করোনা ভাইরাসে দুইজনের মৃত্যু ও ২৭ জনের আক্রান্তের পর দেশজুড়ে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে জনসমাগম থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে রোববার জনসমাগম ঘটিয়ে কৃষি ব্যাংকের পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর বন্দর শাখায় সরকারি বিভিন্ন ভাতা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চেক বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
রোববার সাড়ে ১২ টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষি ব্যাংকের সামনে মানুষের ভীড়। ব্যাংকের ফটক (গেট) এবং সড়কে অন্তত দুই শ’ নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে আছে। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের কেউ বয়স্ক ভাতা, কেউ বিধবা ভাতা, কেউবা প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে এসেছে। ধাক্কাধাক্কি করে কে কার আগে ভাতা তুলবে, সেই চেষ্টা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে এখন বিশ্ব কাঁপছে। অথচ মানুষ জড়ো করে এভাবে ভাতা বিতরণ করা ঠিক হয়নি।
জানা গেছে, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা এ উপজেলায় ১৮ হাজার। নিয়মানুযায়ী তিন মাস পরপর তাদের মধ্যে ভাতা বিতরণের কথা। কিন্তু গতবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসের বয়স্ক ও বিধবা এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসের ভাতা বিতরণে চরম বিড়ম্বনা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভাতা বিতরণে এ বিড়ম্বনা হয়।
এদিকে, রোববার থেকে ভাতাদি বিতরণ শুরু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুরুর দিন রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাতাভোগীদের টাকা উত্তোলনের জন্য আসতে বলা হয়। ভাতা নিতে আসা সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, ওইসব ওয়ার্ডের ভাতাভোগীদের প্রায় তিন শ’ চেক সংশ্লিষ্ট মহিলা ইউপি সদস্য কল্পনা বেগমের হাতে তুলে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে প্রত্যেক ভাতাভোগীর কাছ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করে ওই ইউপি সদস্য। শুধু তাই নয়, বাধ্যতামূলক ১০০ থেকে ২০০ টাকার ট্যাক্সের রশিদ সংগ্রহ করে ভাতা তুলতে হয়েছে সুবিধাভোগীদের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহিলা ইউপি সদস্য কল্পনা বেগম বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে টাকা আদায় করি নাই।’
করোনা আতঙ্কের মধ্যে জনসমাগম ঘটানোর বিষয়ে কৃষি ব্যাকের উপজেলার বাহেরচর বন্দর শাখা ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট আছে। তাই ভাতা দিতে একটু দেড়ি হয়েছে।’ অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের বাহিরে কে বা কারা টাকা নিয়েছে কিনা আমার জানা নেই।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’