বিশ্ব যখন নির্মম মহামারি করোনার কারণে হতাশ। যখন ধ্বংস হচ্ছে লকড্উান দিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠানগুলো; যখন বাসা থেকে বেরিতে না পেরে অভূক্ত মানুষগুলো ছটফট করছে; যখন ত্রাণ নিয়ে চুরি-দুর্নীতি হচ্ছে; তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় একটি রাজনৈতিক দল-এর নেতার নামাজে জানাজায় অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে, সওয়াব কামানোর নামে ভাইরাস ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করছে একটি অন্ধ-উদ্ভট-অথর্ব গোষ্ঠি। এরা হয়তো জানেও না যে, জানাজা নামাজ ফরজে কেফায়া। অন্তত একজন আদায় করলে সকলের আদায় ও সওয়াবপ্রাপ্তি হয়। তবু বাঙালি হুজুগে গড়ে ওঠায় এই কাজটি করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
সারা বিশ্ব স্থবির। বন্ধ সকল কিছু। কিন্তু তারা নেমেছে পথে; তাও লক্ষ লক্ষ। একদিকে এই ঘটনা, অন্যদিকে একই এলাকা অর্থাৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রিক্সাচালক মোবারকের কাটা পা নিয়ে উল্লাস করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সহ আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। যেখানে জানাজা নামাজ- ফরজে কেফায়া আর এই ফরজে কেফায়া একজন আদায় করলেই যেখানে হয়; সেখানে পুলিশ-সেনাবাহিনীর এত কড়াকড়ি এড়িয়ে এত লোক একসাথে জড় হলো কিভাবে? মসজিদ বন্ধ-মাদ্রাসা বন্ধ-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হলো ভাইরাসের ভয়ে; অথচ যাচ্ছে ক্ষয়ে ক্ষয়ে সকল চেষ্টা আবার যেখানে এত কড়াকড়ি বলে লকডাউন ফলানো হচ্ছে সেখানে মারামারি-কাটাকাটি করছে কিভাবে বাংলাদেশের মানুষ?
হ্যাঁ, শুরুটা এভাবেই করলাম, কারণ- দেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মত যোগ্য-অভিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর দেশে শেষে কি না এমন নির্দয়ভাবে ভাইরাস ছড়াবে? তাও তিনি জানবেন না, জানবে না তাঁর নব্য আইজিপি, র্যাব প্রধান, জানবে না সেনা প্রধান! তা কি হয়! হয় না। তাই শুরুটা এভাবে হলেও ভেতরে বলবো ভিন্নকথা। আর তা হলো- স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেখাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দফার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকাকে ভেবেছেন- ৭২ কোটি ৭৫০ লাখ টাকা; ঢাকা ম্যাডিকেল কলেজে বার্ণ ইউনিটের স্থলে ঢাকা কলেঁেজ বার্ণ ইউনিট আছে; ঠিক সেভাবে ভাইরাস আক্রান্ত ৮০%-এর চিকিৎসা প্রয়োজন নেই। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর উপর তিনি একটি চ্যানেলে প্রশ্নের পর আর উত্তরের জন্য সেখানে লাইভে অংশ নেননি। আর সেই প্রশ্নটি হলো- সরকার যদি এতই সতর্ক থাকে, তাহলে লকডাউনের প্রয়োজন কি? প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী নেই কেন?
