লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলাব্যাপী সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলছে ৪ শতাধিক অবৈধ ট্রলি। এতে প্রাণহানিসহ প্রতিনিহত ঘটছে দূর্ঘটনা,নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রামীন কাঁচা পাঁকা সড়ক । জলাঞ্জলিতে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। ৬ বছর থেকে অবৈধ ট্রলি বন্ধে উপজেলাব্যাপী মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন প্রতিবাদের পরও অদৃশ্য কারনে বন্ধ করা যায়নি অবৈধ ট্রলি চলাচল। রোববার ভ্রাম্যমান আদালত ৬টি ট্রলির বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানার মাধ্যমে অভিযানে জনমনে স্বস্তি এসেছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান।
সুত্রে জানায়, কৃষি কাজে (ক্ষেত চাষ) ব্যবহৃত ট্রাক্টর দিয়ে বানানো হয় ট্রলি। এসব ট্রলি দিয়ে ইট, বালি, রড সিমেন্ট ও গাছসহ বিভিন্ন ভারী পন্য আনা-নেয়া করায় নষ্ট হচ্ছে সড়ক। বছরের পর বছর এ ট্রলিগুলো রাস্তায় অবৈধভাবে চলাচল করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে অহরহ ঘটে দুর্ঘটনা। এ উপজেলায় গত দুই বছরে অন্তত ১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে, ছোট-বড় শতাধীক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আহতদের বেশিরভাগই পঙ্গত্ব বরণ করেছেন। অবৈধ ট্রলি রাস্তায় চলাচল করা এগুলো সর্ম্পন বেআইনী। অথচ বছরের পর বছর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উপজেলায় ৪ শতাধিক ট্রলি অবৈধভাবে চলছে। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনসহ কোনো কাগজপত্র নেই। অতিষ্ঠ হয়ে ৬ বছর থেকে প্রতিবাদ করে আসছে ১টি পৌর সভা ও ১০টি ইউনিয়নে বসবাস কারী সাড়ে চার লক্ষ জনগন। এ যন্ত্রদানবগুলোর বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনগত ৬ বছর থেকে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি।দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করে একাধিক সাধারণ মানুষ আক্ষেপের সহিত জানান, এলাকার ইটভাটা মালিক ও প্রভাবশালী মহল এর সাথে জড়িত। দানব ট্রাক্টর-ট্রলি জমি থেকে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বহন করা হচ্ছে। এতে করে যেমন টপ সয়েল নেওয়ায় নিচু হচ্ছে জমি, অপরদিকে ভেঙ্গে ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে গ্রাম-শহর যোগাযোগের কার্পেটিং রাস্তা ও মেঠোপথ।ট্রলি ব্যবসায়ী কামাল হেসেন ও জাহাঙ্গির আলম জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে প্রতি ট্রলি থেকে বছরে চার হাজার চারশত টাকা করে উত্তোলন করা হয়। সে জন্য লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে প্রশাসনেরও তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না।
দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে ট্রলির ব্যবসা করছেন রামগঞ্জ ট্রলি মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মনির হোসেন। তিনি বলেন, বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও প্রশাসনসহ সকলের আন্তরিকতায় ট্রলিগুলি মানুষের সুবিধার্থে চলাচল করছে। ট্রলিতে কম দামে লোকজন মালামাল আনা-নেয়া করতে পারে। অবৈধ হলেও তা মানুষের উপকারে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কভাবে চালাতে চালকদের কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
ভাদুর ইউনিয়ন পরিসদের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভুইয়া, করপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল হক মজিবসহ কয়েকজন চেয়ারম্যান জানান, দীর্ঘদিন পরে হলেও প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান শুরু করায় জনমনে স্বস্তি এসেছে। রাস্তাঘাট ভাল রেখে সরকারের উন্নয়ন দ্রশ্যমান রাখতে হলে অবৈধ ট্রলি সম্পর্নরুপে বন্ধ করা জরুরি।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, রামগঞ্জের আপামর জনসাধারণের বিরক্তির কারণে, অবৈধ ট্রলি বন্ধে যেটি কৃষি জমির টপসয়েল কেটে আবার সেই অবৈধ ট্রলিতেই পরিবহন করে। কন্টেন্ট একটি, অপরাধ অনেকগুলোই। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ট্রলির বিরুদ্ধেই ৬টি মামলা এবং রুট পারমিট না থাকায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুসারে জরিমানা করা হয়েছে। জনমনে স্বস্তি এসেছে, জনস্বার্থে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত থাকবে।