করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বরিশালে বিভাগে ১৯৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। যারমধ্যে গত ২৪ ঘন্টার হিসেবে ১০৪ জন নতুন এবং ৯০ জন পুরাতন।
বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১৯৪ জনের অধিকাংশই প্রবাসী। যারমধ্যে বরিশাল ও বরগুনায় দুইজন হাসপাতালে রয়েছেন। তবে বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত কারো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সহকারি পরিচালক বলেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা লোকজনদের পর্যবেক্ষণ করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মী। পাশাপাশি এদের সবাইকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার কাজে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সহায়তা করছে। আমরা ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ে আমাদের সার্সিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে বরিশাল বিভাগে আট হাজারের বেশি প্রবাসী বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। এরমধ্যে মাত্র ১৯৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় জনমনে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, তারা মাঠপর্যায় থেকে বিদেশ ফেরত তিন হাজার আট’শ প্রবাসীর সন্ধান পেয়েছেন। এতে করে হাজারের উপরে হোম হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার থাকার কথা। এ ক্ষেত্রে কেউবা জন্মভিটার ঠিকানা দিলেও শহরে বা অন্য কোথায়ও অবস্থান করায় তাদের খুঁজে বের করায় সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মী ও প্রশাসন কাজ করছেন। তবে যাদের বেলায় ১৪দিন পার হয়েছে তাদের এই হোম কোয়ারেন্টেনে রাখা হবে না বলে জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, জেলায় বিদেশ ফেরত আসাদের মধ্যে ইতালী, মালয়েশিয়া, চীন ও কোরিয়া থেকে আসা প্রবাসীর সংখ্যা বেশী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকেই জনসাধারণের চলাচল ও হাসপাতালগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে শুরু হয়েছে তৎপরতা। তবে বরিশাল বিভাগে কতোজন বিদেশ থেকে ফিরেছেন আর তাদের কতোজন বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বিদেশ ফেরত ১৯৪ ব্যক্তি। তবে ঠিক কতোজন প্রবাস থেকে ফিরেছেন, তার সঠিক হিসেব এখনো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। ফলে শনাক্ত করে তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আনার উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছেনা।
সিভিল সার্জনদের কাছে থাকা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্যে জানা গেছে, চলতি মাসে এ বিভাগে আট হাজারেরও অধিক প্রবাসী বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, দেশে ফিরে আসা একটি বিরাট অংশের প্রবাসী এখনো হোম কোয়ারেন্টাইনের বাইরে রয়েছেন। এতে সারাদেশে করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সিভিল সার্জনদের সাথে বুধবার দুপুরে কথা বলে জানা গেছে, তারা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে স্থানীয়ভাবে বিদেশ ফেরতদের একটি তালিকা পেয়েছেন। তাতে ছয় জেলায় বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংখ্যা আট হাজার ১০৬ জন। এরমধ্যে বরিশালে তিন হাজার, বরগুনায় আটশ’, পিরোজপুরে এক হাজার পাঁচ’শ, ভোলায় এক হাজার তিনশ’, পটুয়াখালীতে এক হাজার একশ’ ও ঝালকাঠিতে ৪০৬ জন। ছয় জেলার সিভিল সার্জনরা বলছেন, যেসব প্রবাসীরা দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে আসেননি, ঢাকায় বা অন্যান্যস্থানে অবস্থান করছেন, তাদের শনাক্ত করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের এ কাজে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
সনাকের জেলা সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। যতদ্রুত সম্ভব প্রবাসীদের শনাক্ত করতে মাঠে নামতে হবে এবং এদের হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনতে হবে। সময়ক্ষেপণ মানেই ঝুঁকি বাড়ানো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।