দিগন্ত জোড়া সবুজের মাঠ, সামনে দুচোখ যেদিকে যাই দেখাযায় সবুজ ধান গাছের পেটে শীষের দোলা। করোনার ভারাক্রান্তে বিশ্বে যখন সবকিছু থমকে গেছে তখন থামেনি বাংলার কৃষক। ধানের শীষের মাঝে দেখে সোনালী স্বপ্ন। তাদের থেমে যাবার পথ নেই। কেননা কৃষি কাজই তাদের প্রধান পেশা। কাজ করলে ফসল ফলালে তাদের দুবেলা পেটে খাবার জুটবে নইতো ক্ষুধার জ্বালাই মরতে হবে। আর কৃষি না বাঁচলে বাঁচবে না তামান দেশের জনগণ। করোনায় প্রণোদনা হিসেবে যখন ত্রাণ আসে তখন জুটো না তাদের ভাগ্যে । তাই রয়েছে তাদের মাঝেও কিছুটা না পাওয়ার বেদনা।
সরকার যখন করোনা হতে বাঁচার জন্য সব কিছু বন্ধ ঘোষনা করে , ঘর হতে বেরুতে নিষেধাক্কা জারি করে তখন কৃষক তাদের ধান, ভূট্টাসহ অন্যান্য ফসল বাঁচানোর জন্য মাঠে রাত জেগে ও রোদে পুড়ে কাজ করে চলেছে।
কোন কোন কৃষক জানেনা করোনা সংক্রমণ কতটা ভায়ানক আর কোন কোন কৃষক তা জানলেও পেটের তাগিদে ছুটে এসেছে মাঠে । কৃষকরা জানান, ফসল ফলানো ও জমিতে কাজ না করলে কোন উপায় নেই পেটের তাগিদে আসতেই হবে।
করোনা হতে বাঁচতে কৃষকদের মাঝে দেখা যায়নি তেমন ভাবে সচেতন থাকতে। তবে তারা জানান সরকার দিনমজুর ও গরীব মানুষকে ১০ কেজি করে চাল দিচ্ছে তখন তারা এগুলো হতে বঞ্চিত হচ্ছে। নেই না তাদের কেউ খোঁজ খবর।
বুজরুজরাজারামপুরের কৃষক নাইমুল হক জানান, করোনা ভাইরাসের সময় বাইরে বের হতে সরকার হতে নিষেধ আছে তবে আমাদের কোন উপায় নেই । মাঠে ফসল না ফলালে আমাদের ফসল হবে না এবং খেতেও পাবে না। বাড়ীতে ১০-১২ সদস্য আছে তারা সংকটের মধ্যে দিন যাপন করছে তারা না খেয়ে মারা যাবে। সরকার সাহায্য দিলেও তারা সেইসব সাহায্য পাচ্ছে না বলে জানান। তিনি অভিযোগ করেন মেয়র, চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররা তাদের নিজেদের লোককে দিচ্ছে।
আরিজপুরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, করোনা ভাইরাস কি তা ভালো ভাবে জানিনা টিভিতে দেখছি মানুষ মারা যাচ্ছে। মাঠে ধানের জমিতে পানি লাগবে কোন উপায় নাই তাই জমিতে আসা। তবে নিজেরা কাজ ছাড়া বাড়ী হতে বের হচ্ছে না বলে জানান। তিনি ত্রাণ সহযোগিতা পাওয়া সম্পর্কে বলেন, শুনছি সরকার ত্রাণ দিচ্ছে তবে আমরা পাচ্ছি না ।দিন আনি দিন খায় এভাবেই দিন চলছে বলে জানান।
কৃষক শাহজাহান জানান, করোনা কি তা একটু জানা আছে তেমন জানা নেই । জমিতে ধান আছে বলে পানি দিতে এসেছি এগুলো তা দেখলে তো আমরা না খেয়ে মরবো। তবে সরকার ত্রাণ দিলেও নিজেরা পাচ্ছি না বলে অভিযোগ করেন।
রামনগরের কৃষক তরিকুলের ছেলে আল-আমিন বলেন, আমরা জমিতে ধান, ভূট্টা আবাদ করেছি তাই দেখতে এসেছি। আমরা কৃষকের ছেলে কৃষক ফসল না ফলালে আমাদের সংসার চলবে না। করোনা হতে বাঁচতে জমিতে খাটার পর যতটুকু পারছি নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছি বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে এমনি ভাবে উপজেলার অনেক দিন মজুর কৃষক ঝুঁকি নিয়ে ফসল ফলাতে জমিতে যাচ্ছে কিন্ত সরকারি ত্রাণ এখনো তারা পাচ্ছে না।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মতিয়র রহমান জানান, সরকার কৃষি উৎপাদন অব্যহত রাখতে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কৃষকরা মাঠে যাচ্ছে আর কৃষি চাষের সার, কীটনাশকের দোকায় সব সময় খোলা রয়েছে । করোনায় বড় কোন সংক্রমন না দেখা দিলে ধানের অর্জিত লক্ষমাত্রা পৌছবে বলে জানান।
গোদাগাড়ী পৌর মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমন হতে বাঁচতে শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে বাড়ী হতে বের হতে নিষেধ করেছে। তিনি দেশের মেহনতী মানুষের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে আমরা তা বাড়ী বাড়ী গিয়ে পৌছে দিচ্ছি তবে এই ত্রাণ আরো বাড়িয়ে দিলে বেশী পরিমাণ জনগণ উপকৃত হতো বলে জানান। তিনি সরকারকে ত্রাণ বাড়ানোর দাবি জানান।
উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিতরণ করছি। কোথাও কোন অনিয়ম হচ্ছে না। আমি চেয়াম্যান থাকা কালিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি সাহায্য পেতে জনগণ যাতে হয়রানি না হয় তা নজর রাখছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ চুরির খবর দেখছি আমি নিজে এসব হতে দেব না বলে জানান। এছাড়াও রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর তহবিল হতে ও আমার ব্যক্তি উদ্যোগে উপজেলার অনেক দুস্থ ও গরীব মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যহত রেখেছে বলে জানান।