তিনি উত্তর দিবেন কিভাবে? যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অবশ্যই ভাইরাস আক্রান্তদের পর্যাপ্ত ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী লাগবে; সেখানে তিনি বলেছেন- প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ৮০% রোগীর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক-এর বক্তব্যের মানে দাঁড়ায়- করোনা আক্রান্তের ৮০ পারসেন্টের বেশি কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
যদি তাই হয়, তাহলে লকডাউনের নামে কোটি কোটি মানুষকে খাবারহীন-কর্মহীন করে অর্থনীতি ধ্বংস করছেন কেন? কেন আমাদের দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনছেন? উলটপালট না বলে শুনুন- একজন মানুষ যখন কোনো জীবাণুবাহী সংক্রমনে যান তখন তার দুটি ধাপ থাকে। একটি হলো প্রাথমিক ধাপ আরেকটি দ্বিতীয় ধাপ। প্রাথমিকধাপে শরীরে জীবানু প্রবেশ করার পর জীবানু সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তারা তখন রেপ্লিকেশনে ব্যস্ত থাকে , বাহক শরীরের পুষ্টি নিয়ে। মানে, একজনের শরীরে ১০০০০ জীবানু ঢুকার পর, বাচ্চা দেয় আরকি। যখন সংখ্যা বাড়ে তারপর একটা বড় সংখ্যায় গিয়ে আক্রমণ করে শরীরে। জীবানুর যুদ্ধের কৌশল দুটা, একটা তার অস্ত্র আরেকটি তার সংখ্যা। যখন সংখ্যায় বাড়ে, তখন সংক্রমণ হয় সবচেয়ে বেশি। এসময় ঐ জীবানু নিয়ে ঘোরা ব্যক্তি জীবানু সাপ্লাই করে বেড়ায় তার আশেপাশের মানুষদের বিভিন্ন মানুষদের মধ্যে। এবং এটা সেই ব্যক্তি নিজেও জানবে, আমরাও জানবোনা। এভাবে আমরাও লক্ষণ প্রবেশ করার আগে, আমাদের চারপাশের মানুষদের আক্রান্ত করে ফেলবো।
আরেকটি হলো দ্বিতীয় ধাপ, এ ধাপে আক্রমণ হয় বাহক শরীরের সাথে। তাই তাদের অধিকাংশ সৈনিক বাহক শরীরকে খেতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তাদের বাহিরের মানুষকে সংক্রমণ করার প্রবণতা অনেক কম। আর আমরা যেহেতু জানি এরা রোগী, এক্ষেত্রে সুবিধা হলো আমরা ঐ রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে সেই রোগীর সংস্পর্শে আসার আগে সেভাবে প্রস্তুতি নিবো। আমার প্রস্তুতি সঠিক থাকলে আমি সুরক্ষিত থাকবো সংক্রমণের হাত থেকে । করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সংখ্যা বাড়ছে, ট্রিটমেন্ট (প্রতিকারক/ নাশক) নেই, ভ্যাক্সিন ( প্রতিরোধক) নেই - এসব যেমন ধ্রুব সত্য, তেমনি এটাও সত্য আক্রান্তের বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিভাবে ফিরছে, জানতে ইচ্ছা হওয়ার কথা। অনেকগুলো কারণ আছে তার মধ্যে একটি কারণ, নিজের জন্মগত স্বাস্থ্য প্রতিরক্ষা পদ্ধতি। জন্মগতভাবে এটি প্রত্যেকের মাঝেই আছে। দূর্বল/ শক্তিশালী দুরকমই আছে। বর্তমানে করোনা রোগ থেকে দেহকে রক্ষা করার একমাত্র হাতিয়ার শক্তিশালী জন্মগত প্রতিরক্ষা পদ্ধতি । শক্তিশালী প্রতিরক্ষা পদ্ধতিই একমাত্র বাঁচাতে পারে এই এটা বেড়ে যায় এমন সকল ধরণের পদ্ধতি মেনে চলুন, এ সম্পর্কে জানুন। সহজভাবে বললে, শিশুদের থাকে সবচেয়ে বেশি, দূরারোগ্য কিছু রোগ / গর্ভবতী মা ছাড়া কিশোর- যুবকদের শক্তিশালী থাকে। বয়স্ক এবং অনান্য দীর্ঘকালীন রোগীদের কমে যায় অনেক। বাড়াতে পারেন পুষ্টিকর খাবার খেয়ে, ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করে। সেসব তালিকা জেনে নিন। আর দয়া করে মৃত মানুষের জানাজা আদায় করুন, যারা শিক্ষিত, সার্মথ্য, মানবিক, ধার্মিক সবাই দয়া করে মৃত ব্যক্তির হক আদায় করুন।
