শ্যামনগর উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সামগ্রী (এম এস আর সামগ্রী) ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে বড় ধরনের অস্বচ্ছতার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে দরপত্র আহবান থেকে শুরু করে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয় সংক্রান্ত নির্দেশনায় অত্যন্ত কৌঁসুলি পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং তার ঘনিষ্ঠ এক নারী পরিসংখ্যানবিদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ। জানা গেছে দীর্ঘ দিনের পুরাতন ঐ সিন্ডিকেটের সদস্য জনৈক এমটিপিআই সম্প্রতি অন্যত্র বদলী হয়েও পর্দার আড়ালে থেকে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পৌনে কোটি টাকার সামগ্রী ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় তদারকি করছে। দীর্ঘদিন চাকুরী শেষে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মচারীও (সিন্ডিকেট সদস্য) আলোচিত এ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য ২০১৯/২০২০ অর্থ বছরে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ৭৫ লাখ টাকার এম এস আর সামগ্রী ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ এমন সামগ্রী ক্রয়ের বিষয়টি সিভিল সার্জনের দপ্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন হলেও বিশেষ কারণে এবারই প্রথম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার দপ্তর দায়িত্ব পায়।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে ব্যাংক স্থিতি প্রদর্শনের সময় নির্দিষ্ট করে দেয়াসহ বিজ্ঞপ্তিতে নানা অস্বচ্ছতার আশ্রয় নেয়া হয়েছ্।ে একইভাবে সরকারি টাকা লোপাট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য কোম্পানী/প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট না করে দিয়ে কম মুল্যের সামগ্রী সরবরাহের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটির গুরুত্বপুর্ন উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদকে অন্ধকারে রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ পর্যায়ক্রমে ট্রেন্ডার সম্পন্নের যাবতীয় কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সিডিউল ক্রয়, দাখিলসহ দরপত্র খোলার দিনক্ষন উল্লেখ করা হলেও হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়া বিজ্ঞপ্তির কাগজে কৌশলে ঐসব দিন তারিখ এড়িয়ে যাওযা হয়েছে। ফলে ্ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পৌনে কোটি টাকার চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের সিডিউল ক্রয়সহ জমাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহনের সুযোগ হারিয়েছে।
প্রত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ২২ মার্চ দরপত্র খোলার ঘোষনা থাকা সত্ত্বেও ২১ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে দিন তারিখের অস্থিত্ত্ব না থাকা টাইপকৃত বিজ্ঞপ্তি ঝুলতে দেখা যায়।
একইভাবে সিডিউল ক্রয়, জমাদানসহ দরপত্র খোলার সময় পর্যন্ত আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক স্থিতি থাকার বিধান থাকলেও বিজ্ঞপ্তিতে তা খুব কৌশলে লংঘন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে ২৮ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সিডিউল ক্রয়, দাখিলসহ দরপত্র খোলার জন্য ২১ ও ২২ মার্চ নির্ধারন করা হলেও ব্যাংক স্থিতির সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয় ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।
অভিযোগ পুর্ব নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতেই অতি কৌশলে খুবই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা এমন কান্ড ঘটিয়েছে।
উল্লেখ্য টেন্ডার বা দরপত্রে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানকে ন্যুনতম কার্যাদেশ প্রাপ্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতি দেখানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেটের নীলনকশা অনুযায়ী এতদসংক্রান্ত বিষয়টি খুবই কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দরপত্র জমা এবং খোলার অনেক আগের একটি সময়কে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে স্পষ্ট হওয়া গেছে আহবান করা দরপত্রে বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ এবং সরঞ্জামাদীর বর্ননা দেয়া হলেও কোন নির্দিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে একই গ্রুপের হলেও ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানীর ঔষধের মুল্যে বিস্তর তারতম্য হয়ে থাকে। দরপত্রে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করার মাধ্যমে মুলত উচ্চ মুল্যের ঔষধের পরিবর্তে কম দামী ওষুধ সরবরাহের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য ঐ নারী পরিসংখ্যানবিদ এবং সম্প্রতি অন্যত্র বদলী হওয়া এমটিপিআই এর সমন্বিত অপতৎপরতায় শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মুলত দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগসুত্র থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অজয় সাহা বলেন বিশেষ কারনবশত সিডিউল ক্রয়সহ দরপত্র জমাদানের সময় আট দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক স্থিতির বিষয়টি “ভুলবশত” হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাউকে বিশেষ সুবিধা দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ভুল করা হয়নি।