মহামান্য উচ্চ আদালতের নিষেধাঙ্গা অমান্য করে নড়াইলের কালিয়ায় নবগঙ্গা নদী থেকে অনিয়ন্ত্রিত ও আইন বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলার দেওয়াডাঙ্গা গ্রামের জনৈক তপু খান হাইকোর্টে একটি রীট মামলা দায়ের করলে ১৯মার্চ বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই নদী থেকে বালু উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
জানা গেছে, নবগঙ্গা নদীর পারভোমবাগ, নওয়াগ্রাম-দেওয়াডাঙ্গা, বৃহাচলা বালুমহাল ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি বালু উত্তোলনে ইজারা দেওয়াকে কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ভবিষ্যতে ওই এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা না দিতে কেনো নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রীটকারীর তথ্যানুযায়ী, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে এসব এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙনের সৃষ্টি হলে বালুমহাল ইজারা দেয়ার বিরুদ্ধে উপজেলার দেওয়াডাঙ্গা গ্রামের মন্টু খানের ছেলে তপু খান হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানার মাধ্যমে ৩৭৬০/২০ নম্বর একটি রীট পিটিশন দাখিল করেন। শুনানি শেষে ১৯মার্চ রীট আবেদনকারীর পক্ষে হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ের বেঞ্চ ওই সমস্ত বালুমহল ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এরপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁধা উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় নবগঙ্গা নদী থেকে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫টি হেভি ড্রেজারমেশিন ও ক্রেনের মাধ্যমে নদীর তলদেশ থেকে একপ্রকার জোরপূর্বক বালু তুলছে প্রভাবশালী চক্রটি। ফলে একদিকে উপজেলার নবগঙ্গা নদী তীরবর্তী মানুষজন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। অপরদিকে, সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভাঙনে ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে নবগঙ্গা নদীর দু’তীরের কয়েকশ’ একর ফসলি জমি। বসতভিটে হারিয়ে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন। হুমকির মুখে পড়েছে অনেক হাট-বাজার, স্কুল, ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বালুমহাল ইজারা দেয়ার বিষয়টি বাতিল হয়ে যাওয়ার পরও অব্যাহত রয়েছে বালু উত্তোলন। এ অবস্থায় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
এদিকে, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ওই আদেশ মোতাবেক অবৈধ বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে উপজেলার মাধবপাশা গ্রামের মৃত ওয়াজেদ মোল্যার ছেলে মোঃ মোস্তফা কামাল বুধবার (২৫ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নড়াইল জেলা প্রশাসক বরাবর বালু মহলের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য একটি লিখিত আবেদন করেন।
আবেদনকারী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বালুদস্যুরা খুবই ভয়ংকর। তারা হাইকোর্টের আদেশ মানছে না। আদালতের স্থগিতাদেশের নির্দেশনা পাওয়ার পর বালুদস্যুরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং দিন-রাত প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।’ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে কোন খেয়াল নেই বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বালু উত্তোলনকারী দলের অন্যতম সদস্য কাজল মোল্যা বলেন, ‘বালুমহাল ইজারা পাওয়া সত্ত্বেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ দেয়ায় আমরা বালু উত্তোলন থেকে বিরত আছি।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘বালু মহলের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। কেউ যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে, আমরা দ্রুত তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি’।