দশ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ২জনের মৃত্যু ও ৪জনের পদত্যাগে কোরামশূণ্য হয় ম্যানেজিং কমিটি। ওই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভূয়া স্বাক্ষরেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলন, নিয়োগসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি অবৈধ কার্যক্রম এখন আইনে পরিণত হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার শেরপুরের পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এদিকে মেয়াদত্তোর্ণ কমিটি অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বিদ্যালয়ের দাতা শ্রেণির সদস্য শুভেন্দু লাহিড়ী।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কয়েকটি তদন্তে ঘুষ ও দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসদাচরণ প্রমান হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৭২.৩৯.০১৫.১৩.৩৪১. বিগত ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই এর নির্দেশক্রমে এডহক কমিটির স্মারক নং শেপাউবাবি/২০১৬/১৩(১৩) ও শেপাউবাবি/২০১৬/১৪(১৩) বিগত ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সভাপতি স্বাক্ষরিত পত্রে মো: আবু সাঈদ শেখ (২৯৯১১৭) প্রধান শিক্ষক ও মো: আবদুল মোমিন (৫৫৯৬৮৭) সহকারী শিক্ষককে চাকুরী হতে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেন। এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর একই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করেন।
চাকুরীচ্যুত হওয়ার পর থেকে শিক্ষকদ্বয় চাকুরী ও স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া সরকারী বেতন ভাতাদি ফেরৎ পাওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রনালয় বা মহামান্য আদালতের কোন নির্দেশ ছাড়াই চলমান মামলার তথ্য গোপন করে ওই চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদ্বয় বহিরাগত লোকজনকে সাথে নিয়ে এসে গত ২০১৮ সালের ১৫ মে বিদ্যালয়ে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে অলিখিত রেজুলেশন বহিতে জোড়পূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে অবৈধভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।
এদিকে শেরপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ১০ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন দেয় রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষাবোর্ড। কিন্তু এ ম্যানেজিং কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত অভিভাবক সদস্য আব্বাস আলী, ২৯/০৮/২০১৭ এবং সালমা ইসলাম শেফা, ০৬/০৯/২০১৭ খ্রি: মৃত্যুবরণ করে। অন্যদিকে গত ০৪/০৮/২০১৮ তারিখে একই কমিটির অভিভাবক সদস্য মো: ছহির উদ্দিন, নিতাই সরকার, রোজিনা খাতুন (শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য) ও সাবিনা সুলতানা, শিক্ষক প্রতিনিধি (সংরক্ষিত মহিলা) সদস্য পদ হতে পদত্যাগ করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পদত্যাগ পত্র প্রেরণ করেন। এতে কোরামশূণ্য হয়ে যায় ম্যানেজিং কমিটি।
কোরাম শূণ্য ম্যানেজিং কমিটি নিয়েই পূর্বের চাকুরীচ্যুত প্রধান শিক্ষক অবৈধভাবে দায়িত্ব নেয়ার পর তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোজাফফর আলীকে চাকুরীচ্যুত করে। একইভাবে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ভূল বুঝিয়ে প্রকৃত স্মারক গোপন করে ভ্রান্ত স্মারক উল্লেখে স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া সরকারী বেতন ভাতাদি নভেম্বর/২০১৯ খ্রি: হতে এমপিও সীটে অন্তর্ভূক্ত করে বলে এমন অভিযোগও উঠেছে।
এদিকে, বিধি বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাকুরীচ্যুত হওয়ায় মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন নং ১৪৬৫৯/১৮ দায়ের করেন। এতে আদালত শিক্ষামন্ত্রনালয়ের নির্দেশে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিক কোন কাজে সহযোগীতা না করার জন্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে আদেশ দিয়ে রুলনিশি জারি করেন এবং অপর এক আদেশে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্থগিতকৃত বেতন ভাতাদি প্রদানের নির্দেশ দিলেও তা অদ্যাবধি অমান্য করে চলছে বলে ভূক্তভোগী শিক্ষক মোজাফফর আলী জানান।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য শুভেন্দু লাহিড়ী জানান, বিধি মোতাবেক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকস্তরের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধান মালা, ২০০৯ এর জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের ৩০(৩) উপধারা অনুযায়ী কোন সদস্য পদত্যাগ পত্র সরাসরি কিংবা ডাকযোগে সংশ্লিস্ট দপ্তরে পৌঁছা মাত্রই তা কার্যকর হবে মর্মে প্রজ্ঞাপণে উল্লেখ রয়েছে। সেক্ষেত্রে শেরপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বর্তমান মেয়াদদেুজনের মৃত্যু, ৪জনের পদত্যাগ হওয়ায় বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়া নয়কি বা দেখভালের দায়িত্ব কাদের উপর বর্তাবে এমনটাই প্রশ্ন সচেতনমহলে।
এদিকে কোরামশূণ্য হয়ে বতর্মান প্রধান শিক্ষক(অবৈধ)সহ তিনজন নিয়ে চলছে ওই বিদ্যালয়ের অবৈধ ম্যানেজিং কমিটি। এর মধ্যে পূর্বের পদত্যাগকারী ৪জনের মধ্যে একজনের ভূয়া স্বাক্ষর ও চাকুরী হারানোর ভয় দেখিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর নিয়ে অবৈধভাবে বেতনভাতা উত্তোলন ও নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে প্রধান শিক্ষক।
এ ব্যাপারে পদত্যাগকারি অভিভাবক সদস্য নিতাই সরকার বলেন, ২০১৮ সালে ওই ম্যানেজিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করার পর থেকে আমি নিজে কোন স্বাক্ষর করিনি। তাছাড়া ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কমিটি অঙ্গিকারনামায় প্রদেয় স্বাক্ষরটির তার না বলে দাবী করেন।
ওই বিদ্যালয়ের কোরামশূণ্য ম্যানেজিং কমিটির সকল কার্যক্রম বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছে বলে জানান ওই দাতা সদস্য শুভেন্দু লাহিড়ী।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ সেখ মোবাইল ফোনে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে প্রচলিত নিয়মের ব্যতয় ঘটছেনা বলে তিনি দাবী করেন।