সম্প্রতি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন নারিকেল গাছের পাতা করোনা ভাইরাসের কারণে সাদা হয়ে যাচ্ছে, এটা একটা গুজব। এটা সাদা মাছি পোকার আক্রমন। এটা নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে জনমনে কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। এই কথা গুলো গতকাল বলছিলেন ফকিরহাট উপজেলা কৃৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রথমেই জানাই আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। গ্রামবাসীরা প্রথমে মনে করতেন, বকের বিষ্ঠা! বিগত এক বছর ধরে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে ছড়িয়েছে এই সমস্যা। ইদানীং করোনা ভাইরাস-আতঙ্কে মানুষের নজর নারকেল গাছে। রাতে তোলা নারকেল ছবি ভাইরাল হচ্ছে। কালো রাতের আঁধারে সাদা দাগ; মানুষকে এক ভয়ের পরিবেশ রচনা করিয়ে দিচ্ছে। পূর্বে ডাব ও নারকেলের গায়ে একরকম নোংরা দাগ হতে শুরু করেছিলো, কৃষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলো, তা মোবাইল-তরঙ্গের কারণে হচ্ছে। কিন্তু তা তো নয়! ওটা হচ্ছে কচি ডাব-নারকেলে মাকড়ের আক্রমণের লক্ষণ, পরে বড় ফলে তার প্রকাশ।
এবার মানুষ মনে করছেন, নারকেল সহ অন্যান্য ফলগাছ যেমন কলা, আম, কাঁঠালের পাতায় সাদা হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হল করোনা ভাইরাস। কিন্তু আদৌ তা নয়, নারকেল পাতায় এটি সংঘটিত হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র সাদা মাছির আক্রমণে। মাছি বললেও তা কিন্তু সাধারণ মাছির অর্ডার ডিপ্টেরা অন্তর্ভুক্ত নয়, তার গোত্র এবং পরিবার। ২০১৬ সালে এই মাছিকে কেরালার নারকেল বাগানে প্রথম দেখা যায়। এর আদি নিবাস অবশ্য ভারতবর্ষ নয়, মধ্য আমেরিকার ইবষরুব থেকে তা সম্ভবত কোনোভাবে ভারতবর্ষে এসেছে। এই পোকার অসংখ্য কলোনি পাতার রস চুষে খায়, তাতে গাছের পুষ্টি ও জল বহুল পরিমাণে বেরিয়ে গিয়ে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। অধিকন্তু দেখা যায়, এরা যতটা না চুষে খায়, তার বেশি শোষণ করে এবং অতিরিক্ত রস শারীরবৃত্তীয় ভাবে মধুবিন্দু বা আকারে দেহের বর্জ্য-অঙ্গ দিয়ে বের করে দেয়। এইভাবে বেরিয়ে আসা মধুবিন্দুতে ধেয়ে আসে ছত্রাক, তা পাতাকে সূর্যালোক প্রবেশে বাধা দেয়। গাছ সালোকসংশ্লেষ করতে পারে না, গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতিকারের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন এটি স্পাইরালিং হুয়াইট ফ্লাই (সাদামাছি)। বর্তমানে সারাবিশ্বে পাম জাতীয় (নারকেল) ফসলের মুল সমস্যা। জৈবিক উপায়ে দমন : হলুদ রঙের ফাঁদ ব্যবহার। আক্রমণ বেশী হলে যে কোন অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার। আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার/কনফিডর/ইমিটাফ অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।