ভূমিদস্যু এক মামা ও মামাতো ভাইয়ের কু-চক্রে রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার জিওল গ্রামের বাসিন্দা মুন্জুর রহমান নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি আপন মামা বর্গা নিয়ে টাকা ও জমি দুটোই বর্তমানে গ্রাস করেছেন। এই আলোচিত মামা পিয়ারবক্স জেলার মোহনপুর উপজেলার ভীমনগর গ্রামের বাসিন্দা। এনিয়ে সম্প্রতি মুনজুর রহমান বাদী হয়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ পুলিশ প্রধান, ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব-৫ ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত পৃথক অভিযোগ ডাকযোগে প্রেরণ করেছেন।
এর অনুলিপি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। এছাড়াও ভূমিদস্যু ও মামলাবাজ পিয়ারবক্সের হাত থেকে রক্ষা পেতে পুরো গ্রামের হাজারো মানুষ গ্রাম ঘিরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে উপজেলা প্রশাসনকে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন। অপরদিকে, ওই গ্রামের নির্যাতিত জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে আরেক অভিযোগ পিয়ারবক্স ও তার ছেলে আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ডাকযোগে পাঠিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, সম্পত্তির হিস্যামতে মুনজুর রহমান ও তার ভাইবোন মিলে মামা পিয়ারবক্সের নিকট নানা-নানীর অংশের সাড়ে ৩ বিঘা ভিটে মাটি পান। এসব ভিটে মাটি মামা পিয়ারবক্স বর্গা হিসেবে চাষাবাদ করে চুক্তি মোতাবেক প্রতিবছর টাকা দেন। কিন্তু চলতি বছরে কোন টাকা দেননি। অভিযোগে মুনজুর আরও জানান, মায়ের জমি-জমার অংশ ভূমিদস্যু মামা ও তার ছেলে মোহনপুর উপজেলার ধুরইড় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল আলম বর্গা নিয়ে জবর-দখল করছেন। বছর ঘুরে এলেও চুক্তি মোতাবেক এতোটুকু টাকা তাকে দেয়া হয়নি। বর্তমানে টাকা ও জমি দুটোই দিব দিচ্ছি বলে মামা পিয়ারবক্স প্রতরণা করে আসছেন। তিনি আরও জানান, মামা শুধু ভাগ্নেদের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষান্ত হননি। তার মামা নিজ গ্রামের প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের জমির ভূয়া দলিল দেখিয়ে অনেক জমি জবর-দখল করে আগলে রেখে আত্মসাৎ করছেন।
এদিকে, পিয়ারবক্সের বংশের সর্ম্পকের নাতী ভীমনগর গ্র্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সম্প্রতি প্রকাশ্যে লোক মাধ্যমে পিয়ারবক্স তার ক্ষেত থেকে শরিষা তুলে নেয়। এছাড়াও গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ১৫টি আমগাছ পিয়ারবক্স ও তার ছেলে আশরাফুল লোকজন দ্বারা জোরপূর্বক কেটে ফেলে। এ সময় থানা পুলিশ খরব পেয়ে গাছ আটকে দেয়। বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে এসব কেটে ফেলা গাছ। এত কিছুর পরও উল্টো মিথ্যে সাজানো ৩টি মামলায় জাহাঙ্গীরকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
