শিশুর মনোদৈহিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তাদের লেখা পড়ার মধ্যে ফিরিয়ে আনা এই মহূর্তে খুবই জরুরি। বৈশ্বিক সংকট করোনা ভাইরাস আগ্রাসন এবং একই সঙ্গে এর আতংক শিশুদের আজ চলমান শব বানিয়ে দিয়েছে। এ সমস্যা যে কেবল আমাদের বাংলাদেশে তা নয়। গোটা বিশ্বের সব শিশুরাই একটা সার্বজনীন ট্রমার মধ্যে জীবন্মৃত হয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।
ছোট্টো শিশু যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলতে শেখে, বলতে শেখে, বাড়ির আপন জনের ছবি, অস্তিত্বকে বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখে। বাবা মা, পরিজনের গন্ধ পর্যন্ত ওরা অনুভব করে প্রতিটি নিশ্বাস প্রশ্বাসে।
এরপর যখন ঘর ছেড়ে বাইরে যায়, প্রথন পাঠশালা তার স্কুলে, তখন শিশু মনের আকাশটা হয় আরও বড়, বিশাল বিরাট।
শিশু তার আপন ভুবনে জুড়ে নেয় তার স্কুল, তার শিক্ষকদের আদর ভালবাসা শাসন, বন্ধুদের গভীর সান্নিধ্য আর তার ২য় বাড়ি স্কুল প্রাঙ্গণ। এ ভাবেই একটু একটু করে বিকশিত হয় শিশু মন।
২০১৯ এর ডিসেম্বরে হঠাৎ ই আচমকা বিশ্বব্যাপী করোনা নামের অদৃশ্য ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। শিশুদের মনের আকাশ আষাড়ের কালো মেঘের গোটা আকাশ দখলের মত দখল করে নেয়, আতংকের ঘন ঘোর অমানিশা দেখা দেয় পৃথিবীর সারে সাত বিলিয়ন মানুষের মনের আকাশে আচমকাই। এখন ২০২০ এর মার্চ। গোটা বিশ্ব আজ লক ডাউন। বেঁচে থাকার তাড়নায় আজ আমাদের মর্মন্তুদ আকুলি বিকুলি।
কিন্তু আমরা ভেবে দেখেছি কি, বিশ্ব জুড়ে আমাদের শিশুরা ঘরবন্দি হয়ে কতখানি মানসিক যন্ত্রণায় আছে? ওরা শুনছে বিভিন্ন মিডিয়া প্রচার প্রচারণায় করোনা বাতাসেও ছড়াচ্ছে। ঘরের জানলাটা খুলে একবারও দুচোখ ভরে দেখতে পারছে না নীল আকাশ। টেবিলের উপর রাখা বই খাতা, কলম, ল্যাপটপ দেখে বুকের মধ্যে কান্না ডুকরে ওঠে।
Western Country গুলোতে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের আজ চলমান শব হয়ে থাকতে হচ্ছে না। বহু আগে থেকেই তারা স্কুলিংটাকে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে আধুনিক থেকে আধুনিকতর করে ফেলেছে।
কিন্তু ঘুমিয়ে নেই আমাদের বাংলা দেশ ও। শিশু মানবিকতার সেবায় এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশের একটি অনন্য সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। বাংলাদেশে বৈশ্বিক সংকট করোনা ঠেকাতে লকডাউন হল। কিন্তু ড্যাফোডিল বসে থাকলো না। মানবতার সেবায় তারা বাংলা দেশের প্রথম আলোর পথযাত্রী হয়ে এগিয়ে এলো অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে।
এই পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে তারা শিশুদের পরীক্ষা নিচ্ছে। রেজাল্ট পাবলিশ করছে।
ভাবতে অবাক লাগে ১৮ কোটি না হোক অন্তত সিকিভাগ শিশুদের মুখে ড্যাফোডিল ফিরিয়ে দিতে পেরেছে হাসি, আর তাদের বাবা মার মনে স্বস্তি।
একদিন হয়তো করোনার মহামারী শেষ হবে। আমাদের আর লিখতে হবে না করোনার ডায়েরি, সুদুর যুক্তরাজ্যে বসে যেমন রোজ লিখে যাচ্ছেন করোনার ডায়েরি বাংলাদেশেরই একজন কৃতি সন্তান। তিনি কধুর তধধিফ,যিনি বি বি সি এর বাংলার মুখ অনুষ্ঠানটির পরিচালক। তিনি হয়তো তাঁর করোনার ডায়েরির পাতায় যুক্ত করবেন ড্যাফোডিলের এ প্রয়াস। হয়তো সেদিন আমরা কেউ থাকবো না। থাকবে আমাদের আজকের এই শিশু সন্তানেরা।
তবুও অহর Ani Frank ev Frederik Kelen এর ডায়েরির মত আগামী প্রজন্ম জানবে, বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংকট কালে বাংলাদেশের একটি স্কুলের কি ভূমিকা ছিল। সে স্কুলটি আর কোনো স্কুল নয়, সেটি আমাদের দেশের গর্ব ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।
সুদীপ্তা ঘোষ : কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক