কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), ফরিদপুর এবং কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র, বারি. গাজীপুর এর আয়োজনে সোমবার বিকেলে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ভেলাবাজ গ্রামে বারি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ও পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী আলুর জাতের উৎপাদন কলাকৌশল শীর্ষক মাঠ প্রদর্শনীর উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
মাঠ দিবসে সভাপতিত্ত্ব করেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ। মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মাঠ পরিদর্শন ও বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা।
মাঠ দিবসে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফরিদপুর মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র এর ঊর্ধবতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলাউদ্দিন খান, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ফরিদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.এফ.এম. রুহুল কুদ্দুস, কৃষক দিজেন দাস, কৃষাণী শিল্পী দাস, অজয় কুমার দাস, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
মাঠ দিবসে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মূল্য ও উৎপাদন বিবেচনায় বাংলাদেশের ২০টি প্রধান ফসলের মধ্যে ধানের পরই আলুর স্থান। আলু উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে ৩য় ও পৃথিবীর মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সেখানে আলু উৎপাদিত হতো ৯ লক্ষ মেট্রিক টন সেখানে ২০১৬-১৭ মৌসুমে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ মেট্রিক টন। দিন দিন আলু চাষের জমির পরিমাণ, মোট উৎপাদন ও গড় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা গবেষণা ও সম্প্রসারণের কাজের ফলাফল। অধিকন্তু একক সময়ে একক পরিমাণ জমিতে এত বেশী ফলন অন্য কোন চাষযোগ্য ফসলে পাওয়া যায় না এবং আলু উৎপাদন মৌসুমে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকে না বলে কৃষকরা আরও বেশী উৎসাহিত হচ্ছে। আলু গাছে বাংলাদেশে সাধারণত ফুল হয় না, তাই প্রথম দিকে বিদেশী জাত অবমুক্তির মাধ্যমে আলু চাষ শুরু হয়। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আলু গাছে ফুল, ফল হওয়াতে সক্ষম হয়। নিজস্ব সংকরায়নের মাধ্যমে প্রথম ২০০০খ্রি. এ সংকরায়িত বীজ/হাইব্রিড বীজ পেতে সক্ষম হয়। সংকরায়িত বীজ থেকে ক্লোনাল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১২ সালে প্রথম ৩টি জাত বারি আলু-৩৫, বারি আলু-৩৬ ও বারি আলু-৩৭ অবমুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে আলুর জাত উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের “কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র” বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৯১ টি জাত উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু জাতগুলো কৃষক বা আলু উৎপাদনকারীদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় নাই। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগীতায় এ মৌসুমে সারা দেশে প্রায় ৩৫০টি উপযোগিতা যাচাই পরীক্ষা স্থাপন করা হয়। আজকের মাঠ দিবসের পরীক্ষাটিও তার একটি। এখানে ৫ টি নতুন নিজস্ব সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাত বারি আলু-৩৫, ৩৬, ৩৭, ৪০ ও ৪১ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আগত কৃষক কিষাণীরা বিভিন্ন জাতের আলুর উৎপাদন প্লট পরিদর্শণ করেন এবং জাতগুলোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা আধুনিক জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজ আলু প্রাপ্তিতে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণকর্মীদের অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে পরিবর্তনশীল জলবায়ু মোকাবেলায় উপযোগী আলু জাত ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন ও আধুনিক উচ্চ ফলনশীল আলুর জাত আবাদের জন্য কৃষকের প্রতি আহবান জানান।