ভয়াবাহ মাহামারি করোনা’র কারণে অচল সারাদেশ। করোনার বিস্তার রোধে মানুষকে ঘরমুখী করে দিয়েছে সরকার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী ছাড়া অন্য সব পন্য বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। চলছেনা সড়ক অথবা নৌ-পরিবহনও। এ কারণে বিপাকে পড়েছে পটুয়াখালীর উপকূলীয় হাজার হাজার তরমুজ চাষী। বর্তমানে পটুয়াখালীর উপকূলে ২২ হাজার হেক্টর জমির মাঠ জুরে রয়েছে রসালো ফল তরমুজ। করোনা দুর্যোগের কারণে যথা সময়ে এ ফল কাটতে পারছেননা চাষীরা। যার ফলে ক্ষেতেই পঁচন ধরেছে হাজারো চাষীর স্বপ্ন। দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের তরমুজ চাষীরা। ধার দেনায় জর্জরিত কৃষক পরিবারগুলো কোন উপায়ন্ত না পেয়ে হাহাকার দিন পার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে পটুয়াখালী জেলায় অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে তরমুজ চাষীদের।
সরেজমিনে দেখাগেছে, কিছু চাষী ক্ষেতে বসেই আংশিক জমির তরমুজ আগাম বিক্রি করছে। অনেকেই আবার মোটেও বিক্রি করতে পারেনি। সবেমাত্র ফল কাঁটার উপযোগী হয়েছে। এখন বাজারজাত করার সময়। কিন্তু বাজারজাত করতে না পারায় অনেকের তরমুজ পঁচে যাচ্ছে। আবার অনেক তরমুজ বেশি পেকে যাওয়ায় ফুটে যাচ্ছে। লঞ্চ ও ট্রাক চলাচল না করায় ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে তরমুজ পাঠানো যাচ্ছেনা। অন্যদিকে, মানুষ ঘরমুখি হওয়ায় স্থানীয় বাজার গুলোতেও তরমুজের কদর নেই। যার কারণে পেকে যাওয়া তরমুজ গুলো ক্ষেতেই পঁচছে। ধারনা করা হচ্ছে আগামী একমাস
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান মতে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করতে ১০০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। এবছর লাভের প্রত্যাশাছিল ২৫০ কোটি টাকারও অধিক।
এপর্যন্ত ৫% তরমুজ বিক্রি হয়েছে, বাকি তরমুজ ক্ষেতে রয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয় তবে তিন ভাগের দুই ভাগ তরমুজ রক্ষা হবে। আর যদি এক মাসের অধিক এভাবে থাকে তাহলে শতকরা ৮০ ভাগ তরমুজ নষ্ট হবে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী চরের তরমুজ চাষী ইব্রাহিম হাওলাদার জানান, তিনি এবছর ৩ কানি জমিতে তরমুজ দিয়েছেন। তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। সে এখনো পর্যন্ত কোন তরমুজ বিক্রি করতে পারেননি। তার ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি উপযোগী হয়েছে। করোনার কারণে তরমুজ চালান করতে পারছেননা। ৪/৫ দিনের মধ্যে তরমুজ চালান করতে না পারলে ক্ষেতেই তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বেশি পেকে যাওয়া তরমুজ গুলো পঁচন ধরেছে।
একই এলাকার তরমুজ চাষী আলী আজগর চৌকিদার জানান, সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যায় করে সে এবছর ২ কানি জমিতে তরমুজ দিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করতে পারেনি। আগাম যে তরমুজ হয়েছিল, সেগুলো বৃষ্টির কারণে নষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। এখন ক্ষেতে বিক্রি উপযোগী ৫০০ তরমুজ রয়েছে। সেগুলো ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয়েছে। এর বেশি বড় করতে গেলে অনেক তরমুজই ফেটে যাবে। বড় তরমুজ গুলো ফেট যাচ্ছে আবার কিছু পেকে পঁচে যাচ্ছে।
বড়বাইশদিয়া এলাকার তরমুজ চাষী আবদুল জাব্বার বলেন, ‘মানুষের তোনে দেনা কইররা ১ কনি জমিনে তরমুজ দিছি। হ্যাতে দুইলাখ টাহা(টাকা) লাগছে। আশা করছিলাম তরমুজ বেইচ্ছা(বিক্রি) ৪/৫ লাখ টাহা পামু। দেনা শোধ কইরা বাকি টাহা দিয়া নিজে চলমু আর গুরাগারা(সন্তান) লেহাপাড়া করামু। কিন্তুু দ্যাশে কোন করোনা আইছে, জানিনা। এ্যাহন তরমুজ পাকছে, ব্যাছতে নিমু, নিতে পারছিনা। তরমুজ না ব্যাছতে পারলে মাঠে মইরা যামু! এ ছাড়া আর কিছু করার নাই। নালে খামু কি আর দেনা দিমু কি দিয়া।’
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.মনিরুল ইসলাম জানান, তরমুজ পেকে গেলেই নষ্ট হয়ে যায়না। কিছু দিন সংরক্ষণ করা যায়। কাঁটার পারেও ৭/৮ দিন রাখা যায়। এবং গাছে নিয়মিত পানি দিয়ে রাখলে একটু দেরীতে কাটলেও সমস্যা হয়না। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের এখনো সম্ভাবনা আছে ফসল তুলতে পারবে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আসে পাশের জেলাগুলোতে তরমুজ কিভাবে বাজারজাত করা যায়।