কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর ঘেষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে বালুদস্যু একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বালু তুলে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছে। স্থানীয় লোকজন বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলেও তা মানছে না চক্রটি। ফলে ওই ইউনিয়নের কয়েক‘শ একর আবাদি জমি,ঘর-বাড়ি, সরকারী-বে সরকারী স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষায় ভাঙ্গন ঠেকাতে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পালের ভিটা নামক স্থানে আপদকালীন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেন। কিন্তু শুকনো মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় ওই জায়গার পাশেই বালু জমে চর জেগে উঠে। সে চরে নজর পড়ে বালু খেকোদের। এরা কাউকে তোয়াক্কা না করে নির্বিঘেœ ট্রাক্টর দিয়ে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন করে আসছেন। বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার পালেরভিটা, মাঝিপাড়া,হাতিয়াগ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর, আবাদি জমি শিক্ষা প্রতিষ্টান, মসজিদ ও হাতিয়া ইউপি ভবন ভাঙ্গনের শিকার হবেন বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে বালু খেকো সিন্ডিকেট চক্রটি শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে নিয়মিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বছরের পর বছর অবাধে বালু উত্তোলন করে আসছেন।
এদিকে, অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ পাল্টে যাওয়াসহ যেমন জীব বৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাউবোর তীর রক্ষা বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করে নদীর ডান তীর ঘেষে পালের ভিটা নামক স্থানে বালুর স্তÍুপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি ট্রাক্টর বালু ভর্তি করে জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও পাউবো‘র আপদকালীন প্রকল্পের পাশে জেগে উঠা চর খুঁড়ে একের পর এক ট্রাক্টর দিয়ে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কয়েকজন স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, অবৈধভাবে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর ঘেষে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে আমরা বাঁধা দেই, কিন্তু তারা শোনেনি। তাছাড়া সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েকটি ট্রাক্টর নিয়মিত যাতায়াত করছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। শিশু ও বয়ষ্ক লোকদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে ঘর-বাড়ি আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাবে। দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। তবে এর আগেও তিনি এমন আশ্বাস দিলেও কার্যকারী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি।