লক্ষ্মীপুরে মজু চৌধুরীর হাটে কোটি টাকার অপরিকল্পিতভাবে বালু স্তপের কারণে জলাবদ্ধতার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তিন শতাধিক পরিবার। ইতোমধ্যে সেই পানিতে ডুবে ২শিশুর মৃত্যুসহ মারাগেছে কয়েক হাজার দাবী গাছ। আর পানিতে ভর্তি ক্ষতিকরের কথা বালু মহল মালিকদের জানাতে গিয়েই শিকার হতে হয়েছে নানা প্রকার হুমকী ধমকীসহ মারধরের ঘটনারও। দেশটি ছয়টি ঋতুর দেশ হলেও পুরো বছরেই পানির কারণে দেখা দিয়েছে বর্ষাকাল। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন, কেউ ব্যবসা করে কোটি টাকা লাভ হবে আর অন্যান্যের ক্ষতি হবে তা হতে পারেনা। আর নিয়ম অনুযাযী কাজ না করলে বালু ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের মজু চৌধুরীর হাটের এ রুটের পার্শ্বে বালু মহল ঘোষনা করা না হলেও দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে চলছে কোটি কোটি টাকার বালু ব্যাবসা। বছরে ছয়টি ঋতু হলেও বালুর মাঠগুলো জনবসতি এলাকার ভেতর গড়ে উঠায় বর্ষা এবং শীত মৌসুমে জলাবদ্ধতায় কাটাতে হয় ওই এলাকার পরিবার গুলোকে। ইতে মধ্যে বালু মাঠের পানিতে ডুবে মারা যায় আলমগীরের মেয়ে আঁখি(৩)সহ আরো দুই শিশু। পানি বন্দীতে মানবেতর জীবন যাপন ২ শতাধিক পরিবার।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ও এলাকাবাসী জানায়, তারা বালু ব্যাবসায়ীদের বালু থেকে উপছেপড়া পানির কারণে সারা বছর জলাবদ্ধতায় থাকতে হয়। বালু মহল মালিকদের পানিতে ভর্তি ক্ষতিকরের কথা জানাতে গিয়েই সহ্য করতে হয় নানা প্রকার হুমকী ধমকী। এদিকে এসব ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।
বালু পানির জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ বাহার আলী সিকদার জানান, বালু ব্যাবসায়ী আফজাল হোসেন দীর্ঘদিন যাবত প্রশাসের কয়েকটি দপ্তরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে এ বালুর ব্যাবসা চালিয়ে আসছে। পানিতে ভর্তি ক্ষতিকরের কথা জানাতে গিয়েই সহ্য করতে হয় নানা প্রকার হুমকী ধমকীও। অপরিকল্পিতভাবে বালু রাখায় পুকুর গুলো থাকে সারা বছর পানিতে ভর্তি হয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে রান্নাঘরও। এ কারণে বাড়ীতে পানি উঠে জ্বলছেনা রান্না ঘরের চুলা।
স্থানীয় আলমগীর হোসেনের জানান, সারা বছর তাদের রান্না ঘরেও পানি জমে থাকে। জলাবদ্ধতার পানিতে ডুবে গত ২বছরে ২ শিশু সন্তানসহ মারাগেছে তিন শতাধিক গাছপালা।
মৃত মন্তাজ মিয়ার স্ত্রী বৃদ্ধা মাজিয়া খাতুন (৮০) জানান, বালু পড়ে নষ্ট হচ্ছে ঘরের আসবাবপত্র,মূল্যমান জিনিস,বিছানাপত্র এ ছাড়া উড়ন্ত বালুতে তাদের খাবার ঠিকমত খেতে পাচ্ছেনা। এসব ঘটনা দেখা গিয়ে বালু ব্যবসায়ী আফজালের লোকজন তাকেসহ তাদেও পরিবারের লোকজনকে হুমকী-ধমকীসহ মারধরের শিকার কয়েকবার। তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ স্বীকার করে বালু মহলের মালিক ব্যাবসায়ী আফজাল হোসেন জানান,সনসাধারনের দুর্ভোগ তারা ইচ্ছে করে করছেন না। কেউ তাদের সাথে শত্রুতা করেই করে বালু মহলের পানি চলাচলে ড্রেন কেটে শত্রুতা বাড়িয়ে তুলছে। এ ছাড়া স্থানীয়দের হুমকি ধমকি কটা ঠিক নয়। তারা বাড়িয়ে কথা বলছেন। এ ছাড়া সরকারি আইন কানুন মেনে বৈধভাবে ব্যবসা করছেন তিনি।
চররমনী মোহন ইউপির চেয়ারম্যান মো: ইউছুফ ছৈয়াল জানান, প্রতিদিন যাত্রী ও মালামাল নিয়ে নৌ রুটে যাতায়েতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মেঘনা উপকুলীয় এলাকা মজু চৌধুরীর হাট এলাকা হয়ে চলাচল করছে সি ট্রাক ও লঞ্চসহ চারটি ফেরী দিয়ে লক্ষ্মীপুর-ভোলা,বরিশাল,চট্রগ্রাম,সিলেট,খুলনা বিভাগেরসহ চলাচল করছে ২১ জেলার মানুষ।আর এলাকায় বালুভর্তি গাড়ী আটকে ও সড়কের পার্শ্বে বালূ রাখায় লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের মজু চৌধুরীর হাটে প্রাই লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। অবৈধ বালু পারিবহনে ভারী যানবাহন চলাচলে ডেবে গিয়ে অনুপযোগী হয়ে সড়কগুলো। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুর রেদোয়ান আরমান শাকিল জানান, মজু চৌধুরীর হাটে বালু তুলে সেই বালুস্তুপ থেকে পানি গিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষতিকরা হচ্ছে সে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তদন্তে গিয়ে বালু ব্যাবসায়ী আফজালকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ম্যানাজারকে বালুর পানি সরার জন্য ড্রেন ও নালা তৈরি ব্যবস্থা করার জন্য জানানো হয়েছে। এর পরও যদি আবার একই অভিযোগ পাওয়া যায় তা হলে অপরিকল্পিতভাবে বালু স্তুপের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।