হঠাৎ করেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরণের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর পাশাপাশি বাজারে উর্ধ্বমূল্যের দিকেও নজর দেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। শুক্রবার (২০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক সভায় এ আহবান জানান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ পেশাজীবীরা।
বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সভায় উপস্থিত নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা, জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ (পিপিএম বার) প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কামনা করেন সবাই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাফিজ খান মিলন বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) থেকে হঠাৎ করেই কাঁচামালসহ সব ধরণের পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যে পণ্য ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, আজ তা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য সমর্থন করে সভায় উপস্থিত বিভিন্ন পেশার মানুষ দ্রুতই বাজারের উর্ধ্বমুখী দর নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা বলেন, করোনাভাইরাসের অজুহাতে কোনো ভাবেই নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেনে যায় না।
এদিকে শহরের রূপগঞ্জ, পুরাতন বাসটার্মিনাল বাজারসহ জেলার বিভিন্ন বাজারের খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বাজারে সব ধরণের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর মধ্যে প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার পেয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ২০ টাকার পরিবর্তে ২৫ থেকে ৩০টাকা, ৪০ টাকার চাল ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো বাজারে চাল, ডাল, কাঁচা তরকারি ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। সরবরাহ নেই বলে ক্রেতাদের জানিয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা। আরো দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকে বাড়তি দামেই বেশি করে চাল, ডাল, তেলসহ কাঁচাতরকারি কিনে নিচ্ছেন। প্রতিটি পণ্যে পাঁচ থেকে দশ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি দাম লক্ষ্য করা গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, যারা নিত্যপণ্যের দাম বেশি নিচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। জনভোগান্তি কঠোরভাবে দমন করা হবে। আজ থেকেই মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এবং নিয়ম কানুন মেনে চলতে বিভিন্ন এলাকায় কমিটি গঠন, মাইকিং, বিদেশফেরত মানুষের যত্রতত্র চলাফেরা ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত, চিকিৎসাসেবাসহ সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, যেসব কারণে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে, তা যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে। প্রথমে জনসাধারণকে এর ক্ষতিকর দিক বোঝাতে হবে। তারপরও যদি কেউ করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন মেনে না চলেন, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আর নড়াইলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উপকরণসহ কিটস সহজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, সিভিল সার্জন ডাক্তার আবদুল মোমেন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবদুস শাকুর, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাক্তার মশিউর রহমান বাবু ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত নড়াইলে হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা ১০৯ জন। বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা ছিল ৭২। এর মধ্যে প্রবাসীরাই বেশি। করোনায় আক্রান্তদের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে ১০টি, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি করে বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে হাসপাতালে ভর্তির মতো পরিস্থিতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাক্তার মশিউর রহমান বাবু।
এদিকে, করোনাভাইরাসের ব্যাপারে আতঙ্কিত না হতে এবং জনসচেনতা সৃষ্টিতে গত ১৭ মার্চ থেকে শুক্রবার (২০ মার্চ) পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছুটে গেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপি। এরইমধ্যে নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি দেখেছেন তিনি। এ ছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অংশগ্রহণে সচেতনমূলক সভা করেছেন মাশরাফি।