রংপুরের পীরগঞ্জে করতোয়া নদী ঘেষা টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের অর্ধশতাধিক স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধে মাইকিং করলেও সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিন করতোয়া নদী থেকে শত শত মাহিন্দ্র ট্রলি ও ভারী যানবাহনে উত্তোলিত বালু বিক্রি করছে। গত কয়েক মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি হলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসনকে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। এদিকে দিবারাত্র বিরতিহীনভাবে ওই বালু পরিবহন করায় ভাঙ্গছে জমি, পুকুর পাড়, রাস্তা-ঘাট। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বর্ষা মওসুমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে অর্ধশতাধিক গ্রামের হাজারো মানুষ। অপরদিকে ধুলোবালিতে একাকার হওয়ায় দুষিত হচ্ছে এলাকার সামাজিক পরিবেশ। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর-রংপুর জেলাকে বিভক্ত করে পীরগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলার ধার ঘেঁষে প্রবাহিত করতোয়া নদী। এক সময়ের খরস্রােতা করতোয়া বর্তমানে শুকিয়ে গেছে। চতরা, বড় আলমপুর কাবিলপুর ও টুকুরিয়া ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের অর্ধশতাধিক স্থানে এবং নদীর ওপারে দিনাজপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে জোটবদ্ধ হয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। চতরা ইউনিয়নের কুয়েতপুর হামিদপুরের নেংড়ার ঘাটে ৫টি স্থানে শামিম, সুজন, আবু তাহের, বাবু, মজিদ, নজরুল, ছকমল, আবদুল মজিদ সহ ১৬ জন বালু সন্ত্রাসী জোটবদ্ধ হয়ে একাধিক বোমা মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাহিন্দ্র ও পাওয়ার ট্রলি বালু বিক্রি করছে। ওই ষ্থানে শামীম মিয়ার (৩৬) নেতৃত্বে বালু সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। বদনাপাড়ার টোংরার দহ সাবু মেম্বার বালু উত্তোলন করছে। এছাড়াও চক ভেকা, নুনদহ ঘাট, কুমারপুরে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখা গেছে। টুকুরিয়া ইউনিয়নে জয়ন্তীপুর ঘাট, সুজারকুটি, মোনাইল, কাঁচদহঘাটে সুলতান মাহামুদ, মাহমুদ, আবদুস সবুর, গোলাম রব্বানী, সোহরাব, রবিউল বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছে। এছাড়াও বড় আলমপুরের বাঁশপুকুরিয়ায় পৃথক ১০টি স্থানে মিজানুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ও গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে, কাবিলপুর ইউনিয়নের নিজ কাবিলপুর গ্রামের ৩টি স্থানে জুয়েল, হাসান আলী ও বিপু দিবারাত্র বালু উত্তোলন করছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় তহসীলদারদের সাথে বালু উত্তোলনকারীদের বিশেষ চুক্তি রয়েছে। প্রতিমাসে কর্মকর্তারা বালু উত্তোলনকারিদের কাছে চুক্তির টাকা নেয়। এজন্য বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা ভুমি অফিস থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টি এম এ মমিন বলেন নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি আফতাবুজ্জামান আল ইমরান জানান আমি সদ্য যোগদান করেছি। রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান মুঠোফোনে জানান, বালু উত্তোলনে মাইকিং করা সহ মোবাইল কোর্ট ও নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। দ্রুত আরও আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইনশাআল্লাহ করতোয়া থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে। এদিকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এলাকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলী জমি স্থাপনা ধ্বসে নষ্ট হয়ে যাওয়া ছাড়াও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। যা ভাবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট নীতনির্ধারক মহল জরুরী ভিত্তিতে আাইনগত পদেক্ষেপ নেবেন এমনটাই আশা করছেন এলাকাবাসী।