বরাদ্দ ছাড়াই বিনা ভাড়ায় সরকারি কোয়ার্টারে সপরিবারে বাস করছেন পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর কর্মচারীরা। বছরের পর বছর তারা সরকারি খরচে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করছেন। একইসাথে তারা বাড়ি ভাড়াসহ সরকারি বেতনও ভোগ করছেন। কেউ কেউ আবার সাবলেটে সরকারি কোয়ার্টার অন্যত্র ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত আরো সুবিধা নিচ্ছেন। টঙ্গী আশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পাশে পিডিবির কোয়ার্টার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কোয়ার্টারের বরাদ্দপ্রাপ্ত বৈধ বাসিন্দাদের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সরকারি কোয়ার্টারে বাসা বরাদ্দ ছাড়াই পাওয়ার গ্রিড
কোম্পানী অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর কর্মচারীরা বাস করছেন।
পিজিসিবির জন্য নির্ধারিত চারটি ভবনের মধ্যে মাত্র দুই জন কর্মচারীকে বরাদ্দ নিয়ে বাস করতে দেখা গেছে। সেখানে কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত একটি ভবনে থাকেন না কোন কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সেখানে বিনা ভাড়ায় সপরিবারে বাস করছেন তাদের অধস্তন কর্মচারীরা। ভবনটির প্রতি ফ্ল্যাটের আয়তন ১২ হাজার স্কয়ার ফিট। সেখানে কর্মচারীরা বিনা
ভাড়ায় থাকছেন, আবার কেউ কেউ সাবলেটও দিয়েছেন। বিনা ভাড়ার এসব কর্মচারী নিয়মিত গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি সুবিধা ভোগ করলেও ভাড়ায় বা বাসা বরাদ্দপ্রাপ্ত
কর্মচারীরা প্রায়ই পানি সংকটে ভোগেন। যারা বাসা বরাদ্দ নিয়ে বাস করছেন তাদের মূল বেতনের অর্ধেকই বাড়ি ভাড়া বাবদ কর্তন করে রাখা হয়। অথচ সেখানে পিজিসিবির প্রায় ১৫ জন কর্মচারী বরাদ্দ ছাড়াই সরকারি কোয়ার্টারে সপরিবারে বাস করছেন। তারা একইসাথে
বাড়ি ভাড়াসহ সম্পূর্ণ বেতন ভোগ করছেন এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সুবিধাসহ সরকারি কোয়ার্টার বিনা ভাড়ায় ব্যবহার করছেন। এতে সরকার প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।
টঙ্গী পিজিসিবি’র উপকেন্দ্রের ডিএমডি কুতুব উদ্দিন পলাশ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ আলোচিত এসব কর্মচারীর কাছ থেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে ভাড়া তুলে কুক্ষিগত করছেন বলেও কোয়ার্টারের বৈধ বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। আবদুর রশিদ সম্প্রতি এসব অবৈধ বাসিন্দাদের জন্য কোম্পানীর খরচে পানির লাইনের নতুন সংযোগ দিয়েছেন।
এব্যাপারে ডিএমডি পলাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোম্পানীর ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, এসব বিষয় ম্যানেজার সাহেব অবগত আছেন।
এব্যাপারে পিজিসিবির টঙ্গী উপ- কেন্দ্রটির ম্যানেজার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে কোয়ার্টারে মাত্র দুই জন কর্মচারী বাসা বরাদ্দ নিয়ে বৈধভাবে বাস করছেন।’ তবে সেখানে বরাদ্দ ছাড়া কেউ বাস করেন কিনা তা তার জানা নেই বলে তিনি দাবী করেন।
উল্লেখ্য, টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকা সংলগ্ন পিজিসিবি’র ২৩০/১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনটি থেকে উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, সাভার ও গাজীপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার সবচেয়ে বড় উপকেন্দ্র এটি। গুরুত্বপূর্ণ এ সরকারি স্থাপনাটির সার্বক্ষণিক তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রের পাশেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য যাবতীয় ইউটিলিটি সুবিধাসহ সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা সেখানে বাস না করায় উপকেন্দ্রটি অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।