দেশ যখন করোনা আতঙ্কে অস্তির ঠিক সেই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের শেকের পাড়া থেকে উর্মি আক্তার সিনথিয়া নামে ৮ বছরের এক শিশু নিখোঁজ হয়ে যায়। গত ৬ এপ্রিল নিজ বাড়ির উঠানে খেলা করার সময় শিশুটি হারিয়ে যায়। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে শিশুটিকে না পেয়ে ওই দিন রাইেত নবীনগর থানায় সাধারণ ডায়রী করা হয়। নিখোঁজের ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো শিশুটি উদ্ধার হয়নি। শিশুটির উদ্ধারে পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্তান হারানো বাবা- মায়ের আত্ব চিৎকারের আকাশ ভারী হয়ে উঠছে। বাবা মায়ের করুন আকুতি,আমার মেয়েকে এনে দাও।
সরেজমিনে শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়। মেয়ে কে না পাওয়ার শোকে বাবা-মায়ের ও পরিবারের আহাজারি আর আর্তনাদে বাড়ি ও গ্রামের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শিশুটির বাবা আজাহার আহম্মেদ বলেন, গ্রামে আমার কোন শক্র নেই, গ্রামের সামাজিক কাজে সবার পাশে থাকি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে আমি ঢাকায় বসবাস করি। গত দেড় মাস আগে পরিবার নিয়ে বাড়িতে আসি। গত ৬ এপ্রিল দুপুরে বাড়ির উঠানে আমার স্ত্রী উর্মির মাথা থেকে উকুন আনছিলো, এরপর আমার মেয়ে খেলা করছিলো, এই দূশ্য আমি দেখে গোসল করতে চলে যাই। নামাজের সময় হলে আমার মেয়ে আর দেখতে পাইনি। পরে আশপাশে অনেক খোঁজাখুজি করেও তার কোন সন্ধান পাইনি। ওই দিন রাইেত নবীনগর থানায় সাধারণ ডায়রী করেছি। এখন মনে হচ্ছে আমার মেয়েকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে গেছে। কাউকে সন্দেহ হয় কিনা প্রশ্নের জবাবে আজাহার বলেন,আমি কাউকে সন্দেহ করছি না, গ্রামের ইকবাল ডাক্তারের সাথে জমি নিয়ে একটি মামলা মোকদ্দমা ছিল সেটা শেষ হয়ে গেছে। গ্রামের এবং সকল আত্মীয়স্বজন আমার পরিবারকে সহানুভূতি জানাতে আসে কিন্তু আমারই সম্পর্কে চাচাতো ভাই, ইদ্রিস আর অপু মিয়া আমাকে কোন সহানুভূতি দেখাতে আসেনি। আমি সব বিষয় পুলিশকে খুলে বলেছি, কিন্তু আমার মেয়েকে খোঁজার বিষয়ে পুলিশের কোন তৎপরতা দেখছি না। এই বলেই আজাহার আহাম্মেদ মেয়ের জন্য হাউ মাউ করে চিৎকার শুরু করেন।
শিশুটি’র মা সাবিনা বেগম বুকফাঁটা আর্তনাদ করে শুধু একটি বাক্যই উচ্চারণ করছিলেন‘ আমার মেয়েকে এনে দাও’। আমার মেয়ে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
রতরনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমীন বলেন, আজ ৮দিন হয়ে গেলো,এখনো শিশুটির কোন সন্ধান পাওয়া গেলোনা। এ বিষয়ে পুলিশের কোন তৎপরতা আমরা দেখছি না। দ্রুত শিশুটিকে খোঁজে বের করতে হবে ,নতুবা আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। শিক্ষক ওয়াজেদ উল্লাহ্ জসিম বলেন, বিষয়টি অতন্ত পীড়াদায়ক, রতনপুর গ্রামের ইতিহাসে এমন ঘটনা কোনদিন ঘটেনি। দ্রুত শিশুটিকে খুঁজে বের করার দাবী করছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ফারুক বলেন,আজাহারের পরিবার সাথে গ্রামের কোন বিষয় কারোর সাথে কোন দ্বন্দ্ব নেই,আমরা বুঝতে পারছি না, কি কারণে শিশুটিকে নিখোঁজ করা হলো। পুলিশেরও কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পারছি না।
এ ব্যাপারে নবীনগর থানা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোকবুল হোসেন বলেন, শিশুটিকে খোঁজার ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কাজ চলছে।
উল্লেখ্য- আজাহার আহম্মেদ তার মেয়ের সন্ধান কেউ দিতে পারলে তাকে ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।