অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে ভোররাতে সোনারগাঁয়ে দাফন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মাজেদের লাশ। এ নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
রোববার ভোররাতে কড়া পাহাড়ার মধ্য দিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাযায়, ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর মাজেদের লাশ গ্রামের বাড়ি ভোলায় নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ভোলার জনগনের চাপে লাশ ভোলা নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরে ভোররাতে গোপনীয়তার মধ্যে শ্বশুর বাড়ি সোনারগাঁয়ে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুল ইসলাম বলেন, উর্ধতন প্রশাসনের নির্দেশেই মাজেদের লাশ সোনারগাঁয়ে দাফন করা হয়েছে।
সকালে ঘটনা জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শেখ এনামুল হক বিদেশ বলেন, খুনি মাজেদের লাশ দাফন করে আমাদের সোনারগাঁকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। কার অনুমতিতে কীভাবে এখানে লাশ দাফন করা হলো আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাইবো।
সামাজিক সংগঠন ব্রাইট সোনারগাঁ এর সভাপতি অাকতার হাবিব বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের লাশ তার নিজ এলাকা ভোলাতেই দাফন করতে দেয়া হয়নি। অথচ রাতের অাধারে গোপনে সোনারগাঁয়ের মানুষের মতামত ছাড়া এই ঘৃণিত খুনিকে জামাই অাদরে দাফন করা হলো। এটা সত্যি দু:খ জনক। সোনারগাঁবাসীর প্রতি অন্যায় করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধা সন্তান কমান্ড সোনারগাঁ শাখার সভাপতি মেহের নিগার সনিয়া বলেন, জাতীর পিতার খুনি মাজেদের কলংক সোনারগাঁবাসী বইবে কেনো।
সোনারগাঁ উপজেলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসেল মাহমুদ বলেন, পিতার খুনির লাশ সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ কোন ভাবেই বুকে টেনে নিবে না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, কাউকে না জানিয়ে রাতের আধারে এ খুনিকে সোনারগাঁয়ে দাফন করা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এ লাশ উত্তোলন করার জন্য প্রশাসনের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়াা হবে। শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে তার মুঠোফোন একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত মাজেদ ২৩ বছর ধরে পলাতক থাকলেও ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে রিকশায় ঘোরাঘুরির সময় তাকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
পরে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে সিটিটিসি। এরপর মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ৮ এপ্রিল মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আবদুল মাজেদ। প্রাণভিক্ষার আবেদনটি নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এরপর থেকেই শুরু হয় তার ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া। কারাবিধি অনুযায়ী শুক্রবার তার পরিবারের ৫ জন সদস্য শেষ সাক্ষাৎ করেন।