মামলার বিবরণ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার জিওল গ্রামের কাউন্সিলর মুনজুর রহমানের (৪৮) মৃত মাতা হালেমা বিবিরি নিজ নামে রেকর্ডীয় সম্পত্তি জেলার পার্শ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলায় ভীমনগর মৌজায় ৩৮ শতক ভিটা মাটি রয়েছে। এছাড়াও মায়ের পিতার পৈত্রিক অংশে ভীমনগর ও বিলশিয়ালা মৌজায় খতিয়ানভুক্ত সাড়ে ৩ বিঘা ভিটে ও ধানী মাটি রয়েছে। এসব ভিটে-মাটি মৃত হালেমার ৫ পুত্রের কাছ থেকে অংশ মোতাবেক চুক্তি মতে বর্গা নেয় মোহনপুর উপজেলার ভীমনগর গ্রামের মামা পিয়ারবক্স (৬৫) ও তার পুত্র আশরাফুল আলম (৪২)। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমের ওই একই গ্রামে বাড়ি হওয়ার সুবাদে তার সম্পত্তি তিনি ভোগ-দখল করে আসছেন। বর্তমানে পিয়ারবক্স কু-বুদ্ধি রচনা করে ভীমনগর ও বিলশিয়ালা মৌজায় দুই একর ৬৮ শতক জাহাঙ্গীর আলমের জমি জবর দখলের চেষ্টায় রয়েছেন। ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসি বাহিনী দ্বারা বারেং বার হামলা করাও হচ্ছে।
এনিয়ে গ্রামবাসী সিরাজ উদ্দিন, হেরাজ উদ্দিন, সৈয়দ, তৈয়ব ও মাসুদা বিবি প্রতিবাদ করায় তাদের সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতে একাধিক মামলা করেন মামলাবাজ পিয়ারবক্স। সম্প্রতি গত শনিবার ১৩ই মার্চ রাত ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরের পুকুর পাহারাদার জাকারিয়া (৩৫) তার নিজ বাড়ি তানোরের বুরুজ গ্রামে আসছিলেন। পথের মধ্যে বাগবাজার মোড় নামক স্থানে জাকারিয়ার পথরোধ করে ঘিরে ধওে যুবলীগ নেতা আশরাফুল। এ সময় তাকে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দেবার জন্য চাপ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এতে তিনি রাজি না হলে তাকে হত্যার হুমকী দিয়ে পার্শ্বে সাইকেল ম্যাকারের দোকান থেকে হাতুড়ী নিয়ে হত্যার ভয় দেখানো হয়। বিষয়টি নিয়ে ওইদিন রাতেই আশরাফুলের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় জিডি করেন জাকারিয়া। যাহার- নম্বর ৬২০/২০।
অপরদিকে, জাহাঙ্গীরের মামা শ্বশুরের ছেলে মো. মিলন (৩০) তার সঙ্গে পুকুর দেখাশুনায় সময় দেন। এতে আশরাফুল ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাড়িতে গিয়ে শাসন-গর্জন করেন। তার মা-বাবাকে ডেকে হুশিয়ারি করে বলেন- দুয়েক মাসের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে সাইজ করে জীবনের মতো শিক্ষা দেয়া হবে। এ সময় আপনার ছেলে (মিলন) যদি থাকে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। সেও মারাত্নক সাইজ হয়ে যাবে। এঘটনাটি নিয়ে মিলন বাদী হয়ে ১৪ই মার্চ শনিবার দিবাগত রাতে মোহনপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যার নম্বর- ৬৫৪/২০।
এসব বিষয়ে পিয়ারবক্স বলেছেন, গ্রামের মানুষ আগে তার অনুগত ছিল। বর্তমানে আমার সম্পর্কের নাতি জাহাঙ্গীর আলম তার বিরুদ্ধে গ্রামের মানুষকে উসকে দিয়ে তার সম্পদ গ্রাসের চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়াও তার আপন ভাগ্নে তানোরের মুনজুরকে লেলিয়ে দিয়ে তার মায়ের ভাগের সম্পত্তি দখল করতে গ্রামের মানুষ সহায়তা করছে। পরিশেষে পিয়ারবক্স বলেন, বোনদের সম্পত্তি ক্রয় করে নিয়েছেন। এরপরও কিছু জমি দিতাম। কিন্তু এখন আমি সেচ্ছায় দেব না। আইনগত ভাবে পারলে নেবে বলে জানান পিয়ারবক্স। তবে, আশরাফুল আলম কোন মন্তব্য ছাড়াই বলেছেন, পিতা পিয়ারবক্স যেটা বলেছে সেটাই তার মন্তব্য বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে মোহনপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেছেন, পুরো গ্রামের মানুষ পিয়ারবক্সের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বিষয়টি জমি-জমা সংক্রান্ত। এরপরও পুলিশ আইন-শৃংখলার রক্ষার্থে উভয়পক্ষকে সর্তক করেছে। যাতে করে নতুন কোন ঘটনা যেন না ঘটে বলে জানান ওসি।