নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের মধ্য বাজার পশ্চিম গলিতে মঙ্গলবার রাত পোনে বারটার দিকে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে ১৪ টি দোকান ঘর ভষ্মিভুত হয়। এবং দোকান গুলিতে থাকা ১৬ কোটিরও বেশি টাকার মালামাল আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বলে জানাগেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান আগুনে ভষ্মিভূত ক্ষতির পরিমাণ বিশ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, রাত পোনে ১২টার দিকে আকষ্মিকভাবে এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয় এবং মূহুর্তের মধ্যে তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিকভাবে আশেপাশের বাড়ী ও বিভিন্ন জলাধার থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছার আগেই কাপড়ের দোকান, গার্মেন্টস, ভ্যারাইটি ষ্টোর সহ ১৪ টি দোকান আগুনে পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ দোকানগুলির মধ্যে বিপ্লব কুমার সাহার অপুর্ব ফ্যাশন, স্বপন কুমার সাহার আপন মনি স্টোর, অনুজ সাহার সৌখিন গার্মেন্টস, ধ্রুব সাহার আদর্শ বস্ত্রালয়, আজিজুল ইসলামের লাকি গার্মেন্টস, সুকুমার সাহার সাহা বস্ত্রালয়, আক্তার হোসেন এর আপন মনি স্টোর, বাহার মিয়ার মালের গোডাউন ও শহিদুল ইসলামের হাসান বন্ত্রালয় সহ সবক’টি দোকানে আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। তবে শত চেষ্টা করেও দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। অনেক ব্যবসায়ী তাদের পরিবারের লোকজনকে সর্বস্ব হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে। অনেকেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন ফায়ার সার্ভিসকে আগুন লাগার সাথে সাথে খবর দেয়া হলেও ২০-২৫ মিনিট পর
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উপস্থিত হলেও তাদের যান্ত্রিক ত্রটির কারণে আগুন নেবানোর কাজ শুরু করতে না পারায় নেত্রকোনা সদন থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার পর আগুন নেবানোর কাজ শুরু হয়,এতকরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেশী হয়েছে। আগুনের লেলিহান শিখা পৌর শহরে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের দোকানের মালামাল সড়িয়ে নিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট উপস্থিত হয়ে ভোর ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তাৎক্ষণিকভাবে এ অগ্নিকান্ডের সঠিক কোন কারণ এ জানা না গেলেও অনেকেই ধারণা করছেন বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট অথবা মশার কয়েল,ধুপবাতি থেকে এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হতে পারে। খবর পেয়ে গভীর রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম, দুর্গাপুর-কলমাকান্দা সার্কেল এএসপি মাহমুদা শারমিন নেলী, দুর্গাপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সহকারি পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী। তার এ উপস্থিতি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার,পরিজন,উৎসুক জনতা থেকে,সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শক্তি যুগিয়েছে। সকাল ৯টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সমাজসেবা অফিসাররকে নিয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের নাম ও ক্ষতির পরিমাণ এর একটি তালিকা তৈরী করেণ। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার ঘোষণা দেন ইউএনও ফারজানা খানম। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,পৌর মেয়র,উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুল হান্নান ক্ষতিগ্রস্থদের সার্বিক সহায়তা ও তাদের পাশে আছেন বলে ঘোষণা দেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে বিকেল ২টার দিকে স্থানীয় সাংসদের পক্ষ থেকে চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার প্রতিনিধিকে জানান, অনাকাঙ্খিত অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের ক্ষতিসাধনে আমি সর্বাত্বক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি ব্যবসায়ীকে সিসি লোনের আওতায় এনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দ্বার করানো হবে। এরকম দূর্ঘটনা এড়াতে সকলকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেণ।