ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া আক্তার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তার ভাল ধারণা নেই। পাঠ্য বই থেকে স্বাধীনতার মহান এ স্থপতির বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান অর্জন করলেও বলতে পারছে না। ভাল জানা নেই মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় চারনেতার ইতিহাস। বলতে পারেনি জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত। কিন্তু মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত নলেজ ক্যালেন্ডার এক নজর দেখে এ শিক্ষার্থী অনেক প্রশ্নের উত্তর জেনে গেছে। শুধু তাসফিয়া নয়, এ ধরণের অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াতে শুরু করেছে এ ‘নলেজ ক্যালেন্ডার’।
তরুণ প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হালিম। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় চারনেতা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বালবিবাহ নিরোধ আইন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য নিয়ে পৃথক পাঁচটি ‘নলেজ ক্যালেন্ডার’ (জ্ঞানপঞ্জি) প্রকাশ করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রকাশিত এসব ক্যালেন্ডার উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি বিতরণ করছেন।
শনিবার উপজেলার গোটগাড়ী শহীদ মামুন সরকারি হাইস্কুল ও কলেজ, মঞ্জিলতলা ও পারএনায়েতপুর সরকারি বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ জ্ঞানপঞ্জি বিতরণ করেন ইউএনও আবদুল হালিম। এ উপলক্ষে গোটগাড়ী শহীদ মামুন সরকারি হাইস্কুল ও কলেজের হলরুমে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ইউএনও আবদুল হালিম, উপজেলা রিসোর্স ইনস্ট্রাক্টর কায়ছার হাবীব, কলেজ অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম, সহকারি প্রধান শিক্ষক মাহফুজা খাতুন প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে ইউএনও আবদুল হালিম বলেন, ‘আদর্শ জাঁতি গঠনে সেই জাতির প্রকৃত ইতিহাস জানা দরকার। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের জাতীয় বীরদের সম্পর্কে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এসব জ্ঞানপঞ্জি প্রকাশ আমার ক্ষুদ্র একটা প্রয়াস। তারপরেও আমি মনে করি, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিষয় নিয়ে অল্প কিছু তথ্য নিয়ে জ্ঞানপঞ্জি প্রকাশ করা হলেও জ্ঞানপঞ্জিতে বারবার চোখ বুলিয়ে এসব তথ্য শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে গেঁথে যাবে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে পড়বে।’
ইউএনও আরও বলেন, গত ১০ মার্চ জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ উপজেলার মান্দা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে এই জ্ঞানপঞ্জি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব জ্ঞানপঞ্জি বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব জ্ঞানপঞ্জি পৌঁছে দেয়া হবে।
গোটগাড়ী শহীদ মামুন সরকারি হাইস্কুল ও কলেজ অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও স্যার কর্তৃক প্রকাশিত জ্ঞানপঞ্জি শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরী কক্ষে কিংবা শিক্ষার্থীদের পড়ার ঘরে এসব জ্ঞানপঞ্জি ঝুঁলিয়ে সেগুলোতে বারবার চোখে বুলালে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তাদের হৃদয়ে গেঁথে যাবে। এগুলো তারা আর সহজে ভুলবে না। এটি ইউএনও স্যারের একটি অনন্য উদ্যোগ। এ ধরণের জ্ঞানপঞ্জি বা নলেজ ক্যালেন্ডার শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা দরকার। প্রকৃত ইতিহাস জানার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করবে। এতে তারা আদর্শ দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে।’