লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় নির্মান কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে পড়েছে দুর্যোগ সহনীয় বসতবাড়ির ঘরের দেয়াল। এ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, জমি আছে ঘর নেই। এমন দুস্থ ও হতদরিদ্রদের মাঝে দুর্যোগ সহনীয় বসতবাড়ি নির্মানের উদ্যোগ নেয় সরকারের ত্রাণ মন্ত্রনালয়। দুই কক্ষ, রান্না ও বার্থরুমসহ করিডোর বিশিষ্ট প্রতিটি বাড়ির বিপরীতে দুই লাখ ৯৯হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে হতদরিদ্র এবং যারা ১০শতাংশের নিচে জমির মালিক। যাদের থাকার ঘর নেই। এমন জনগোষ্ঠিকে বাড়ি নির্মানের লক্ষে সারা দেশের ন্যায় আদিতমারী উপজেলায় প্রকল্প গ্রহন করা হয়। এসব প্রকল্পের তালিকা তথা সুবিধাভোগি নির্বাচন করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। এতেও রয়েছে নানান ধরনের অনিয়ম, ঘুষ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতি।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি ঈদগা মাঠ এলাকার মৃত সহিদার রহমানের স্ত্রী রোজেয়া বেওয়াকে দুর্যোগ সহনীয় বসতবাড়ি নির্মান করতে একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দে নাম চুড়ান্ত করতে সুবিধাভোগি একেক জনকে গুনতে হয়েছে ৬০ হাজার করে টাকা। ঘরের নির্মান শুরু হলে, শ্রমিকদের খাওয়ানো, বালু ও রড ক্রয় করতে হয়েছে সুবিধাভোগিকে। যদিও সরকারী ভাবে সকল খরচ বহন করতে বরাদ্ধ নিয়েছেন প্রকল্প চেয়ারম্যান শওকত আলী। এত কিছুর পরেও কাজ হচ্ছে দায়সারা গোচের। ফলে নির্মান শেষ না হতে ভেঙ্গে পড়ছে ঘরের দেয়াল। নিলটন পর্যন্ত ইটের কাজ শেষ করে নিলটন তৈরীর আগেই বৃহস্পতিবার(১৯ মার্চ) বিকেলে এ বাড়ির দেয়াল হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছেন বাড়ির মালিক রোজেয়া বেওয়া।
তিনি বলেন, টাকা ছাড়া ঘরের তালিকায় নাম দেন না চেয়ারম্যান শওকত আলী। নাম চুড়ান্ত করতে মন্ত্রী ও উপজেলা অফিসের কথা বলে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এরপরও শ্রমিকদের প্রতিদিন খাওয়াতে হয়, বালু ও রড কিনে দিতে হয়েছে। পিলার দেয়া হয়েছে দেয়ালের চার ভাগের একভাগ অংশে, সামান্য সিমেন্টে বালু মেশানো হয়। কাজের মান নিয়ে প্রকল্প সভাপতিকে বার বার অভিযোগ করেও কোন সুফল মেলেনি। ফলে নিলটন না দিতেই দেয়াল ভেঙ্গে মাটিতে পড়েছে। নি¤œমানের কাজটি বন্ধ করতে বলেও কোন কাজ হয়নি। বাড়ি নির্মানের পর এ ঘরে বসবাস করলে নির্ঘাত ইট পড়ে মরতে হবে। নি¤œমানের কাজের ঘর ভেঙ্গে নতুন করে নির্মান করতে ঊর্দ্ধতনমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির রাজা পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীর বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যরাও কয়েক দফায় অভিযোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দফতরে। এ চেয়ারম্যান টাকার বিনিময়ে দুর্যোগের ঘরগুলো বরাদ্দ দিচ্ছেন। এরপরেও কাজ করছেন নি¤œমানের। ফলে দুর্যোগ সহনীয় ঘরই দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়েছে। এমনভাবে নির্মিত এসব ঘরে বসবাস করা অত্যান্ত ঝুঁকিপুর্ন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বসতবাড়ি নির্মান প্রকল্পের সভাপতি পলাশী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, দেয়াল ভেঙ্গে পড়লেও কাজ নি¤œমানের হয়নি। ভাঙ্গা অংশ মেরামত করে দেয়া হবে। সরকার যেভাবে এসব বাড়ি নির্মান করতে বলেছেন, সেভাবেই করা হয়েছে। নাম তালিকাভুক্ত করতে কোন টাকা নেয়া হয়নি। এলাকায় মন্ত্রীর কিছু লোক আছেন। যারা মন্ত্রীর সাথে আমার দুরত্ব তৈরী করতে এমন অভিযোগ করাচ্ছেন।
আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, নির্মান কাজ শেষ না হতেই দেয়াল ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।