কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের কুঠিবাড়ী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তির ঘোষণার ছয় মাস যেতে না যেতেই মাদ্রাসার সুপার আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির এই অভিযোগ ওঠে।
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লগ্নের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষককে বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকের ওই পদে ব্যাকডেটে অন্য শিক্ষক নিয়োগের পায়তারা, প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নের কথা বলে শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ারসহ সুপারের বিরুদ্ধে নানামুখী অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর এক অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এনটি লেভেল শিক্ষকদের নিয়োগ এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ দিয়ে থাকলেও সুপার নিজ ক্ষমতা দেখিয়ে ব্যাকডেটে বিএসসি ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগের পায়াতারা করছে যা সম্পুর্ণ অনিয়ম।
এক সূত্র জানায়, মাদ্রাসা সুপার আমিনুল ইসলাম তার মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে বর্তমান সিলেট জেলার ফেষ্ণুগঞ্জের দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮/১০ বছর ধরে কর্মরত এক শিক্ষককে ওই মাদ্রাসায় কৃষি শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন।
ওই শিক্ষক এখনও দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠাদান করাচ্ছেন। যার ইনডেক্স নং- ১০৭৬৮৯৬। এছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শরিয়তপুরে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এক শিক্ষককে বিএসসি শিক্ষক পদে নিয়োগের পায়তারা চালাচ্ছেন সুপার।
১৯৯৯ ইং সালে কুঠিবাড়ী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে দ্বার করাতে শিক্ষকরা কাঁধে বাশঁ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেন। এরপর শিক্ষার্থী জোগাড় করা ও নির্বিঘ্নে পাঠদান করার মতো নিরলস প্রচেষ্টা করেন শিক্ষকরা।
অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যে বুলবুল আহম্মেদ ছিলেন অন্যতম। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখলেও এখন মাদ্রাসা সুপার আমিনুল ইসলামের রোষানলে পড়েছেন তিনি। বুলবুল আহম্মেদকে গত ৯/৩/২০০৫ সালে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুপার আমিনুল ইসলাম নিয়োগ প্রদান করেন। যার স্মারক নং-০৫/০৫ (নিয়োগ)।
নিয়োগের আলোকে শিক্ষক বুলবুল আহম্মেদ ১০/৩/২০০৫ ইং ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন এবং গুরুত্ব সহকারে পাঠদান করে আসেন। ৩১/৫/২০১৫ ইং সালে সুপারের অফিস আদেশে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি বিষয়ক ৩ দিনের প্রশিক্ষণে কুড়িগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।
এর মধ্যে ২০১৯ ইং সালে ২৩ অক্টোবর কুঠিবাড়ী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তির তালিকায় আসলে সুপার আমিনুল ইসলাম বুলবুল আহম্মেদকে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দেয়ার হীন পরিকল্পনা শুরু করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সুপার আমিনুল ইসলাম বুলবুল আহম্মেদের শরীরচর্চা শিক্ষক পদে সিঙ্গাপুর ফেরত আজিমুদ্দিন নামের এক টাকা ওয়ালা ব্যক্তির কাছে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বুলবুল আহম্মেদের পদে শিক্ষক নিয়োগ দানের জন্য ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালান।
ইতোমধ্যে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে বুলবুল আহম্মেদকে বাদ দিয়ে সুপার আজিমুদ্দিনের কাগজ পত্রাদি ব্যাকডেটে মাদ্রাসা অধিদপ্তর ও ব্যানবেজ সেক্টরে প্রেরণ করেন। যা সম্পূর্ণ অনিয়ম।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বুলবুল আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমি গরিব পরিবারের সন্তান। নিজেকে শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করারর জন্য লেখাপড়া শেষ করি। কুঠিবাড়ী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীণ সময় ওই মাদ্রাসার সুপার আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার আলোকে তার প্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চা শিক্ষক পদে আমাকে নিয়োগের আশ্বাস দেন।
এতে সুপার আমার কাছ থেকে মাদ্রাসার উন্নয়ন কল্পে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে আমি উপায়ন্তর না পেয়ে সুপারের কথা মতো গরীব বাবা ও আমার শ্বশুরের জমি বন্ধক রেখে সুপার আমিনুল ইসলামকে মোটা অংকের টাকা দেই।
কিন্তু সুপার এখন নিজ ক্ষমতা দেখিয়ে ব্যাকডেটে বিএসসি ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগের পায়াতারা করছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এনটি লেভেল শিক্ষকদের নিয়োগ এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়ে থাকলেও সুপার আমিনুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি নিয়মকে উপেক্ষা করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি গোচর জরুরী।
অভিযুক্ত সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই পদে একাধিক শিক্ষক নিয়োগের নজির আছে। আবার শিক্ষক বাতিল হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমার প্রতিষ্ঠানে এটা হওয়া স্বাভাবিক। তবে শরীরচর্চা পদে যে শিক্ষক নিয়েছি তা ব্যাকডেটে নয়। ২০০৩ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত। মোট অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে নেয়া হয়নি।
ভুুক্তভোগী শরীরচর্চা শিক্ষক বুলবুল আহম্মেদ প্রসঙ্গে সুপার বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে বুলবুল আহম্মেদ নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি এখনও চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেননি। বুলবুল আহম্মেদ আবারও এই প্রতিষ্ঠানে আসলে আমি তাকে গ্রহণ করবো। তিনি বুলবুল আহম্মেদের সঙ্গে বসে এর একটি সমাধান করবেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম ে বলেন, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মবর্হিভূতভাবে ব্যাকডেটে নিয়োগ দিলে তা হবে একদম অন্যায় কাজ। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলেই তদন্ত পূর্বক ওই প্রতিষ্ঠানের সুপারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।