সুন্দরবন অভ্যন্তরে শেষ হয়েছে গোলপাত আহরণ মৌসুম। কোনো হয়রানি ছাড়া গোলপাতা কেটে বাড়ি ফিরে বাওয়ালীরা এখন মহাব্যস্ত বিক্রির কাজে। গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের ২টি কূপে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সন্দেহীন ছিল বন বিভাগ। সেই আশঙ্কা থেকে বের হয়ে তাদের লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছাতে পেরেছে। এ বার ভালভাবে গোলপাতা কাটতে পেরে বেজায় খুশি বাওয়ালীরা। নির্বিঘ্নে পাতা কাটতে পেরে বাওয়ালীরা খুশিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোলপাতা আহরণের ভরা মৌসুমে এবার বাওয়ালীদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কঠোর ছিল বনবিভাগ। ফলে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা সংকটে বাওয়ালীরা খানিকটা দেরীতে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ২ টি কূপ (জোন) থেকে অনুমতি গ্রহণ করে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পরেও সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে গোলপাতা কাটতে পেরেছে এ উপর নির্ভরশীল প্রায় কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষ।
খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ আবু সালেহ বলেন, বাওয়ালীরা যাতে বন অভ্যন্তরে নির্বিঘ্নে গোলপাতা কাটতে পারে তার জন্য বন বিভাগ থেকে বরাবরের মত এবারও কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়। চলতি বছর সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা কুপে গোলপাতা সংগ্রহের জন্য ২৩৯ টি বিএলসির অনুকূলে বাওয়ালিরা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০৪ মণ গোলপাতা সংগ্রহ করার অনুমতি (পারমিট) নিয়েছিল। তবে বন বিভাগের কঠোর নজরদারির কারণে কোন প্রকার ঠেসপাতা, মাইজপাতা নষ্ট না করে নিয়মমাফিক গোলপাতা কেটে বাড়ি ফিরেছে বাওলীরা।
সুন্দরবন খুলনা বিভাগের বন প্রহরী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অলিয়ার রহমান (মিলন) বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে এ সকল বিএলসির অনুকুলে পারমিট দেওয়া শুরু হয় এবং গোলপাতা আহরণ মৌসুম ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলে। তবে প্রথমে ধারণা করা হয় এবার ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় শুরুতেই গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা। লক্ষ্যমাত্রা পুলন হওয়ায় বন বিভাগও খুশি। খুলনা গোলপাতার কূপ কর্মকর্তা শেখ মোঃ আনিছুর রহমন বলেন, নিয়ম মেনেই গোলপাতা আহরণের অনুমতি দেওয়া হয়। আর আমাদের নিয়ম মেনে বাওয়ালীরা এ বছর গোলপাতা কাটায় তারা লাভবান হবে।
বনবিভাগের দেয়া তথ্য মতে, বরাবরের মত এবারো গোলপাতা আহরণের ক্ষেত্রে বাওয়ালীদের বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৫শ মণের বেশি ধারণ ক্ষমতার নৌকা বিএলসির বাইরে থাকবে। গোলপাতা আহরণের জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় বনে অবস্থান করা যাবে না, আহরণের সময় বনবিভাগের নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে হবে, গোলপাতা ঝাঁড়ের মাইজপাতা ও ঠেকপাতা কোনো ভাবেই কর্তন করা যাবে না এবং গোলপাতার আড়ালে যাতে কোনো ধরণের ‘বনজদ্রব্য পাচার না হয় সে বিষয়টি নিবিড় ভাবে নিরীক্ষণ পূর্বক নিশ্চিত করতে হবে। সুন্দরবন উপকূলীয় নলিয়ান এলাকার বাওয়ালী জুলফিক্কার আলী জুলু জানান, ২০ বছর ধরে তিনি সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তবে বনবিভাগের এবারকার মতো কড়াকড়ি আগে কখনও দেখেননি।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশিরুল আল-মামুন বলেন, প্রতিটি স্টেশনে ও কূপে নিয়মিত তদারকি করে বিএলসি নবায়ন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এ বছর। পাশাপাশি কূপে বিএলসির সাথে সংশ্লিষ্ট নৌকার মিল রেখে গোলপাতা কাঁটার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কেউ যাতে মলম বাণিজ্য করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজরদারি রাখা হয়। তবে গোলপাতা সম্পর্কে কোনো অভিযোগ ছাড়াই শেষ হয়েছে গোলপাতা মৌসুম বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।