মহানগরীসহ রাজশাহী জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়নি। তারপরেও যে ইস্যুতে সারাবিশ্ব আজ স্তব্ধ সে বিষয়টির গুরুত্ব না দিলে ভয়াবহ ক্ষতির শঙ্কা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যে কারণেই সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করেছি। তবে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন সারা দেশ। যেহেতু বিদেশ ফেরতদের চিহ্নিত করা যায়নি এবং সহজেই হোম কোয়ারেন্টিনে আনা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে এখানে অবস্থানরতদেরও নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী শহরকে লকডাউন না করলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন এখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ।
জানা গেছে, গত ১৫ দিনে বিদেশ থেকে এসেছেন ১ হাজার ৩০৮ জন প্রবাসী। এ ছাড়া নগরীর ১২টি থানা এলাকায় বিভিন্ন দেশ ফেরত প্রবাসী রছেন ৮১০ জন। এরমধ্যে শুধু বোয়ালিয়া মডেল থানা এলাকায় ৪০৮ জন রয়েছেন। ফলে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে শঙ্কার ভাবনা কাটবেনা বলে মনে করছেন এখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ।
এদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, গত ১৫ দিনে প্রায় আট শতাধিক বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা রাজশাহী শহরে এসেছে। আর গোটা জেলায় অবস্থান করছেন প্রায় দেড় হাজার। অন্যদিকে পুলিশের আরেক সূত্র বলছে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে গত বুধবার এই বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তালিকা রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়। জেলার এক হাজার ৩১৩ জনের মধ্যে গোদাগাড়ীতে রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন। আর বাগমারায় রয়েছে ১৯৫ জন। তবে রাজশাহী নগরীর ৮০৯ জনের মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় এলাকাতেই রয়েছেন ৪০৮ জন। এর মধ্যে ২৭ জনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা নাই।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক গোপেন্দ্র নাথ আচার্য বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত কর্মী নাই যে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরী করতে পারবে। কাজেই প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন যে তালিকা তৈরী করে দিবে সেটি ধরেই আমরাই হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু এই কাজটি রাজশাহীতে হয়নি। ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে আছি আমরা। এর জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহীকে লোকডাউনের বিকল্প নাই। আর এটি করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েও যেতে পারে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. মহা. এনামুল হক জানান, রোববার (২২ মার্চ) পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরী ও জেলা মিলে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১৩৮ জন। এদের মধ্যে ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টিনের আওতায় এসেছে ৭৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১০ জন।
এদিকে সরেজমিন রাজশাহীর রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, রাজশাহীর সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ এখনো অবাধে চলাফেরা করছেন। করোনা নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও চলা-ফেরায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেন না। যদিও অনেকেই মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন।
রাজশাহীর লক্ষীপুর ডিঙ্গাডোবা এলাকার চা দোকানদার সুমন বলেন, আগের মত খুব একটা ভিড় নাই। তারপরেও যারা আসছেন বেশির ভাগ সময়ই করোনা নিয়ে আলোচনা করছেন। করোনার প্রভাবে ক্রমেই ব্যবসা মন্দা বলেও জানান সুমন।
এদিকে রামেক হাসপাতালে জ¦র, স্বর্দি ও কাশি আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হলেও তাদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের মাঝে এখন পর্যন্ত হ্যান্ডগ্লোভস আর মাস্ক ছাড়া অন্য কোনো পিপিই সামগ্রী অধিকাংশ চিকিৎসকদেরই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা। তার পরেও এসব রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের কাছে ৭০টি পিপিই সামগ্রী ছিলো। আরও কিছু পিপিসি সামগ্রী সংগ্রহের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তবে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তু রোগী আমরা পাইনি।’
বিদেশ ফেরত ৮০৯ জনের তালিকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা প্রায় ৭৮০ জনের খোঁজ পেয়েছি। এদের মধ্যে অনেকেরই ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আর যাদের শেষ হয়নি, তাদের বাড়িতেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরা যেন বাইরে বের হতে না পারেন, সে জন্য আমরা নজরদারি রাখছি। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
আর রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ হাসান বলেন, ‘পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে এক হাজার ৩০৮ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। এগুলো খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে ঢাকায় রিপোর্ট করতেও বলা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। তবে তালিকার অনেকেরই ঠিকানা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।