শেরপুরের মক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তটি শুধু মাত্র স্মরনীয় সময়ে স্মরণ করা হয় । এছাড়া পুরো বছর জুড়ে থাকে অনেকটা অযত্ব-অবহেলায়। বর্তমানে চলছে স্বাধীনতার মাস । আর ওই স্মৃতিস্তম্ভে চলছে নানা অসামাজিক কর্যকলাপ। যেন দেখার কেই নেই। নানা বিভাগের সাথে কথা বলে প্রকৃত দেখভাল করার দায়িত্ব কার তা খুজে পাওয়া যায়নি।
জানাগেছে, বিগত ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর গণপুর্ত বিভাগ কর্তৃক স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মানের পর তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউর করিম উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে শহিদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয় এই মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে। স্মৃতিস্তম্ভে একাত্তোরে মুক্তিযুদ্ধোর সময় জেলার শহিদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাও রয়েছে।
জাতীয় দিবস ছাড়াও এ স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে চৈত্র সংক্রান্তিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভের পাশেই রয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমী। স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন পৌর শিশু কর্নারের ওয়াই ফাই ফ্রি জোন তৈরী করে দেয়া হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় বসে ফ্রি ওয়াই ফাই ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যায়। স্তম্ভের সোজা সামনে রয়েছে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। ফলে এখানে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে নানা বয়সের মানুষের আড্ডা।
এ আড্ডার ফাঁকে সম্প্রতি শুরু হয়েছে নানা অসাজিক কর্মকান্ড। স্মৃতিস্তম্ভের সাথেই অবৈধভাবে আব্দুল হাকিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ঘর নির্মাণ করে পান-বিড়ি’র দোকান গড়ে তুলেছে। ফলে সারাদিন এবং মধ্যরাত পর্যন্ত এসব আড্ডা আরো জমে উঠেছে। ওই পান-বিড়ি দোকানের মালিক আব্দুল হাকিম মিথ্যে কথা বলে পৌরসভার দোহায় দিয়ে সেখানে আস্তানা গেড়েছে তার পান-বিড়ি ব্যবসা করার জন্য। এর পাশাপাশি স্মৃতিস্তম্ভের উপর সারদিন তার দোকানের আগুন জ্বালানোর লকড়ি ও গাছের পাতা শোকানোর জন্য ব্যবহার করে স্মৃতিস্তম্ভটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিনত করছে। দিন এবং মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তার পানবিড়ি দোকান। এরফাঁকে এক শ্রেণীর যুবক সিগারেট ও গাজার আসর এবং কেরাম বোর্ড খেলার নাম করে জুয়ার আসর বসিয়েছে। উঠতি বয়সের যুবকরা ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন পেয়ে বাড়ি যেন আর যেতে চায় না তারা। ফ্রি ইন্টারনেট এর নেশায় বুদ হয়ে পড়ে থাকে সকাল-সন্ধ্যা এমন কি মধ্যরাত পর্যন্ত। ফলে শহিদ বেদির সম্মানহানি ঘটাচ্ছে বলে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন।
অবৈধ দখলদার দোকানি হাকিমের সাথে কথা বললে তিনি জানায়, পৌরসভার অনুমতি নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভের দেখাশোনা করি আর আমার দোকান চলাই। তবে এ বিষয়ে পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন জানান, হাকিম মিথ্যে কথা বলেছে, আসলে ওই স্মৃতিস্তম্ভের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। স্মৃতিস্তম্ভে নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। বিভিন্ন দিবসের সময় জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের চিঠি দিয়ে জানানো হলে আমরা পরিস্কার করে দেই মাত্র। ওই স্মৃতিস্তম্ভের মালিকানা বা দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের নয়, তাই ওখানে অবৈধ দোকান বসানোর বিষয়টি দেখারও আমাদের দায়িত্বে নয়।
এবিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান , স্মৃতিস্তম্ভ আমরা নির্মাণ করেছি এটা ঠিক, তবে এর দেখাশোনা সম্ভবত পৌরসভা করেন। কারণ আমি দেখেছি বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ধোয়া-মোছার কাজ তারাই করে থাকে। আর আনুষ্ঠানিকভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পর হস্তান্তর হয়েছে কিনা তাও আমি বলতে পারছিনা। তবে জমির মালিক যদি জেলা প্রশাসন হয় তবে তারা এ বিষয়ে বলতে পারবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব জানান, কাগজে কলমে স্মৃতিস্তম্ভের মালিকানা বা দেখভাল করার দায়িত্ব কার বিষয়টি জেনে পরে জানাবো।