করোনা পরিস্থিতিতেও ঈশ্বরদীর অলিতে গলিতে ও পাড়া মহল্লায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক। করোনা মোকাবেলায় ঈশ্বরদীতে চলছে অঘোষিত লকডাউন। নীরব,নিস্তব্ধ সড়ক- মহাসড়ক। সড়কে নেই মানুষ,নেই যানবাহন। বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজ,অফিস,দোকানপাট,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,সরকারি বেসরকারি অফিস। জরুরী সেবা ও অতি প্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে অনুমতি থাকলেও সেসব গাড়ি খুব একটা চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু করোনার এই প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও থেমে নেই বালু বোঝাই ড্রামট্রাক এর চলাচল। বীর দর্পে সর্বোচ্চ গতিতে ঈশ্বরদীর গ্রামীণ ও শহরের সড়কে দাপিয়ে তারা বালু বিক্রি করে বেড়াচ্ছে।
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের নাকের ডগার উপর দিয়ে এসব ৪০ টনেরও বেশি ওজনের বালু বোঝাই দশ চাকা বিশিষ্ট ড্রাম ট্রাক চলাচল করলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
স্থানীয়রা জানান,সাঁড়া ইউনিয়নের ইসলামপুর চরের পদ্মা নদী থেকে উত্তোলিত বালুু ড্রাম ট্রাকে করে ঈশ্বরদী ও পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে মাজদিয়া,ইসলামপুর ঝাউদিয়া,চানমারীসহ সাঁড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি পাকশী ও লক্ষীকুন্ডায় একই কায়দায় বালু উত্তোলন করে ড্রাম ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ও শহরের সড়ক। এ সমস্ত ড্রাম ট্রাক ঝড়ে বেগে চলাচলের কারণে তাদের অন্ধকার করে দেওয়া বালি ঝড়ে ও ধূলাবালির কারণে সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হয়। বালু ব্যবসায়ী ও বালু বহনকারী ড্রাম ট্রাকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়দের প্রতিবাদ করার সাহস নেই।
এদিকে,প্রথম শ্রেণীভুক্ত ঈশ্বরদী পৌর এলাকার রাস্তায় ওজন ধারণ ক্ষমতা ১৫ হতে ২০ টন। অথচ ৪০ টনেরও বেশি ওজনের বালু বোঝাই ১০ চাকা বিশিষ্ট ড্রাম ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলছে এ সড়ক দিয়ে। এতে নতুন সংস্কার করা রাস্তাও চাকায় পিষ্ট হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে।
ঈশ্বরদী শহরের পাবনা রোড,আইকে রোড,সাঁড়া গোপালপুর টিপু সুলতান রোড,উপজেলা রোডসহ কয়েকটি রাস্তায় ইতোমধ্যে ছোট-বড় অসংখ্য ফাটল ও পিচ উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার প্রকৌশলী জানান,এভাবে ভারী যানবাহন চলতে থাকলে আগত বর্ষা মৌসুমে এসব রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,প্রতিদিন ঈশ্বরদীর এসব রাস্তায় অতিরিক্ত বালু বোঝাই করা ১০ চাকা বিশিষ্ট ড্রাম ট্রাকসহ ২ শতাধিক যানবাহন বিরতিহীনভাবে চলাচল করছে। এতে এলাকার নতুন নতুন রাস্তাও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পৌরসভার মেয়র, প্রকৌশলীরা ছাড়াও এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ বাসিন্দারাও উদ্বিগ্ন।
পৌর এলাকায় এসব ভারী যানবাহনের নিয়মবহির্ভূত চলাচল বন্ধ করতে ঈশ্বরদী পৌরসভার পক্ষ থেকে পাবনা পুলিশ সুপার বরাবর একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে ঈশ্বরদী পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়,এসব রাস্তায় সাধারণত যাত্রীবাহী বাস,অটোরিকশা,ছোট-খাটো ট্রাক,রিকশা, মাইক্রোবাস চলাচল করে। বিগত কয়েক মাস ধরে এসব রাস্তায় দিনরাত অবিরাম বালু বোঝাই বড় সাইজের ভারী এসব যানবাহন চলছে। এতে হাজার হাজার মানুষ,এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ দূর্ভোগে পড়েছে। পাশাপাশি ভালো রাস্তাাগুলোও দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান,এসব ভারী যানবাহন চলার সময় রাস্তার আশপাশের বাড়িঘরে ভূমিকম্পের মতো ঝাঁকুনি হয়। এতে বাড়ির ছোট শিশুরা ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে ওঠে। আর এইসব বালি ব্যবসায়ীরা রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। আর দরিদ্র মানুষ অতি দরিদ্র থেকে যাচ্ছে। ঈশ্বরদীর মানুষ এখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে যখন ভীত ও আতংকিত। নিষেধাজ্ঞার কারণে কেউই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বালু বোঝাই এসব ড্রাম ট্রাক গ্রাম ও শহরের সড়কগুলো ফাঁকা পেয়ে আরো দ্রুত গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরী পণ্যবাহী গাড়ির চলাচলের অনুমতি থাকলেও বালিবাহী ড্রাম চলাচলের কোন অনুমতি সরকারের নিদের্শনায় নেই। তাই পরিবেশ দুষণকারী ও সড়কের ক্ষতি সাধনকারী এসব বালিবাহী ড্রাম ট্রাক চলাচল বন্ধের জন্য ঈশ্বরদীবাসী স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।