকের ছেলে আশরাফুল আলম (১৫), ৯ম শ্রেণির ছাত্র রমজান আলী খানের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (১৪), এতিমখানার শিশু ছাত্র মৃত আবদুল মজিদের ছেলে ইয়াছিন মিয়া (১১) ও শালীহর এম এ মোতালেব বেগ দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী তারাকান্দা উপজেলা বিসকা গ্রামের ছমির উদ্দিনের ছেলে মাহাবুল ইসলাম (১৬)। রোববার (১ মার্চ) বেলা ১১ টায় হাজী আমির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিহত চার শিক্ষার্থীর জানাযার নামাজ একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শত শত লোক অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় উল্লিখিত চার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবরে ঘটনার দিন রাত থেকেই গৌরীপুরে সর্বত্রই শোকেরা ছায়া বিরাজ করতে শুরু করে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চারজনের মরদেহ রাত ২ টার দিকে স্থানীয় হাজী আমির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে রাখা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। নিহদের পরিবারের লোকজনের আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় বার বার মূর্চা যান নিহতের পরিবারের সদস্যদের অনেকেই। তাঁদের সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্থানীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শোকে স্তব্দ হয়ে যায় গৌরীপুর। কেউ এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করে জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনার পর তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের হতাহতদের উদ্ধারের জন্য বলেন এবং ঘটনাস্থলে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ করেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজ খবর নেন তিনি।
গৌরীপুর উপজেলার ২নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে শোক প্রকাশ করে জানান, এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চার শিক্ষার্থীর জানাযা নামাজ শেষে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুর্গাপুর থানায় রওনা হয়েছেন তিনি। সেখানে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানান তিনি।
গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ সুলতান জনি জানান, এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না গৌরীপুরবাসী। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি জনগনকেও সচেতন হতে হবে। যেন আর কোন প্রাণ অকালে ঝরে না যায়।
তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষে উল্লিখিত দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী শনিবার সকালে দু’টি পিকআপ ভ্যানে চড়ে দুর্গাপুর আনন্দ ভ্রমণে যায়। ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
তিনি আরো জানান, আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার সময় সকালে গৌরীপুরে আমার সাথে দেখা হয় শিক্ষার্থীদের। এ সময় মোবাইলে সেলফি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করে তারা। পরে এদিন রাত ১০ টার দিকে তিনি দুর্ঘটনার খবর শুনতে পান। দুর্ঘটনার খবর শুনে স্থানীয় এমপির নির্দেশে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় হতাহতাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাজী আমির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক খায়রুল ইসলাম খান ও এম এ মোতালেব বেগ দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক কাজী ফিরোজ আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করে জানান, শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ না জানিয়ে ও কোন অনুমতি না নিয়েই আনন্দ ভ্রমণে গিয়েছিল। যদি আনন্দ ভ্রমণের বিষয়টি জানতেন তাহলে পিকআপ ভ্যানে করে শিক্ষার্থীদের আনন্দ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাঁধা দিতেন বলে জানান ওই দুই শিক্ষক। তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত দাখিল পরীক্ষার্থী শালিহর গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৫) আশংকাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গৌরীপুর থানার ওসি মোঃ বোরহান উদ্দিন এ সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।