সারা বিশ্ব করোন ভাইরাসের সংক্রমনে কেঁপে উঠেছে। এই ভাইরাস হতে বাঁচতে বিভিন্ন দেশ নানান কৌশল অবলম্বন করছে তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারও এই রোগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে দেশের মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খুলতে দেওয়া হচ্ছে না দোকানপাট। আর এসব কাজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশ। দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে তারা। কোথাও কোন দোকানপাট খোলা বা মানুষ একত্র হওয়ার খবর পেলে মূহুর্তেই সেখানে হাজির হয়ে সামাজিক দূরত্বর কাজটি নিশ্চিত করছে।
পুলিশ যখন এমনি ভাবে করোনা ভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে, অন্যদিকে কাজে মনোযোগ দেবার তেমন সময় নেই, তখন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাদক ব্যবসায়ীরা রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই সময়ে তারা মাদক ব্যবসা করে দ্বিগুণ লাভ করছে। আর এদের পেছনে বহনকারী হিসেবে কাজ করছে কিছু উঠতি বয়সি যুবক। এদের মধ্যে ভাগ হয়ে একেক এলাকায় একেক জন কেউ ফেনসিডিল বহন, কেউ ইয়াবা আবার কেউ হেরোইন সরবরাহ করে থাকে।
সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় এই সুযোগে গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মহিশালবাড়ী গরুর হাটে প্রতিদিন একরকম খোলামেলা ভাবেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গরুর হাটে মাদক ব্যবসায় পরিচালনাকারিরা হলো মহিশালবাড়ী ফকিরাপাড়া গ্রামের মৃত. আবদুল রাজ্জাকের ছেলে বানী ইসরাইল ভোদল (৩০) ও রেলবাজার এলাকার তোফায়েল (৩২)।
এরা দুজন বিকেলে মহিশালবাড়ী গরুর হাটে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও হেরোইন বিক্রি করছে আর ক্রেতারা এসে নিয়ে যাচ্ছে। মাগরিবের আগ মূহুর্তে তারা হাজির বাগানে গিয়ে অবস্থান করে সেখানে তার কিছু ক্রেতা এসে মাদক নিয়ে যায়। আবার সেখানের কেনা বেচা শেষ করে এশার নামাজের পর কচির বাগানে গিয়ে রমরমা মাদক ব্যবসা করছে।
মাদক ব্যবাসয়ী বানী ইসরাইলের নামে কোন মাদক মামলা না থাকলেও খুব দাপটের সহিত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আর তোফায়েলের নামে রয়েছে ৪-৫টি মাদক মামলা।
এই সংকটময় মূহুর্তে মাদকেরও নাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আগে এক গ্রাম হেরোইনের দাম ছিলো ১৭০০ টাকা সেটি এখন হয়েছে ২৬০০ টাকা, ইয়াবা এক পিসের দাম ছিলো ৪০ টাকা এখন হয়েছে ৮০ টাকা এবং এক বোতল ফেনসেডিলের দাম ছিলো ৭০০ টাকা সেটি ১৫০০ টাকায় গিয়ে পৌচেছে।
অপর দিকে এই সময়ে তিন নারী মাদক সম্রাজ্ঞী নিজ বাসা হতে রমরমা ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। তারা হলেন, আচুয়া ভাঁটা কসাইপাড়া গ্রামের উসমানের স্ত্রী সুইটি বেগম (৩০)। এর নামে গোদাগাড়ী মডেল থানায় ৫-৬ টি মাদক মালমা রয়েছে। এর স্বামী উসমানের নামের রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে।
একই এলাকার আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো, আবদুল মালেকের স্ত্রী তাসলিমা (৩৫)। সে তার বাসার পেছনে বাঁশ বাগন হতে প্রকাশ্যে হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি করে চলেছে। এখান হতে সে মাদক সেবীদের নিকট খুচরা বিক্রি করে থাকে। তার নামে গোদাগাড়ী থানায় ২-৩ টি মাদক মামলা রয়েছে।
এই দুই নারী মাদক ব্যবসায়ীর নিকট হতে সকাল হতে রাত পর্যন্ত রাজশাহী - চাঁপাই নাবাবগঞ্জ মহাসড়কের উপরে ছদ্মবেশে এ্যাম্বুলেন্স যোগে এসে গাড়ী থামিয়ে হেরোইন ও ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও অটো চালকের বেশে এসে তার বাড়ীর সামনে দাঁড়ায়ে মাদকদ্রব্য দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও অনেক মাদক সেবনকারীরা প্রকাশ্যে এসে মাদক কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী হলো মহিশালবাড়ী মাদ্রাসা পাড়ার মোঃ ইউনুস আলীর স্ত্রী মরিয়ম খাতুন (৩২)। এই নারী মাদক ব্যবসায়ীর নামে রয়েছে দুইটি মাদক মামলা। মরিয়মের স্বামী ইউনুস ও বড় মাদক ব্যবসায়ী তার নামেও রয়েছে জ্জ টি মাদক মামলা। মরিয়ম দীর্ঘদিন হতে নিজ বাড়ীতে মাদক বিক্রি করে আসছে। সে মাদক তিন মাদক সেবীকে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রতিদিন তাদের ৬০০ টাকা ও তিন বেলা খাবার দেয়। মরিয়মকে মাদক সরবরাহ করে থাকে মহিশালবাড়ী আলীপুর গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে বিপ্লব (৩৫) নামের অপর মাদক ব্যবসায়ী। তার নামেও রয়েছে ৩ টি মাদক মামলা।
অপরদিকে এই সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত একাধিক মাদক সম্রাট এলাকায় ফিরে এসে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে শুরু করেছে। তাদের ফিরে আসা দেখে এলাকার লোকজন ধারণা করছে প্রশাসন কে ম্যানেজ করেই এলাকায় ফিরেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা একাধিক বার ধরা পড়লেও টাকার জোরে জামিনে এসে আবারও মাদক ব্যবসায় শুরু করে।
এই বিষয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ খাইরুল ইসলাম জানান, যখন পুলিশের নিয়মিত মাদক অভিযান ছিলো তখন গোদাগাড়ীতে মাদক ব্যবসায়ীরা এমন তৎপর ছিলো না। আর মাদক ব্যবসা করলেও খুব গোপনে। করোনা ভাইরাস নিয়ে পুলিশ খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে ফলে অন্যদিকে মনোযোগ দিতে তেমন পারছে না আর এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে তারা মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে। বিষয়টি জানলাম অবশ্যই তথ্য নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো। তিনি আরো বলেন, যে যত বড়ই মাদক সম্রাট হোক কাউকে ছাড় নেই। তাদের জন্য সব সময় জিরো টলারেন্স নীতি অব্যহত আছে।