ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা গত এক সপ্তাহ ধরে লক ডাউনের ফলে বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার জনগোষ্ঠী। পদ্মা নদী ভাঙন কবলিত অত্র উপজেলার বেশীরভাগ জনগোষ্ঠী শ্রমজিবী ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী। তাই ‘দিন আনে দিন খায়’ পরিবারগুলোর উপার্জন বন্ধ হওয়ার ফলে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার জন্য হা-হাকার করছেন হাজার হাজার বেকার জনগোষ্ঠী। সরকারিভাবে উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬ মে.টন চাল ও কিছু নগদ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত বিতরন হয়েছে অর্ধ মে.টন চাল ও নগদ টাকার কিছু মালামাল। ফলে উপজেলার গ্রামগঞ্জে আনাচে কানাচে ও নিভৃত পল্লিতে খাদ্য সহায়তার জন্য হা-হাকার লেগেই আছে।
তবে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা জানান, “বরাদ্দকৃত চালের বাকী অংশ আগামী দু’দিনের মধ্যেই বিতরন শেষ করে দিবো”।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, অত্র উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পদ্মা নদী ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো কেউ আর কৃষির উপর নির্ভর করেন না। সিংহভাগ পরিবার ক্ষুদ্র ব্যাবসা সহ শ্রমের উপর জীবিকা অর্জন করে থাকেন। তাই লকডাউনের ফলে উপজেলায় দিন মজুর, রিক্সা ভ্যান চালক, অটোবাইক, ইজিবাইক, বিভিন্ন যান চালক, বিভিন্ন মিস্ত্রী কাজ, গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা ও হস্ত শিল্প সহ হাজার হাজার পেশাজিবীরা কর্মহীন অবস্থায় গৃহবন্দি রয়েছেন। এসব পেশাজিবীদের প্রতিদিনের উপার্জনের টাকায় সংসার চলতো।
কিন্ত গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা লকডাউনের ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন কর্মহীন পরিবারগুলো। সোমবার উপজেলা সদর ইউনিয়নের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামের এক বিধবা গৃহ দর্জিকর্মী আফরোজ বেগম (৩৮) জানান, “ উপজেলা লকডাউনের ফলে এক সপ্তাহ ধরে কেউ কোনো কাজ নিয়ে আসে নাই। সকালে মরিচ বাটা দিয়ে দু’মুঠো ভাত খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। এই দুর্দিনে সরকারিভাবে কোনো সাহায্য না পেয়ে তিনি হতাশায় ভেঙে পড়েন”। চরভদ্রাসন বাজারের আরেক পানের দোকানদার মোঃ সিরাজুল ইসলাম (৪৫) বলেন, “ বাড়ীতে চুলো জ¦লে না, তাই সাহায্যের চালের জন্য গত চার দিন ধরে অনেকের পিছে ছুটে বেড়াচ্ছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনা সাহায্য পাই নাই”।
উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের মধ্যে চরহরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির খান জানান, “ সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৬ মে.টন. চালের মধ্যে অত্র ইউনিয়নের বেকারদের জন্য মাত্র এক মে.টন. চাল বিতরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমি মেনে নেই নাই। তিনি বলেন, প্রতি পরিবারে ১০ কেজি চাল আনার জন্য পদ্মা নদী পার হয়ে আসা যাওয়ায় প্রায় আড়াইশো টাকা করে যাতায়াত খরচ হয়ে যায়। তাই ওই ইউনিয়নে পরিবার প্রতি ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হলে দুস্থরা হাওলাদ করে হলেও যাতায়াত করতে পারবে বলে তিনি জানান”।
উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী জানান, “ লকডাউনের ফলে অত্র ইউনিয়নে বিভিন্ন পেশাজিবী মিলে অন্ততঃ চার হাজার বেকার পরিবার রয়েছে। সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে ১৮০ পরিবারে সর্বমোট এক মে.টন ৮০০ কেজি চাল। দেশের এ চরম দুর্দিনে এত অপ্রতুল চাল বিতরন করতে গিয়ে প্রতিদিন আমরা শত শতবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি”।