মোট শ্রম শক্তির অর্ধেক হওয়া সত্বেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন শ্রমজীবি মহিলারা। একটু বিশ্রাম কিংবা কারো সাথে কথা বলা দেখলেই বকুনিও খেতে হচ্ছে শ্রম ক্রেতা ভূস্বামীদের।
এখানকার অর্থনীতি কৃষি প্রধান হওয়ায় কৃষিতে রয়েছে যথেষ্ট শ্রমের চাহিদা। পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি বেশি ও নারী শ্রমিকদের কাজে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা কম থাকায় দিন-দিন নারী শ্রমিকদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে নারী-পুরুষ লিঙ্গ বৈষম্য কমে আসলেও কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্য যেন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে ঐসব শ্রমজীবি মহিলার উপর। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলসহ নিজাম খাঁ, ঘগোয়া, চাচিয়া মীরগঞ্জ, নওহাটি চাচিয়া, তারাপুর, বামনজল গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে কৃষিকাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাই বেশি জড়িয়ে পড়েছেন- বোরো ধান নিড়ানি ও আলু তোলাসহ বিভিন্ন কৃষিকাজে।পুরুষ শ্রমিকরা বেশি উপার্জনের আশায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় এলাকার কৃষকদের একমাত্র ভরসা এখন নারী শ্রমিক। অসচ্ছল, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও কোনো কোনো পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী হওয়ায় ওই নারীরা পরিবারের মুখে একটু খাবার তুলে দেয়াসহ সন্তানদের পড়াশোনার ব্যবস্থার জন্য তাদের শ্রম বিক্রি করতে গেলে এ মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শ্রম ক্রেতা ভূস্বামীরা তাদের ন্যায্য মজুরি না দিয়ে স্বল্প মজুরি দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে, পুরুষ শ্রমিকরা প্রতিদিন যেখানে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা হারে মজুরি পাচ্ছেন, সেখানে একই কাজ করে নারী শ্রমিকরা পাচ্ছেন ১শ’ ৫০ থেকে ১শ’ ৬০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না তাদের মজুরি। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব শ্রমজীবি মহিলা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। অথচ এসব শ্রবজীবি মহিলা ন্যায্য মজুরি পেলে পরিবারের স্বচ্ছলতা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারতেন। কথা হয় তারাপুর ইউনিয়নের কালীর পাট, চাচিয়া মীরগঞ্জ ও তারাপুরে বোরো ধান নিড়ানীরত- মর্জিনা বেগম, কবিতা রানী, বুলবুলি, শিল্পী, সাহেরন, মমতাজ বেগম ও শ্যামলী রানীসহ অনেকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে মর্জিনা বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, “১শ’ ৫০ থেকে ১শ’ ৬০ টাকায় সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পযন্ত কাজ করতে হয়। যা দিয়ে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে শারমিন (১৫) ও ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে স্বাধীন (১৩) কে নিয়ে বেশ কষ্টে আছি। বছর ১৩ আগে স্বামী মারা গেলেও আজ পর্যন্ত বিধবা ভাতাসহ সরকারী কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছিনা, আর টাকা ছাড়া মিলছেও না এসব সুবিধা।” তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “পুরুষের চেয়ে কি আমাদের হাত ও পায়ের সংখ্যা কম? যার ফলে আমাদেরকে মজুরি কম দিয়ে ঠকানো হচ্ছে!”