বগুড়ার ধুনটে সরকারী দল আওয়ামী লীগের অভ্যান্তরীন কোন্দল এখন প্রকাশ্য রক্তক্ষয়ী সংঘাত সংঘর্ষে রুপ নিয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই খোকন, আওয়ামী লীগের সাংসদ হাবিবর রহমানের পুত্র আসিফ ইকবাল সনি ও ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলম সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ইমরুল কাদের সেলিমের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার বিকেলে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ধুনট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাগেছে, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাবেক পুলিশ সুপার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পান হাবিবর রহমান। বিএনপি প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন প্রার্থী হন মজিবর রহমান মজনু ও হাবিবর রহমান। সেবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে হাবিবর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাবিবর রহমান। এদিকে মনোনয়ন বার বার মনোনয়ন না পেয়ে হাবিবর রহমানের সঙ্গে মজিবর রহমানের দ্বন্দ্বের শুরু হয়। তাঁদের দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। একারনে মাঝেমধ্যেই দুই গ্রুপের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গত ২ মার্চ রাতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বগুড়া-৫ আসনের এমপি হাবিবর রহমানের অনুসারী ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইমরুল কাদের সেলিমেকে পিটিয়ে আহত করে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর অনুসারী ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম খান ও তার লোকজন। পরবর্তীতে ইমরুল কাদের সেলিমের লোকজনও হামলা চালিয়ে শরিফুল ইসলাম খানকে পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় ইমরুল কাদের সেলিম বাদী হয়ে মজিবর রহমান মজনুর অনুসারী ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম খান সহ ৭জনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে শরিফুল ইসলাম খান বাদী হয়ে এমপি হাবিবর রহমানের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল সনি, ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই খোকন ও যুগ্ন সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলম সহ আওয়ামী লীগের ১৩ নেতাকর্মীর নামে পৃথক মামলা দায়ের করেন।
এদিকে গত ৫ মার্চ আ.লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম খান সহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ও আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে মজিবর রহমান মজনুর নেতৃত্বে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে রোববার (৮ মার্চ) বিকেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই খোকন, স্থানীয় সাংসদ হাবিবর রহমানের পুত্র আসিফ ইকবাল সনি ও ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলম সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ইমরুল কাদের সেলিমের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠন।
ধুনট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম সোবাহানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবদুল হাই খোকন, শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া, ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল সনি, রেজাউল করিম রেজা, যুগ্ন সম্পাদক মহসীন আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আওয়াল, ভিপি সাইফুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আশিকুর রশিদ হেলাল প্রমূখ। এছাড়াও প্রতিবাদ সভায় ১০টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।