নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দকরা কোটি টাকা হরিলুটের ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন বিষয়টি উত্থাপন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়। এর আগে স্থানীয় সাংবাদিকরা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বৃহস্পতিবার বিষয়টি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীকে দায়ী করা হয়। আগে থেকেই বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তারা সমন্বয় কমিটির সভায় হাজির হননি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ২৪ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য প্রতিটিতে ২ লাখ টাকা করে মোট ৪৮ লাখ টাকা, রাজস্ব খাত থেকে ১৮ টি বিদ্যালয়ে বিবিধ মেরামতের জন্য মোট ২৭ লাখ টাকা এবং ৪৪ টি বিদ্যালয়ে রুটিন মেরামতের জন্য মোট ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এজন্য প্রয়োজনীয় এষ্টিমেট তৈরী করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবার পর উপজেলা প্রকৌশলী কাজ সম্পন্ন হবার ছাড়পত্র দেন।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, বিদ্যালয়গুলোর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোন মেরামত না করে ভবনে নামমাত্র রঙ করে প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরেজমিনে কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের স্থানে স্থানে ফাটল ও প্লাষ্টার খসে পড়লেও সেগুলোতে নতুন করে প্লাষ্টার না করেই শুধু রঙ করা হয়েছে।
উত্তরগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক জানান, বিদ্যালয় ভবনে তেমন কোন মেরামতের প্রয়োজন না থাকায় তিনি প্রকল্পের অর্থে ৩ টি দরজা ও টেবিল কিনেছেন। কিন্তু বাস্তবে এগুলো কেনার কোন প্রমাণ নেই। এমনকি নতুন দরজাও লাগানো হয়নি।
চকরাজা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রওশন আরা জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির নির্দেশ মত তিনি বিদ্যালয় ভবনে রঙ করেছেন। এটাকেই তিনি মেরামত বলে অভিহিত করেন।
বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের পুরনো কাজের উপরে হালকা রঙ করে সংস্কারের কাজ শেষ করা হয়েছে।
কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের ছাড়পত্র নিতে হয়েছে। এজন্য তাদেরকে নগদ টাকা দিতে হয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মাযহারুল ইসলাম অনৈতিক লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করে জানান, উপজেলা প্রকৌশলীর দেয়া ছাড়পত্রের ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।