“ গনতন্ত্রের সিংহপুরুষ ”শিরোনাম দেখে অনেকেই হয়ত ভাবছেন গনতন্ত্রের সিংহপুরূষ আবার কে ? আজ আমি যে নেতাকে নিয়ে লিখতে বসেছি তিনি ৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারির বিরুদ্বে আন্দোলন, ৬২সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনে, ৬৯ য়ের গন অর্ভুথ্রানে, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধি আন্দোলনে, এবং সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা সাড়ে তিন বছর সহ মোট ১৪ বছর কারাবরন করেছেন। তিনি হচ্ছেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব ,মুক্তিযুদ্বের অন্যতম সংগঠক ও সারেক মন্ত্রী এক কালের কিংবদন্তী ছাত্রনেতা কে এম ওবায়দ্রু রহমান। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ কে এম ওবায়দুর রহমান ১৯৪০ সালের ৫ মে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা ্উপজেলার লস্করদিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম কে এম আতিকুর রহমান এবং মাতা মরহুমা রাবেয়া রহমান। তিনি ১৯৫২ সালে নগরকান্দা এম এন একাডেমীর ছাত্র থাকা অব¯হায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে এম এন একাডেমি থেকে মেট্রিক পাস করে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পুর্ব পাকি¯হান ছাত্রলীগের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৫৭-৫৮ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২-৬৩ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদের জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে এম ্এ পাস করেন। ১৯৬৬-৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পুর্ব পাকিস্থান আওয়ামী লীগের সমাজকল্যান সম্পাদক ছিলেন।
মাত্র ৩০ বছর বয়সে ১৯৭০ সালে তিনি পাকি¯হান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পরে ফরিদপুরের নগরকান্দা থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৭০ ও ৭৩ সালের নির্বাচনে যে তিনজন ( বঙ্গবন্দ্বু শেখ মুজিবুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান ও তোফায়েল আহমেদ ) নেতা বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত হন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাংলার নেলসন ম্যান্ডেলা কে এম ওবায়দুর রহমান। মুক্তিযুদ্বের অন্যতম সংগঠক হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ছিল গৌরবোজ্জল ভুমিকা। মুক্তিযুদ্ব চলাকালে তিনি ভারতে আগত বাংলাদেশী উদ্বা¯হদের জন্য ¯হাপিত ক্যাম্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এখানে ব্যব¯হাপনাসহ সার্বিক দাযিত্ব সূচারুরূপে পালনের জন্য তৎকালীন ভারত সরকার ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বীকৃতিস্বরুপ পুরুস্কৃত করেন। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ডাক, তার ও টেেিলাগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রনালয় এবং পরে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠায় ও বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহযোগী হিসেবে তিনি গুরুত্বপুনৃ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করেন।
কে এম ওবায়দুর রহমান প্রজ্ঞায়, বাগ্নিতায় ,ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় ছিলেন বরেণ্য জননেতাদের একজন। জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি তিনি নিজ এলাকার উন্নয়নেও বিশাল অবদান রেখে গেছেন। যা তাকে ফরিদপুরের নগরকান্দা- সালথায় নন্দিত জননেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিহিংসার কবলে পড়ে কারাগারে বন্দী থেকেও ২০০১ সালের নর্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। একজন সফল জননেতার সকল বৈশিষ্ট্য ছিল তার। তার রাজনীতির মুল লক্ষ্য ছিল দেশ ও জাতির কল্যান। তাই নিজের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে দেশের কল্যাণেকাজ কাজ করে গেছেন। ব্যক্তিগত লোভ - লালসা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। নেতা-কর্মীদের সহজেই আপন করে নেয়ার এক অসাধারণ গুন ছিল তার। চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্য তাকে সহকমীৃদের একান্ত আপনজনে পরিনত করেছিল
কে এম ওবায়দুর রহমান ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ পার্লামেন্টিরিয়ান। জাতীয় সংসদে তার দেয়া বক্তৃতাসমুহ এর প্রমান। যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের বক্তব্য খন্ডন এবং নিজের বক্তব্যের যথার্থতা প্রমানে তিনি ছিলেন চৌকষ। তার বাক্যবানে প্রতিপক্ষ ধরাশায়ী হতো সহজেই । কিন্তু সে বক্তব্যে থাকতো না কোন শ্লেষ, থাকতো না কোনো ব্যক্তিগত আক্রমন। আর সে জন্য কে এম ওবায়দুর রহমানের বক্তৃতায় সংসদ হয়ে উঠত প্রানবন্ত। ২০০২ সালের ৮ম জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষনের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য বক্তব্য রাখার সময় বিশিস্ট পার্লামেন্টারিয়ান কে এম ওবায়দুর রহমান বলেছিলেন “ মাননীয় স্পীকার আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি আমি তিন তিনবার মন্ত্রী হয়েছি, আমি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হয়েছি তা নিয়ে আমি গর্ব করি না আমি গর্ব করি আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা কারণ ভাগ্যে থাকলে নতুন করে দেশের রাস্ট্রপতি হওয়া যাবে, প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে কিন্তু নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যাবে না ”। তার নির্বাচনী এলাকা নগরকান্দা- সালথা তথা ফরিদপুরের উন্নয়নে তার অসামান্য অবদানের কথা চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, নদী গবেষনা ইনষ্টিটিউট, কৃষি কলেজ, তালমা মোড় ডেইরী ফার্ম, সালথাবাসীর প্রানের দাবী সালথা উপজেলা বাস্তবায়ন, নগরকান্দা কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার অগ্রনী ভুমিকা ছিল।
কে এম ওবায়দুর রহমান দেশের স্বাধীনতা - ও গনতন্তের জন্য প্রায় ১৪ বছর কারাবরন করেছেন। দেশের মাটি ও মানুষের জন্য তার এই ত্যাগের জন্য দেশবাসী ইচ্ছে করলেও তাকে আর কোন রাষ্টীয় পদে বসাতে পারবেনা কারুন এই মহান নেতা ২০০৭ সালের ২১ মার্চ আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যেহেতু এই মহান নেতা গনতন্তের জন্য . স্বাধীনতার জন্য, এ দেশের মাটি ও মানুষের জন্য প্রায় ১৪ বছর কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। তাই এই সংগ্রামী মহান নেতাকে দেশবাসী গনতন্ত্রের সিংহপুরুষ ্ উপাধিতে ভুষিত করতে পারে। কে এম ওবায়দুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।
ফিচার লেখক ঃ সভাপতি কে এম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি পরিষদ, ও নগরকান্দা উপজেলা প্রেসক্লাব