সঠিক তথ্যের অভাবে, আমানবিক কাজগুলোর দায় নিতে হবে । এভাবে, সঠিকভাবে সুরক্ষিত থেকে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুস্থ এবং ভালো থাকা সম্ভব বলে গবেষকরা বলছেন। শুধু শুধু ভ্রান্তি না ছড়িয়ে দেশকে বাঁচানোর কথা ভাবতে হবে সবাইকে, বাঁচতে হবে বাংলাদেশের সবাইকে। তা না হলে চীন-আমেরিকা-ভারতের দান-খয়রাতের অপেক্ষাতেই কাটাতে হবে আরো ৫০ বছর। যেভাবে বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই গরিব বলে বিশ্বের কাছে পরিচিতি পেয়েছি আমরা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যখন নতুন প্রজন্ম সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ধর্ম-মানুষ-স্বাধীনতাকে ভালোবেসে। তখন নির্মম করোনা এসেছে বিশ্বব্যাপী ধর্মান্ধ-দুর্নীতিবাজদেরকে শাস্তি দিতে। তা বোঝেনি এই বাঙালির একটি অংশ; সওয়াব কামানোর মধ্য দিয়ে আল্লাহকে পাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে হুরপরী আর বেহেশতের আশায় মত্ত হয়ে জুম্মার নামাজ, পাঞ্জেগানা নামাজ ভুলে গেলেও মেতেছে ফরজে কেফায়ার মত একটি ফরজ আদায়ের জন্য নির্মম মহামারি করোনা ছড়ানোর উৎসবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশেও লক্ষ লক্ষ মানুষ জানাজায় শরিক হন। একদিকে বিশ্বরোড মোড় হয়ে সরাইলের মোড় পর্যন্ত অন্যদিকে আশুগঞ্জে কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে লোকজন। এছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনের ছাদেও মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। জেলার ধর্মান্ধদের সাথে সাথে তথাকথিত আলেম ছাড়াও মাদ্রাসার ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশ নেয়। আর এই কাজে না বুঝিয়ে, না থামিয়ে প্রেরণা যুগিয়ে করোনা ছড়াতে সহযোগিতা করেছেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী, মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জালাল উদ্দিন, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মহসিনুল হাসান প্রমুখ। তারা কিন্তু ভালোভাবেই জানেন যে, জানাজা নামাজে এত লোক সমাগম করা ঠিক হয়নি। তবু বারবার দেশকে খাদের কিনারে নিতে তারা যেভাবে ভূমিকা রাখে, সেভাবে ভূমিকা রেখেছে এবং তাতে সহযোগিতা করেছে বা গা ভাসিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন-র্যাব- সেনাবাহিনী।
শুধু কি এখানেই শেষ! না ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরো বড় একটি সূত্রতায় ছড়াবে ভাইরাস করোনা। কিভাবে? তা দেখতে ইউটিটিউবে ব্রহ্মণবাড়িয়ায় পা কাটা লিখে সার্চ দিলেই দেখবেন নির্মমতা- নানা বয়সের একদল লোককে ধারালো অস্ত্র, বল্লম ও লাঠি হাতে ‘জয় বাংলা’বলে স্লোগান দিতে শোনা যায়৷ তাদের একজন ‘গোড়ালির উপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা রক্তাক্ত একটি পা' হাতে নিয়ে চলছিল৷ পাশে আরেকজনকে ‘মাথা কেটে নেওয়ার' কথা বলতে শোনা যায়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বীরগাঁও ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সাত-আটটি গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন মোবারক নামে এক ব্যক্তির পা কেটে ফেলে।’ এই যখন নির্মম মহামারি করোনাকালে দেশের অবস্থা; তখন বলতেই হচ্ছে- ধর্মান্ধ(যারা জুমা না আদায় করলেও ফরজে কেফায়ার জানাজা নামাজ আদায় করতে গিয়ে ভাইরাস ছড়াতেও ভয় পায় না) আর সন্ত্রাসী(যারা ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পা কেটে নিয়ে যায়, হত্যা করে) টাইপের কিছু মানুষদের জন্য মরতে পারে না নিরাপরাধ লক্ষ কোটি মানুষ; কোটি কোটি মানুষেরর লকডাউন লকডাউন খেলা বন্ধ করুন, দিনমুজুর, দরিদ্র মানুষদেরকে রক্ষা করুন। তা না হলে লকডাউন ভেঙ্গে তারা বেরিয়ে আসবে, ভয় পাবে না, আপনার কোন প্রশাসনিক রক্তচক্ষুকে। কেননা, তাদেরকে খাবার দিতে ব্যর্থ, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। অতএব, ভাবুন দ্রুত, সিদ্ধান্ত নিন দ্রুত...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি