নিবন্ধের শুরুতেই বৃটেনের একজন লেখকের ফ্রিডম এন্ড ডেমোক্রেসি বইয়ের উদ্ধৃতি থেকে বলব, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। বিচার বিভাগে যে কোনো হস্তক্ষেপ গণতন্ত্র অপহরণেরই শামিল। দুদকের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আওয়াল ও তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা লায়লা পারভীন ০৩/৩/২০২০ ইং মঙ্গলবার পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আঃ মান্নানের আদালতে হাজিরা দেয়। আদালত উভয়ের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করে থাকেন। এরই মধ্যে জেলা ও দায়রা জজকে অপসারণ করা হয় এবং তদস্থলে যুগ্ম জেলা দায়রা জজকে দায়িত্ব প্রদান করা হলে জামিন খারিজের ৩ ঘন্টার মধ্যে তাদেরকে জামিন দেয়া হয় বলে জানা যায়। যা নিয়ে অনেকেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে এবং এ ঘটনাকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করে থাকে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ০৪/০৩ ও ০৫/০৩/২০ ইং প্রকাশিত হয়ে থাকে। কোনো এক মামলায় হস্তক্ষেপ করার কারণে এবং তা সহ্য করতে না পারায় কয়েকমাস আগে থাইল্যান্ডের এক বিচারক জনাকীর্ণ এজলাসে বসে নিজের পিস্তল দিয়ে নিজের বুকে গুলি করে থাকে। নজিরবিহীন এ দৃষ্টান্ত বিচারক ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে অম্লান করে রেখেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন, স্বাধীনতা অর্জন, বিচারকদের মর্যাদা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বার্থে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ও সুবিন্যস্থ। কোনো মতেই এটাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ লেখক রিচার্ড মেইলের ঋৎববফড়স ্ উবসড়পৎধপু বইয়ের উদ্ধৃতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে উদ্ভাসিত করবে তাতে সন্দেহ নেই।
দুর্নীতির আড়ালে একশ্রেণীর ভূয়া ডাক্তার, ভূয়া ডেন্টিস্ট ও প্যাথলজিস্ট নামধারীরা মানুষ মারার কারিগর, দানব, দজ্জাল, রাক্ষস হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ অপচিকিৎসায় তোলপাড় সৃষ্টি করে চলছে। এ শ্রেণীটা ন্যূনতম একাডেমিক শিক্ষা ও এমবিবিএস সনদ প্রাপ্ত না হয়েও অহরহ ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশন প্যাডে ডাক্তার পদবী ব্যবহারসহ বাহারী সাইনবোর্ড সমেত চেম্বারে এ ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে। যা দন্ডনীয় অপরাধের সামিল। যাদের ডেন্টাল ডাক্তারী সনদ নেই তারাও ডেন্টিস্ট। যাদের প্যাথলজি পরীক্ষার ডাক্তারী সনদ নেই তারাও প্যাথলজিস্ট হিসেবে অবাধে রোগীর পরীক্ষা নিরিক্ষার রিপোর্ট দিয়ে চোখের সামনে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এমবিবিএস সনদ ব্যতিরেখেই ডাক্তার সেজে বসেছে। অপরদিকে নকল ইন্স্যুলিন, নকল হার্টের রিং, মরনঘাতক ক্যান্সারের ভেজাল ঔষধ, পেইন কিলার, এন্টিবায়োটিক ক্যাপসুল, ভিটামিনের নামে নকল ও ভেজাল ঔষধসহ হরেক রকমের ভেজাল ঔষধে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। যা ভূক্তভোগী রোগীদের সমূহ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূয়া ডাক্তার ও ভেজাল ঔষধের বাণিজ্য দুর্নীতি অসাধুতারই অংশ বিশেষ। যদিও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন ও জিরো টলারেন্সের কথা বলে আসছেন। ৬ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড়া দেয়া হবে না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুদকের সমন্বিত ২২ জেলায় ইতোমধ্যে ২২ জন সহকারী
পরিচালককে দুদকের গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে। অপরদিকে ৮ জন পরিচালককে ২২ সমন্বিত জেলায় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫টি জেলা ও ১৫৫ উপজেলার দুর্নীতি তালিকা তৈরি হয়েছে। এরা সারাদেশের জেলা ও উপজেলায় দুর্নীতি উদঘাটনে গোয়েন্দা কার্যক্রম তদারকি ও নজরদারী করবেন। এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতি করে এলাকায় কেহ প্রভাব খাটাবেন, সে দিন ভুলে যান (যুগান্তর ৫ মার্চ ২০২০ ইং)।
একবার আমার এক আত্মীয়কে বাহারী রংয়ের প্রেসক্রিপশনে এমন একটি উচ্চ মূল্যের ভিটামিন ক্যাপসুলের নাম লেখে দেয়া হল যা নামীদামী ফার্মেসীতে খোঁজাখুজি করে পাওয়া যায়নি। সকলের একই জবাব এ সমস্ত ভিটামিন আমরা বিক্রী করি না। এ সমস্ত ভিটামিন কোন কোম্পানীর প্রডাক্ট তাও জানিনা। তবে সাধারণতঃ বিশেষজ্ঞ ও নামীদামী ডাক্তাররা কখনও এ ধরণের ভিটামিনের কথা লেখেন না। এ সবই আনারি ও সনদবিহীন ভূয়া ডাক্তারের কাজ। যিনি এ ভিটামিনের নাম লিখেছেন, তিনিই হতো বলতে পারবেন এ ধরণের ভিটামিন ক্যাপসুল কোথায় পাওয়া যায়। পরবর্তী সময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলে তিনি এ ধরণের ভিটামিন না খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। যদিও সূত্রে জানা যায়, এ সমস্ত ভিটামিন ক্যাপসুলের মনোরম স্ট্রীপের গায়ে লেখা থাকে মেইড ইন ইউএসএ, ইউকে ও জার্মানী। এমনিভাবে একজন ডেন্টিস্ট তাহার বাহারী রংয়ের প্রেসক্রিপশন প্যাডে দাঁতের ইনফেকশন ও ব্যাথা কমানোর জন্য রোগীকে কয়েক প্রকার ব্যথার ঔষধ (চধরহশরষষবৎ) উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ক্যাপসুল ও মালিশের জন্য মলম দেয়ার পর ব্যথা উপশম না হওয়াতে রোগী ডেন্টাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলে কোনো ক্রমেই এ ঔষধ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, এ পেইন কিলার ও এন্টিবায়োটিক ও মলম রোগীর উপশমতো হবেই না বরং সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী। তাতে ঔষধের মাত্রাও অতিরিক্ত বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। অনেক সময় আনারি ও হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে দাঁত তোলার কারণে অন্ধ হয়ে যাওয়ার কথাও কম শুনা যায়নি। এছাড়া সঠিক প্যাথোলজিস্টদের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে আনারি টেকনিশিয়ানদের মাধ্যমে প্যাথলজি টেস্ট করার কারণে ভুল পরীক্ষা নিরীক্ষায় আক্রান্ত রোগীর অবস্থা জটিল হওয়ার কথাও শুনা যায়। তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারিক ও নজরদারি না থাকার কারণে ভূয়া ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, অনভিজ্ঞ প্যাথলজি পরীক্ষা ও ভেজাল ঔষধ প্রয়োগের বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছে না। যে কারণে আজ এটাকে অনেকেই মানুষ মারার কারিগর ও দানব হিসেবে উল্লেখ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।
জানা যায়, খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এলাকায় করিমনগরের একটি বাসায় ০৩/৩/২০২০ ইং ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে একটি নকল ও ভেজাল ঔষধের কারখানার সন্ধ্যান পায়। এই কারখানায় বিভিন্ন কোম্পানীর মোড়কে নকল ও ভেজাল বিভিন্ন ধরণের এন্টিবায়োটিক, পেইন কিলার ও অন্যান্য ভেজাল ঔষধ জব্দ করা হয়ে থাকে। এমনিভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় সময়ই নকল ও ভেজাল ঔষধের কারখানা যেমনি সনাক্ত করা হচ্ছে তেমনিভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধসহ তেমনিভাবে মানুষ মারার কারিগার হিসেবে চিহ্নিত সনদবিহীন ভূয়া ডাক্তার, ডেন্টিস্ট ও ভূয়া প্যাথলজিও কম সনাক্ত ও ধরা পড়ছে না। লঘু আইনের ফাঁক ফোকর ও মারপ্যাচে যেমনি নকল টাকা বানানোর কুশীলব, ভূয়া মেজর, ভূয়া ক্যাপ্টিন, ভূয়া পুলিশ ও র্যাব অফিসার, ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেট নামদারি ও অন্যান্য দোষীরা যেমন বেড়িয়ে আসছে, তেমনি ভূয়া ডাক্তার, নকল ও ভেজাল ঔষধের সাথে জড়িত কুশীলবরাও বেড়িয়ে আসার কথাও দৃশ্যপট কম শুনা যায়নি। দুর্নীতি তদারকি ও নজরদারিতে দুদক আরও এক ধাপ গতিশীলতা বাড়িয়ে দুদক সমন্বিত জেলাসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্প্রসারণসহ কাউন্টার ইন্টিলিজ্যান্স (ঈড়ঁহঃবৎ ওহঃবষষরমবহপব) গঠন করেছে। যা দুদুকের যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিবেচিত। দুর্নীতি, অনিয়ম, টেন্ডারবাজি ও অন্যান্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির আড়ালে মানুষ মারার কারিগর হিসেবে যারা ভূয়া ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, ভূয়া প্যাথলজি, নকল ও ভেজাল ঔষধের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে এবং লঘু আইনের ধারা সংশোধন পূর্বক শাস্তি আজ জনদাবীতে পরিণত হয়েছে।
দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘাতক ভেজাল আজ সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে অস্থির করে তুলেছে। এর মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দফায়, দফায় অঘোষিত মূল্য বৃদ্ধিও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদোপরি অনেক প্রতিষ্ঠান যখন তখন ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পেঁয়াজ, ডাল, লবণ, চিনি, তেল, সাবানের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। তন্মধ্যে আরও রয়েছে রড, সিমেন্ট ও গৃহ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি। ক্যাসিনোর মতো তাদের পেছনেও গড ফাদার, কুশীলব ও নাটের গুরু নেই তাও অমূলক কিছু নহে। প্রেক্ষাপট মনে করে দুর্নীতির কুশীলব ও মানুষ মারার কারিগররা যেন সরকার ও দুদকের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় (ঈড়সঢ়বঃবঃরড়হ) নেমেছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা যেখানেই হাত দিচ্ছে সেখানেই অনিয়ম দুর্নীতির গড্ডালিকা প্রবাহ, ক্ষত, আলসার ও অনিয়মের খনি। যে জ্বালা, যন্ত্রণা, বেদনা ও অস্বাভাবিক ব্যথার (অনফড়সরহধষ ঢ়ধরহ) যেন শেষ নেই।
রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের আড়ালে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার অর্থাৎ করাপশন এন্ড মিসএপরোপ্রিয়েশান অব পাওয়ারের মাঝে দুর্নীতির দৃশ্যপটে ভূয়া ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, প্যাথলজি ও ভেজাল ঔষধ বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত ভাবের পাগলদের কথাও কম শুনা যায়নি। এসব ভাবের পাগলদের কৃষ্ণকর্ম ও দৃশ্যপট দেখলে অনেকেই মন করে ওরা দেশের নামিদামি ডাক্তারকেও যেন আমলেই নিচ্ছে না। তারপর বাহারী ডাক্তারী চেম্বার খোলে এবং অনেকেই রাজধানীর মিটফোর্ডসহ দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় রকমারি ভেজাল ও নকল ঔষধের বাণিজ্য দেদারছে চালিয়ে যেতে দ্বিধা সংকোচ করছে না। প্রায়
বছর আগে ঔষধ নিয়ন্ত্রণ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ বিজিবি ও অন্যান্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে মিটফোর্ডে তা প্রতিহত করতে গিয়ে তাদের ব্যারিকেডের মুখে চলে আসতে বাধ্য হয়।
এছাড়া এসব ভূয়া ডাক্তার, ডেন্টিস্ট ও প্যাথলজি চেম্বারের মনোরম সাজসজ্জার বহর দেখলে অনেকেরই মনে করার কথা ওরা যেন দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত খেতাবী সনদপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তাদের ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশন পত্রে বাহারী খেতাবের কথা কম দেখা যায়নি। এমনকি এসব চেম্বারে সমসাময়িক প্রভাবশালীদের সাথে ছবিও নাকি ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখা হয়। অনেক সময় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওরা স্পষ্ট করে ইংরেজী ঔষধের নামও লেখতে পারে না। তবুও ওরা ডাক্তার।
এমনও শুনা যায়, ওরা ইংরেজীতে প্রেসক্রিপশন লেখতে না পেরে মুখস্থ করা কিছু ঔষধের নাম বাংলাতে লেখতে গিয়েও নাকি ভুল করে থাকে। আবার অনেকেই বাংলাতে প্রেসক্রিপশন লেখতে গিয়ে বলে থাকে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে ইংরেজীতে চিকিৎসাপত্র না লেখে তা বাংলাতে লেখে থাকে। অর্থাৎ প্রতারণা, ভন্ডামী, কৃষ্ণকর্ম ও ভাবের পাগল যে (স্বার্থের পাগল) কত ধরণের হতে পারে এমন উপমা থেকে তা অনুধাবন কারও না বুঝার কথা নয়। এছাড়া এ শ্রেণীটা লোক দেখানোর জন্য অনেক সময় সরকারি আমলা ও প্রভাবশালীদের নিয়ে অনুষ্ঠান ও ভোজন বিলাসের আয়োজন করার কথাও জানা যায়। যা ক্যামোফ্ল্যাক্সেরই নামান্তর বলে অনেকেই মনে করে থাকে। যা এ কলামের সংক্ষিপ্ত পরিসরে দানব ও রাক্ষসদের সম্পর্কে অনেক কিছু উপস্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে একথা বলা যায় ওদের পেছনেও চামচা, চাটুকার, গডফাদার, নাটের গুরু, কমিশন ভোগী, নেপথ্য সহায়তাকারী ও কৃষ্ণকর্মকারদের কমতি নেই। তা না হলে এ শ্রেণীটা এমনিভাবে বছরের পর বছর এমন অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার ফুরসত (ঈড়ঁৎধমব) না পাওয়ারই কথা। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ওরা সব সময়ই কোনো না কোনোভাবে পিজিপিএস বা প্রেজেন্ট গর্ভনমেন্ট পার্টি সাপোর্টার বা কারও না কারও আশীবার্দপুষ্ট। তা না হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আপোষহীন দৃঢ়তা ও দুদকের দুর্নীতি বিরোধী ঘোষণার পরও তাদেরতো এমন সাহস থাকার কথা নয়।
ভূয়া ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, প্যাথলজি, নকল সর্বগ্রাসী ভেজাল ঔষধ, প্রতিহত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব থেকে পরিত্রান না মিললে মানুষের জীবন যেমন সংকটাপন্ন হয়ে যাবে তেমনি মান সম্মত ডাক্তার ও মানসম্মত ঔষধ নিয়ে জনজীবনে আতংক সৃষ্টি ও অনাগ্রহ সৃষ্টি হলে করার কিছু নাও থাকতে পারে। এ বিষয়ে তদারকি, নজরদারি ও দেখাশুনার জন্য প্রত্যেক জেলাতে সিভিল সার্জন, ঔষধ প্রশাসন বিভাগসহ আরও তদারকি পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়েও এসব তদারকির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুনজর, তদারকি ও কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় এসব সমস্যার সমাধান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যদি যথাযথ তদারকির কারণে এসব সমস্যার সমাধান না হয় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে শাস্তি আরোপ না করা হয়, তবে পরিস্থিতি এক সময় কোনদিকে গিয়ে ঠেঁকে ইহাই চিন্তা, ভাবনা ও দেখার বিষয়। ভেজাল ঔষধ যেমন বিষ (চড়রংড়হ) তেমনি ভূয়া ডাক্তার ও রোগীর জন্য সর্বনাশ। এমনও শুনা যায়, ভূয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় গরুর চিকিৎসার ঔষধ নাকি মানুষকে দেয়া হয়ে থাকে। ভূয়া ডেন্টিস্টের অপ চিকিৎসায় অনেকেরই দাঁতে মারাত্মক সংক্রামক এবং যথাযথ প্যাথলজি টেস্ট না হওয়াতে ভুল চিকিৎসায় সংকটাপন্ন অবস্থা ও নতুন রোগের উপশম বিস্তার লাভ করে থাকে। ভূয়া ডাক্তার, ভেজাল ও নকল ঔষধ থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি মানুষ মারার কারিগরদেরকে শাস্তির আওতায় এনে দুদকের হস্তক্ষেপও অনেকেই মনে করে থাকে। এছাড়া যে সমস্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে ভূয়া ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, প্যাথলজি, ভেজাল ও নকল ঔষধের বাণিজ্য চলছে তাদেরকে ছাড় না দিয়ে যথাযথ আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারেও অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে থাকে।
রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে এ ব্যাপারে তদারকি, নজরদারি ও অভিযান যথেষ্ট ফল বয়ে আনতে পারে বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত। মানুষ মারার কারিগর ও দানবদের রাহুগ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে না পারলে এক সময় হয়তো করার কিছু নাও থাকতে পারে। পরিশেষে রিচার্ড মেইলের ফ্রিডম এন্ড ডেমোক্রেসি বইয়ের লেখার উদ্ধৃতি টেনে বলব, স্বাধীন বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ যেমনি গণতন্ত্র অপহরণের শামিল তেমনি কোনো কারণে দুর্নীতি প্রতিহত করতে না পারাটাও সকল প্রকার অর্জন ও উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতারই নামান্তর। এসব কিছুর উত্তোরন ঘটিয়ে অর্জন, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিই জনপ্রত্যাশা। তদোপরি ৮ মার্চ রোববার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত বিশিষ্ট নিবন্ধক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এ.কে.এম শামসুদ্দিন “দুর্নীতি দমন কি শুধুই আইওয়াশ?” এ নিবন্ধে যা প্রতিফলিত হয়েছে, এটাকে সাধুবাদ জানাতে সংকোচ না থাকারই কথা। ব্রিটিশের ১৯৬ বছর, পাকিস্তানীদের ২৪ বছরের সৃষ্ট শাসন, প্রশাসন, আইন, বিচারসহ নানা সমস্যা স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও সমাধান হয়নি। দরকার- কথা নয় কাজে সুমহান স্বাধীনতার মূল্যায়ন, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও দিক ভ্রান্ত সমস্যার আশু সমাধান।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট