শুরু থেকে শেষ অবধি আমার লেখায় থাকে আশার কথা আলোর কথা, আজও ব্যতিক্রম হবে না তাঁর। সেই লেখাটি হোক কোন সাহিত্য অথবা বাস্তবতার আলোকে কলাম। আমি তাঁর ধা রা অব্যহত রেখে যে বিষয়টি বলবো, তা হলো- লোভি-চাউল চোররা যতই স্বাধীনতা পরবর্তী কম্বল চোরের পথ ধরুক না কেন, নতুন প্রজন্ম তা প্রতিহত করবেই। তাতে সরকার-প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিক, আর না নিয়ে অভিনয়ে অংশ নিক। কোন অন্যায় আর বাংলাদেশের মানুষ সহ্য করবে না; তাঁর প্রমাণ চাউল চোর অদ্যপান্ত ভিডিও করে ভাইরালকারী শত শত তরুণ। নতুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধিরা আলোর পথে ভালোর পথে থাকবে-ডাকবেই। আর তাদের পথ ধরে দেশ ও মানুষ গড়ে এগিয়ে চলা লোভ মোহহীনদের জন্য নিবেদন- আসুন এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) কিছু পরামর্শ জেনে নিই। সন্দেহ বা আক্রান্ত হলে শুধু শুধু হুজুগে গা না ভাসিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির যথেষ্ট বিশ্রাম প্রয়োজন, পুষ্টিকর খাবার খান ও প্রচুর পানি আর তরল পান করুন; রোগী ও যিনি সেবা করবেন, দুজনে ঘরে মেডিকেল মাস্ক পরবেন। হাত দিয়ে মাস্ক স্পর্শ করা, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কাজ শেষে মাস্ক ফেলে দেবেন ময়লার ঝুড়িতে; ৩. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে বা এর চারপাশের সংস্পর্শে এলে খাবার তৈরির আগে, খাবার খেতে বসার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান পানি দিয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে নিন; ৪. আক্রান্ত ব্যক্তির বাসনপত্র, তোয়ালে ও বিছানার চাদর সাবান দিয়ে ধুতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তি যা যা হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন, সেগুলো বারবার জীবাণু শোধন করুন এবং অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা খারাপের দিকে গেলে বা শ্বাসকষ্ট হলে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে দ্রুত ফোন করুন বা খবর পাঠান।
একইভাবে বলবো- ভয় পাবেন না। কেণনা, করোনাক্রান্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাকে এখন সাধারণ ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি বিছানায় উঠে বসতে পারছেন। ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলছেন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাকে নিয়ে ব্রিটেনবাসী দুশ্চিন্তায় ছিল। আমিও ছিলাম। কারণ ইতঃপূর্বে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে সমালোচিত হলেও গত কয়েক মাসে কিছু ভালো কাজ করতে পেরেছেন।শুধু ব্রিটেন ও ব্রিটেনবাসীর স্বার্থে নয়; সারা বিশ্বের করোনা নিয়ে হতাশ মানুষদের জন্য তার এ মুহূর্তে সেরে ওঠা খুবই জরুরি। দেশবাসী আশাবাদী তিনি সেরে উঠবেন, আশা করছি ছাত্র-যুব-জনতার রাজনৈতিক মেলবন্ধন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির পক্ষ থেকে। আমি মনে করি- শিগগিরই ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরে যাবেন। আবার টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে দৃঢ়কণ্ঠে বলবেন, ‘স্টে অ্যাট হোম, প্রটেক্ট দ্য এনএইচএস অ্যান্ড সেইভ লাইভস।’ ৫৮ লাখ পাউন্ড (৫৮ কোটি টাকা) ব্যয়ে তিনি ৩ কোটি ব্রিটেনবাসীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দিন কয়েক আগে। সেই চিঠিটি বিলম্বে হলেও গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) আমার লেটার বক্সে ছেড়ে গেছে ডাকপিয়ন।
দেড় পৃষ্ঠার চিঠিতে তিনি যে বিষয়টিতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন তা হচ্ছে ‘স্টে হোম’ বা ঘরে অবস্থান করুন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার সতর্কবার্তা। তবে মানুষের ব্যক্তি, সামাজিক ও কর্মজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টির বিষয়টি নিয়েও নিজের উপলব্ধির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। আর দেশের নাগরিকদের কী কী সুবিধা দেবেন, তা-ও উল্লেখ করে আশ্বস্ত করেছেন। এসবের মধ্যে আছে ছোট, বড় ও মাঝারি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৩০ বিলিয়ন পাউন্ড ঋণ বরাদ্দ। ২০ বিলিয়ন পাউন্ড সমমানের ট্যাক্স মওকুফ ও নগদ সাহায্য প্রদান। তিন মাসের জন্য ভিএটি পরিশোধ বিলম্বিতকরণ। চাকরিজীবীদের বেতনের ৮০ শতাংশ সরকার থেকে দেয়া। অর্থাৎ কোনো নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান লকডাউনের কারণে বেতন দিতে না চাইলে সরকার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন দেবে; যা হবে জনপ্রতি সর্বোচ্চ আড়াই হাজার পাউন্ড (আড়াই লাখ টাকা) পর্যন্ত। যারা চাকরি করেন না, নিজের কাজ নিজে করেন, অর্থাৎ সেলফ এমপ্লয়েড, তাদেরকে আয়ের লভ্যাংশের ওপর তিন মাস পর্যন্ত মাসিক ৮০ শতাংশ করে ভাতা দেয়া হবে। তারাও সর্বোচ্চ আড়াই হাজার পাউন্ড করে পাবেন। যারা কর্মহীন অথবা কম বেতনে চাকরি করেন, তাদেরকে ইউনিভার্সেল ক্রেটিড এবং ট্যাক্স ক্রেডিটের মাধ্যমে সহায়তা দেবেন, যা মাসিক সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। যারা ভাড়া করা বাড়িতে থাকেন তাদের সাহায্যে আর ১ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছেন। আর বাড়ির মালিকদের মধ্যে যারা মাসিক মর্গেজ বা লোনের কিস্তি পরিশোধে অক্ষম, তাদের জন্য তিন মাসের ‘মর্গেজ হলিডে’ ঘোষণা করেছেন। চিঠিটি পড়ে অনেকের এু আমিও আশ্বস্তও হলাম। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে চিঠির একটি বিষয় আমার কাছে খুব ভালো লাগল। আর তা হলো- জনগনের কথা, দেশের কথা সরকারিভাবে বিষদ সিদ্ধান্ত আকারে নিয়ে আসা। সেই সাথে হতাশ হয়েছি, যখন দেখেছি- আমাদের বাংলাদেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের হাজার চেষ্টা গণমানুষের কল্যাণে অব্যহত রাখলেও তা ব্যহত হচ্ছে কিছু চামচা আমলা-অথর্ব মন্ত্রী- এমপি ও জনপ্রতিনিধি নামক খাদকের কারণে।
সেই সাথে হতাশ শিক্ষার্থীদের এই চরম হতাশার সময়ে সেই শিক্ষাকে কেন্দ্র করে তামাশা, টিভির মধ্যে শিক্ষাকে নিয়ে লুটতরাজ দেখে। যেখানে করোনাভাইরাসের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন, ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়া; সেখানে কোন সমাধান নিয়ে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। বলা হচ্ছে- ঈদের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১ এপ্রিল নির্ধারিত থাকলেও শুরু করা যায়নি। ৫ মার্চ শেষ হয় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। ৬০ দিনে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশের রীতি থাকলেও সব বোর্ড তা পারবে না বলে জানা গেছে। অন্যদিকে মার্চ মাসে নির্ধারিত স্কুলগুলোর ক্লাস টেস্ট বাতিল হয়ে গেছে। রোজার ছুটির আগে ১৫ থেকে ২৪ এপ্রিলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। তাও বাতিল করা হয়েছে। জুলাই মাসে মাধ্যমিক স্তরের ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নির্ধারিত আছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তা কীভাবে নেয়া হবে সেটি এখন বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারোনাকাল-এ চরম মানসিক চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা জাতি। মানুষের চিন্তা এখন রুটি-রুজি ও স্বাস্থ্য। এ পরিস্থিতির শিকার শতভাগ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। টেলিভিশনে পাঠদান বা অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের লেকচারের ব্যবস্থা করা হলেও সব শিক্ষার্থী তা গ্রহণ করতে পারছে না। এ পাঠদানের ওপর নির্ভর করে শিক্ষার বিদ্যমান স্বাভাবিক পঞ্জি চালিয়ে নেয়ার মতো অবস্থা নেই। তাই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে নতুন করে শিক্ষাপঞ্জি তৈরির বিকল্প নেই। পাশাপাশি শ্রেণিভিত্তিক পাঠ্যবই কতটুকু অবশিষ্ট সময়ে পড়ানো সম্ভব, সেটা বিবেচনা করতে হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করতে পারে। আর সম্ভাব্য বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের ভাবনাও জানা প্রয়োজন। যদিও পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিতে টেলিভিশনে ক্লাস কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কিন্তু তাতে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সুবিধা পাচ্ছে, আর ৬০ শতাংশ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয়। নতুন করে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন।
বস্তুত সারাবিশ্বে করোনাকাল চলছে। ষড়যন্ত্রের জাল ছড়িয়ে আমাদের প্রিয় মানচিত্র বাংলাদেশ সহ শত শত দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে করোনাজালে আবদ্ধ কারা করেছে? এমন প্রশ্ন যখন মানুষের মুখে মুখে, তখন বাংলাদেশে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য নিবেদিত কোন পদক্ষেপ নেয়া তো দূরের কথা, নেই সামাণ্যতম সুউদ্যেগ, স্থির সিদ্ধান্ত। এমন পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ- এই করোনাকাল-এ আপনার জনগণকে বাঁচান। এভাবে বলে আসছি জানুয়ারি ৩০ তারিখ থেকে। কথা বলেছি, লিখেছি, রাজপথে থেকেছি। অবশেষে সংবাদমাধ্যম বলছে- করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যারা জীবন বাজি রেখে কাজে নিয়োজিত, তাদের পুরস্কৃত করার জন্য ঘোষণা দিয়ে তালিকা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, তাদের তিনি সম্মানী দিবেন, বিশেষ ইন্স্যুরেন্স দিবেন। দায়িত্ব পালনকালে কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা সরকার নেবে। পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা করা হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এই বীমা পাঁচ গুণ বাড়ানো হবে। যারা করোনার সময় কাজ করছেন, জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, এই প্রণোদনা তাদের জন্য। কিন্তু আমজনতার জন্য? নেই কিছুই। তাছাড়া দুর্নীতিগ্রস্থ, চাউল চোরদের ব্যপারে কোন পদক্ষেপ নেয়ার কথা না বললেও একথা বলেছেন- চিকিৎসা না করে যারা পালিয়ে আছেন, তারা এই প্রণোদনা পাবেন না। ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারি করতে পারবেন কিনা, সে চিন্তাও করতে হবে। কেউ যদি এখন কাজে আসতে চান, তবে তিন মাস তার কাজ দেখে তাদের কথা চিন্তা করা হবে। কাউকে শর্ত দিয়ে কাজে আনবেন না তিনি। একই সাথে আলোর কথা হলো, চরম এই করোনাকালে বিনা চিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন- রোগী কেন ফেরত যাবে? রোগী দ্বারে দ্বারে ঘুরে কেন মারা যাবে? রোগী কোথায় কোথায় গেছে, সেসব ডাক্তারের নাম জানতে চাই।' যদিও এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একটি কথারও কোন আশানুরুপ পদক্ষেপ দেখিনি, শুনিওনি। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে যারা আছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে তারা রেশন কার্ড করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেছিলেন, তা এখন কেবলই ফাঁকা বুলি বলে প্রমাণিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তারুণ্যের রাজনীতিক-কলাম লেখক হিসেবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেহেতু আসা যাওয়া আছে, সেহেতু তাদের কথা ভেবে ভয়াবহ মহামারি যেন নির্মমভাবে মানুষের উপোসমৃত্যুর কারণ না হয়ে দাঁড়ায় বা করোনা আর কারো জীবন কেড়ে না নেয়, এসব ভাবনা থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভোটার বা ভোটার নয়; এসব ভাবার সময় এখন নয়; বরং প্রতিটি থানায় বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের যে তালিকা আছে, তা দেখে খাদ্য এবং কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে, প্রয়োজনে নিবিড় পরিচর্যাও জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বেরিয়ে আসতে হবে বরিস-ট্রুডোর মত আন্তরিকতার সাথে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি