করোনা ভাইরাস, ডেঙ্গুসহ সব ধরণের বালা মুসিবত থেকে মুক্তি, নির্যাতিত বিশ্ব উম্মাহর জান-মালের হেফাজত এবং দেশ, জাতির সুখ শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে লাখো মুসল্লির অশ্রুসিক্ত নয়নে আমিন-আমিন ধ্বনীতে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হল ‘দাওয়াতে ইসলামী’র তিন দিনের সুন্নাতে ভরা ইজতিমা।
রাজধানীর সিভিল এভিয়েশনের বিশাল ময়দানে জুমার নামাজের পর দরুদ, সালাতু সালাম, মিলাদ কিয়ামের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আখেরি মোনাজাত। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ‘দাওয়াতে ইসলামী’ বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন আত্তারী। মুসল্লিরা মহান আল্লাহ পাকের দরবারে প্রার্থনায় দু’হাত তুলে কান্নাকাটিতে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। এ সময় আমিন আমিন ধ্বনীতে ইজতিমা ময়দানে এক হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যের অবতারণা হয়। ইসলামের জীবন বিধান মেনে সারাবিশ্বে নেকীর দাওয়াত পৌঁছে দিতে মহান রবের সাহায্য কামনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে মহান রবের দরবারে ফরিয়াদ করে বলা হয়, হে আল্লাহ, রাহমাতুল্লিল আলামিনের ওয়াসিলায় করোনা ভাইরাস, ডেঙ্গু, ঘূর্ণিঝড়সহ সব বালা মুসিবত থেকে দেশ, জাঁতি ও মুসলিম মিল্লাতকে হেফাজত করো। তোমার রহমত বর্ষণ করো। বিশ্বের মুসলমানদের হেফাজত করো, নির্যাতনকারিদের হেদায়ত দান করো। দেশে খাস রহমত নাজিল করো। মা-বাবাসহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করো, আমাদের সবাইকে ইসলামের শান্তির পথে কবুল করো। নেকির দাওয়াত দেয়ার তওফিক দান করো। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস থেকে আমাদের রক্ষা করো। আল্লাহ ও তার প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জনের তওফিক দাও।
এর আগে মানুষের সংশোধন, দাওয়াতি কার্যক্রমসহ সার্বিক বিষয়ে মূল বয়ান দেন ‘দাওয়াতে ইসলামী’র জিম্মাদার মাওলানা নূরউদ্দিন আত্তারী। ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ তাসাউরে মদিনা (মদিনার ধ্যান) করান মোহাম্মদ রিয়াজ আত্তারী। জুমার নামাজে ইমামতি করেন ‘দাওয়াতে ইসলামী’র মুবাল্লিগ মাওলানা আরাফাত মাদানি আত্তারী। ইজতেমার দোয়ায় দেশের লাখো আশেকে রাসূল শামিল হন।
শুক্রবার শেষ দিনে সকাল থেকে জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত ‘দাওয়াতে ইসলামী’র মুবাল্লিগগণ কুরআন- হাদিসের আলোকে ইসলামের মৌলিক বিষয়ের উপর বয়ান দেন। নামাযের ফযীলত ও বিজ্ঞান সম্মত উপকারিতা, সারাবিশ্বে ‘দাওয়াতে ইসলামী’র গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একে একে বয়ান দেন ‘দাওয়াতে ইসলামী’র মুবাল্লিগ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম কাদেরী, আলফেসানি আত্তারী প্রমূখ।
আল্লাহ পাকের নির্দেশিত পথে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিঃশর্ত অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে ‘দাওয়াতে ইসলামী’র মুবাল্লিগণ বলেন, আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনাদর্শ অনুসরণেই মানবতার মুক্তির পথ নিহিত। ইসলামের জীবন বিধান মেনে চলা গেলে এবং প্রিয় রাসুলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র সুন্নাতের রঙে রাঙায়িত হয়ে মোত্তাকি হতে পারলেই দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি মিলবে। আর প্রিয় হাবিবের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসাই ঈমানের প্রথমশর্ত। আল্লাহপাক ও তাঁর প্রিয় রাসূলের সন্তুষ্টির জন্যই হতে হবে আমাদের নিয়্যত, চিন্তাধারা, কর্মকাণ্ড সবকিছুই।’ বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইসলামের নেকীর দাওয়াত পৌঁছে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।
দাওয়াতে ইসলামীর মিশন ও ভিশন তুলে ধরেন দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগ মোহাম্মদ মবিন আত্তারী বলেন, আমিরে আহলে সুন্নাত আবু বিলাল মোহাম্মদ ইলিয়াস আত্তার কাদেরীর নেতৃত্বে দ্বীনি ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘দাওয়াতে ইসলামী’ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সারাবিশ্বে ২০০টি দেশে ইসলামের নেকীর দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন।
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমতে সুন্দরভাবে তিনদিনের সুন্নাতেভরা ইজতেমা শেষ হয়েছে। ইজতেমায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান হয়েছে। বাস্তবজীবনে একে কাজে লাগানো গেলে তাহলেই স্বার্থকতা। আসুন প্রত্যেক মানুষের কাছে আমরা ইসলামের নেকীর দাওয়াত পৌঁছে দেই। ইজতেমার আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, পীর মাশায়েখ ও আশেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় দাওয়াতে ইসলামী।