শিক্ষিকাকে অপহরনকারী লালমনিরহাটের শিক্ষক খায়রুল আলম সবুজ পাটোয়ারীসহ প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে গণপিটিশন দাখিল করেছে বিদ্যালয়টির অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসী।
রোববার (০৮ মার্চ) বিকেল ৩টায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপুর্ন দফতরে গণপিটিশন দাখিল করা হয়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে অপহৃতা শিক্ষিকার স্বামী মাহাবুব রহমান মিঠু বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় প্রধানশিক্ষক ও অভিযুক্ত শিক্ষকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক খায়রুল আলম সবুজ পাটোয়ারী সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের খোরাগাছ গ্রামের আবুল কাশেম পাটোয়ারীর ছেলে এবং একই এলাকার উমাপতি হরনারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
অভিযোগে প্রকাশ, উপজেলার উমাপতি হর নারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুল আলম সবুজ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল তার সহকর্মী একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এক সন্তানের জননী রিনা বেগমকে (৩০)। বিষয়টি রিনা বেগম তার স্বামীকে অবগত করলে ওই শিক্ষককে সতর্ক করা হয়। কিন্তু এতেও আচরণ সংশোধন না করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মাঞ্জুমা আক্তারের সহায়তায় রিনাকে ফিরনির সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ান খায়রুল। এতে রিনা অসুস্থ হয়ে গেলে তার স্বামী মাহাবুব তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে চিকিৎসা করান।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মাঞ্জুমার কাছে বিচার প্রার্থনা করেও কোনো সুফল পাননি রিনার পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিদ্যালয় থেকে ফিরে বাড়িতে একা ছিলেন রিনা। এ সময় তার স্বামী বাজারে থাকার সুযোগে লম্পট শিক্ষক খায়রুল আলম ওই বাড়িতে গিয়ে পুনরায় চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে তার বাড়ির স্বর্ণালঙ্কার, নগদ পৌনে চার লাখ টাকা ও শিক্ষাগত যাবতীয় কাগজপত্রসহ রিনাকে নিয়ে পালিয়ে যান।
পরে, বাড়ি ফিরে মাহাবুব রহমান স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন তার স্ত্রীকে গাড়িতে করে নিয়ে গেছেন খায়রুল আলম। অপহরণকারী শিক্ষক খায়রুলের বাড়িতে গিয়েও রিনার সন্ধান না পেয়ে রাতেই সদর থানায় ৪ জনকে আসামি করে স্ত্রীকে অপহরণের একটি অভিযোগ দায়ের করেন মাহাবুব রহমান।
ঘটনার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো রিনা বেগমকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে অভিযুক্ত খায়রুল আলম সবুজও আত্মগোপনে রয়েছেন।
৪ জনের মধ্যে দুইজন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষক সংকটে বিদ্যালয়টির পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। প্রধানশিক্ষক মাঞ্জুমা আক্তার নিজেও বিদ্যালয়ে অনিয়মিত। প্রতিষ্ঠাকালিন থেকে এ প্রতিষ্ঠানে থাকার সুবাদে নিজের করা নিয়মে চালান প্রতিষ্ঠান। যা নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে একাধিকবার শোকজ করলেও তার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী আচরনের পরিবর্তন হয়নি। বিদ্যালয়টি জাতীয় করনের গত চার বছর ধরে সরকারী বরাদ্ধের কোন অর্থের বাস্তবায়ন না করে আত্মসাৎ করাসহ ১২টি অনিয়ম উল্লেখ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে গণপিটিশন দায়ের করে বিচার দাবি করেন শতাধিক অভিভাবক।
একই গণপিটিশনে শিক্ষিকা রিনা বেগমকে অপহরনকারী শিক্ষক খায়রুল আলম সবুজ পাটোয়ারীর সকল শিক্ষাগত সনদ জাল বলে দাবী করেন অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। তারা তদন্ত স্বাপেক্ষে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বলেন, অপহৃতা শিক্ষিকা রিনা বেগম মোবাইলে তার অবস্থান জানিয়েছেন এবং স্বামীকে তালাক দেয়ার কথাও স্বীকার করেছেন। তাকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। খুব দ্রুত তিনি থানায় হাজির হবেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী বলেন, গণপিটিশন পেয়েছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত শনিবার বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে অনুপস্থিত পেয়েছি। যাদের বেতন কর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষার মান বাড়াতে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকসহ তিন শিক্ষককে খুব দ্রুত অন্যত্র শাস্তিমুলক বদলী করা হবে বলেও জানান তিনি।