নওগাঁর মান্দায় মেধা বৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রেজাউল হক নামে এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত শুক্রবার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল হক উপজেলার কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অতীতেও একই ধরণের একাধিক ঘটনার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, গত ২৫ মার্চ বুধবার স্কুল ছুটির দিন সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে বিদ্যালয়ে ডেকে নেন। পরে ওই শিক্ষক ছাত্রীকে মেধাবৃদ্ধির কথা বলে যৌন উত্তেজক ওষুধ খাওয়ান। পরে ওই ছাত্রীকে টিনসেডের একটি কক্ষে নিয়ে আপত্তিকর কাজে লিপ্ত হন শিক্ষক রেজাউল হক। ঘটনাটি দেখে ফেলেন বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে কাজ করা কিছু শ্রমিক। এরপর তারা ঘটনাটি প্রকাশ করে দিলে স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।
ঘটনার একদিন পর ২৭ মার্চ শুক্রবার স্কুল ম্যানেজিং কমিটির জরুরি সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল হককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনায় পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। এতে এলাকাবাসীর মঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক আব্দুল মতিন বলেন, গত বুধবার (২৫ মার্চ) শিক্ষক রেজাউল হক ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি আমের গাছের নিচে কিছুক্ষণ গল্প করেন। এরপর টিন সেটের একটি শ্রেণি কক্ষে নিয়ে যায়। এতে আমার সন্দেহ হলে কক্ষের খোলা জানালা দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পাই। এ সময় আরো দুই শিক্ষক রেজাউলের সঙ্গে বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারা রেজাউলকে পাহারা দিচ্ছিলেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শিক্ষক রেজাউল হক এরকম কাজ বারবার করে আসছেন। এর আগেও এক ছাত্রীর সঙ্গে তিনি আপত্তিকর কাজে জড়িয়ে ছিলেন। পরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছিল। বিদ্যালয় ছুটি থাকার পরও গত ২৫ মার্চ ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে একই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হবার পর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক রেজাউল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা। তিনি বলেন, আমার মেয়েসহ অনেক ছাত্রী তার কাছে প্রাইভেট পড়ে। ইতিপূর্বে তিনি একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি ওই লম্পট শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষক রেজাউল হক বলেন, ওইদিন শিক্ষার্থী আমার কাছে প্রাইভেট পড়তে আসে। কিন্তু তার সঙ্গে অন্য কিছুই হয়নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যে ও বানোয়াট।
কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকসেদ আলী প্রামানিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর শিক্ষক রেজাউল হককে ডেকে এবিষয়ে ব্যাখা চেয়েছিলাম। রেজাউল তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেছেন ভবিষ্যতে তিনি এমন কাজ আর করবেন না।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আল-মামনুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রধান শিক্ষককে জরুরী সভা ডাকতে বলেছিলাম। ওই সভায় শিক্ষক রেজাউল হক তার অপরাধ স্বীকার করে নিজে থেকেই পদত্যাগ করেছেন। আজ শনিবার (২৮ মার্চ) সভার পরবর্তী দিন ধার্য্য করা রয়েছে। তার পদত্যাগের বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেখ শাহ আলম বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।