করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনগনকে সচেতন করতে বরিশালের চৌকস জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের নির্দেশে গত ১০ মার্চ থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ। প্রথমপর্যায়ে লিফলেট ও মাস্ক বিতরন থেকে শুরু করে জনসচেতনতায় অসংখ্যবার সভা ও সমাবেশ করা হয়।
বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য দফায় দফায় পরামর্শ ও গণপরিবহন থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে আড্ডা বন্ধের জন্য মাইকিংও করেছে জেলা প্রশাসন। করোনাকে পুঁজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং করোনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রসাধনীর দাম না বারানোর জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। প্রথমপর্যায়ের এসব নির্দেশনা অমান্য করে প্রবাসী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ যে যার মতো করে পূর্বের মতো গণপরিবহনে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা আগের চেয়ে প্রায় সব জিনিসেই দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করে আসছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মঙ্গলবার সকাল থেকে কঠোর অবস্থানে মাঠে নেমেছে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা।
সূত্রমতে, হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানরতদের নিয়ে পুলিশী তদারকি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোন মূল্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে বরিশালের সকল অভ্যন্তরীন রুটের লঞ্চ ও বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে অতিরিক্ত দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও মাস্ক বিক্রি করার অপরাধে নগরীর সাগরদী বাজার ও রূপাতলী বাজার এলাকার চারটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করার পাশাপাশি তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এহেন অপরাধ পরিহার করার জন্য পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গণসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান, নগরীসহ জেলার দশটি উপজেলায় দেশের বাহির থেকে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে ৪৭৮জন ব্যাক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এদের মধ্যে ১০৭ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন বলেন, বর্তমানে জেলায় ৩৭১ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এদের মধ্যে ২৪ ঘন্টায় ৮১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে আর গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ ব্যক্তিকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। আইসোলেশনে রাখা হয়েছে দুইজনকে।
সড়কপথে বরিশাল বিভাগের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরাফেরা করায় উপজেলার বড় কসবা গ্রামের করিম সরদারের পুত্র রুহুল আমীন সরদারকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এ জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি তার বসতঘরে লাল নিশানা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে উপজেলার কমলাপুর গ্রামের হানিফ মজুমদারের পুত্র মনির মজুমদারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের কর্তৃক জরুরিভাবে উপজেলার বিভিন্নস্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ছরোয়ার বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ও থানা পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সুপার মার্কেট ও দোকানগুলো বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি উপজেলার অভ্যন্তরীন রুটগুলোতে সীমিত আকারে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। গৌরনদীর সীমান্তবর্তী মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাথে নৌ ও সড়ক পথের ১২টি অভ্যন্তরীন রুট গত চারদিন থেকে বন্ধ করে দিয়ে থানা পুলিশ পাহারা বসিয়েছে। ওসি আরও জানান, অতিপ্রয়োজন ছাড়া এখন কেহই ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সদ্য যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে আনার জন্য পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঘর থেকে বের হতে নিরুৎসাহিত করার জন্য থানার পক্ষ থেকে মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। শপিংমলগুলো বন্ধ থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলো খোলা রয়েছে।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের আহবানে সারাদিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার দিনমজুরদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার. সাবান ও মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সতকর্তার পরামর্শ দিয়ে বরিশালের চৌকস জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা প্রতিরোধে দরিদ্র মানুষ এবং নিজস্ব কর্মীদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে জেলায় সকল এনজিও’র কিস্তি আদায় আপাতত বন্ধ রাখার আহবান করে ব্যাপক সারা মিলেছে। তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ এড়াতে বরিশাল থেকে লঞ্চ ও দুরপাল্লার সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকলে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের দাম বৃদ্ধি করা হলে ও প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে অবাধে ঘোরাফেরা করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল ও জরিমানা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
করোনা সতর্কতায় গণমাধ্যম কর্মীদের সচেতন থেকে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, পুলিশ, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীরাও তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ পেশাগত কাজে তাদের অনেকস্থানে যেতে হয়। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপদ থাকতে হবে। সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত কাজে যেসব জিনিস ব্যবহার করেন তা নিরাপদে রেখে কাজ করার জন্যও জেলা প্রশাসক আহবান করেছেন।